কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ জলরাশিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ।
শনিবার (২ ডিসেম্বর) পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৬তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাঙামাটি সেনা জোনের উদ্যোগে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
নৌকা বাইচে অংশ নিতে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নৌকা নিয়ে প্রতিযোগীরা হাজির হয় কাপ্তাই হ্রদে।
নৌকা বাইচ দেখতে এ সময় হ্রদের তীরে হাজারও নারী-পুরুষ ভিড় করেন। দুটি ইভেন্টে মোট ১২টি দল এই নৌকাবাইচে অংশগ্রহণ করে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই নৌকা নিয়ে হাজির হন নৌকা বাইচ দেখতে। শুধু শহর থেকেই নয়, দূরের পাহাড়ি গ্রাম থেকেও অনেকেই নৌকা বাইচ দেখতে আসেন হ্রদের তীরে।
তাদের হর্ষধ্বনি ও উল্লাসে এই সময় প্রতিযোগীরা বৈঠার তালে তালে এগিয়ে যায়। গ্রাম বাংলার এই ঐতিহ্যবাহী খেলায় মুগ্ধতা প্রকাশ পায় তাদের চোখে-মুখে। প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া প্রশান্ত ত্রিপুরা বলেন, শান্তিচুক্তির বর্ষপূর্তিতে এই নৌকা বাইচ খেলার আয়োজন করাতে আমরা খুব খুশি। আমরা দলগতভাবে অংশগ্রহণ করেছি এবং দ্বিতীয় হয়েছি। এ ধরনের প্রতিযোগিতা প্রতিবছর হওয়া উচিত।
নৌকা বাইচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুপ্রু চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটি রিজিয়নের ভারপ্রাপ্ত রিজিয়ন কমান্ডার লে. কর্নেল এরশাদ হোসেন চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মারুফ আহম্মেদসহ জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও রাঙামাটির বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ।
পুরস্কার বিতরণী সভায় প্রধান অতিথি দীপংকর তালুকদার বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন একটি অশান্ত পরিবেশ ছিল যা শান্তিচুক্তির মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ নেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শান্তিচুক্তির বর্ষপূর্তিতে রাঙামাটি এলাকার এমন একটি সুন্দর আয়োজন সত্যিই প্রশংসনীয়। এজন্য আমি রাঙামাটি রিজিয়ন ও রিজিয়ন কমান্ডার মহোদয়কে ধন্যবাদ জানাই।
তিনি আরও বলেন, সেনাবাহিনী শুধু সমরে নয়, শান্তিতেও সমান সক্রিয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসেনি। এই স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য ন্যূনতম যে প্রয়াস তার পেছনেও সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।
নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় পুরুষদের বড় নৌকা ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয় রতন ত্রিপুরা ও তার দল, প্রথম রানার্সআপ হয় প্রশান্ত ত্রিপুরা ও তার দল এবং দ্বিতীয় রানার্সআপ হয় চিরমনি ত্রিপুরা ও তার দল। প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় ক্যাটাগরি মহিলাদের বড় নৌকায় চ্যাম্পিয়ন হন পূণ্যরাণী ত্রিপুরা ও তার দল, প্রথম রানার্সআপ হন আলো ত্রিপুরা ও তার দল এবং দ্বিতীয় রানার্সআপ হন সুবর্ণা ত্রিপুরা ও তার দল।
পুরস্কার হিসেবে দুই ক্যাটাগরির চ্যাম্পিয়ন দলকে ৫০,০০০ টাকা, ১ম রানার্সআপ দলকে ৩৫,০০০ টাকা, ২য় রানার্সআপ দলকে ২৫,০০০ টাকা এবং সান্ত্বনা পুরস্কার হিসেবে ১০,০০০ টাকার চেক তুলে দেন অতিথিরা।