এই সন্তান নিয়ে গ্রাম ছাড়ার কথা বলছে লোকজন, আমি এই সন্তান নিয়ে কোথায় যাব, কার কাছে যাব, কে নিবে আমার সন্তানের দায়িত্ব , সন্তানের পিতাই বা হবে কে? ধর্ষণের শিকার হয়ে সন্তান জন্মের পর কিশোরীর প্রশ্ন এই সমাজ আর রাষ্ট্রের কাছে!
প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে ঘরের বাইরে বের হলে দিনমজুর পরিবারের ১৬ বছরের এক কিশোরীকে জোরপূর্বক বাঁশবাগানে তুলে নিয়ে রাতভর পালাক্রমে ধর্ষণ করে এলাকার তিন ব্যক্তি। ধর্ষণের পর কাউকে কিছু জানালে কিশোরীকে মেরে লাশ গুম করার হুমকি দেয় ধর্ষকরা। পরে মৃত্যুর ভয়ে ধর্ষণের বিষয়টি পরিবারের কাউকে না জানালেও একপর্যায়ে ওই কিশোরী অন্তঃসত্তা হয়ে পড়ে। যুবতী কিশোরী অন্তঃসত্তা ঘটনার জানাজি হলে, এই বিষয় নিয়ে কোন বাড়াবাড়ি না করতে তিন ধর্ষক ও তাদের পরিবারের লোকজন কর্তৃক কিশোরীর পরিবারের লোকজনকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি ও ভয়ভীতি দেখায়।
পরে কিশোরী তার পরিবার ও আগত সন্তানের নিরাপত্তার আর নিজের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার ন্যায় বিচার চেয়ে ওই কিশোরী বাদি হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল সুনামগঞ্জ আদালতে একটি মামলা করে। এ দিকে মামলা করার তিনমাস পেরিয়ে গেলেও তিন ধর্ষক এখনো রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাহিরে। ঘুরে বেড়াচ্ছে বীরদর্পে, মামলা তুলে নিতে ভোক্তভোগী কিশোরী ও তার পরিবারকে দেয়া হচ্ছে নানাভাবে হুমকি। তিন লম্পট প্রভাবশারী হওয়ায় ভোক্তভোগী দরিদ্র ওই পরিবারটি এখন তাদের বিচারতো দূরের কথা ভোগছেন নিরাপত্তা হীনতায়।
একপর্যায়ে ওই কিশোরী জন্ম দেয় একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান। সন্তান জন্মের পর আরও বিপাকে পড়ে কিশোরী ও তার পরিবার। এদিকে সন্তান নিয়ে কিশোরী ও তার পরিবারকে গ্রাম ছাড়ার চাপ নিচ্ছে সমাজের লোকজন। অন্যদিকে মামলা তুলে নিতে না হয়! সদ্যোজাত সন্তান নিয়ে কিশোরীকে গ্রাম ছেড়ে যেতে অব্যাহত হুমকি দিচ্ছে তিন ধর্ষক তাদের পরিবার। যার ফলে বর্তমানে কিশোরী ও তার পরিবারের লোকজন এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। লোকলজ্জার ভয়েও তাদের দিনকাটছে ঘরের বিতর।
ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে ২০২২ সালের ১৫ ডিসেম্বর উপজেলার বড়দল উত্তর ইউনিয়নের গুঠিলা গ্রামে। ধর্ষণের শিকার কিশোরী সন্তান জন্ম দেয় (২০ অক্টোবরে ২০২৩ ইং)
ভুক্তভোগী কিশোরী সংবাদ’কে জানানন, আমরা গরীব বলে এর বিচার পাবনা, বিচার চেয়ে আমার বাবা ও পরিবারের লোকজন মাতাব্বরদের দ্বারেদ্বারে ঘুরে বিচার না পেয়ে নিরুপায় হয়ে আদালতে মামলা করে। মামলা করেও আমার নিরাপত্তা নাই, মামলা করছি তিন মাস হয়। এখনো আসামইদের পুলিশ ধরছেনা, এই সন্তান নিয়ে কোথায় যাব, সন্তানের পিতাই বা হবে কে?
ঘটনাটি অভিযুক্ত তিন ধর্ষক একই ইউনিয়নের চন্দ্রপুর গ্রামের মৃত মুক্তার হোসেনের ছেলে সোহাগ মিয়া (২৭), মৃত মতিউর রহমানের ছেলে মাফিজ মিয়া (৫৫) ও মানিগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুল কাদিরের ছেলে আব্দুল কুদ্দুছ (৫৪)।
মামলা সূত্রে জানাযায় , রাস্তার পাশে বাড়ি থাকায় তিন লম্পট আসা-যাওয়ার পথে আমাকে কুপ্রস্তাব দিত এবং নানাভাবে উত্তক্ত করত ওই তিন ধর্ষক । একপর্যায়ে ২০২২ সালের ১৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিয়ে ঘরের সামনে থাকা বাথরুমে বের হলে পূর্ব থেকে ওৎপেতে থাকা ওই তিন লম্পট হাত-পা ও মুখ চেপে ধরে জোরপূর্বক বাড়ির পূর্বপাশে থাকা বাঁশবাগানে তুলে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে কিশোরীকে। পরে এর বিচার চেয়ে গ্রামের মাতব্বরদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে অভিযুক্ত তিন লম্পঠ প্রভাবশালী হওয়ায় কোনো বিচার পায়নি ভুক্তভোগী ওই দরিদ্র পরিবারটি। পরে থানা পুলিশের কাছে গেলে থানা পুলিশ তাদেরকে কোর্টে মামলা করার পরামর্শ দেয়। পরে ৫/৯/২০২৩ইং ভুক্তভোগী কিশোরী বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল সুনামগঞ্জ আদালতে একটি মামলা করে। যা নারী ও শিশু পিটিশন মোকাদ্দমা নং ৩৫২/২৩ইং।
ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা বলেন, মেয়েটিকে নিয়ে বড় বিপদে পড়েছি। এক তো মেয়েটির সন্তান, অন্যদিকে সমাজের লোকজন গ্রাম ছাড়তে বলছে আমাদের। ওই তিন লম্পট মামলা তুলে নিতে হুমকি-ধমকি ও চাপ দিচ্ছে। আমি ও আমার পরিবারের লোকজন এখন নিরাপত্তাহীনতা ভোগছি ।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নোয়াজ আলী বলেন, ওই তিন জনেই মেয়েটাকে ধর্ষণ করেছে এটা সত্য। মেয়েটা গরীব বলে মামলা করার ৩ মাসের মাথায়ও আসামিরা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। আমরা এর সুবিচার চাই।
তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, ঘটনাটি আমি যোগদানের আগের। মামলার নথি দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কামাল হোসেন