দেশে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে প্রতারণা। এমন কোনো খাত নেই যেখানে বিস্তার করেনি প্রতারণার জাল। বেশিরভাগ প্রতারণায় টার্গেট করা হচ্ছে বেকার যুবকদের। তাদের চাকরি ও প্রবাসে পাঠানোর প্রলোভন দিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হয় কোটি কোটি টাকা।
এসব প্রতারণার মধ্যে কম খরচে বিদেশ পাঠানো, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উচ্চ বেতনে চাকরি, বিকাশ কিংবা মোবাইল ফোনে বড় পুরস্কার জেতার অফার, জাদুর বাক্সে টাকাকে ডলারে রূপান্তর, কম দামে ভালো জিনিস বিক্রির নামে পুরোনো কাপড় গছিয়ে দেওয়া, অনলাইনে বিনিয়োগ করে দ্রুত অধিক মুনাফা অর্জন ও ভাগ্য পরিবর্তন ইত্যাদি বিচিত্র ও অভিনব কৌশলে চলছে প্রতারণা ।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় অনুসন্ধানে এমনি এক চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলে। অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায়, মানবিক দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ( এইচ. এস.ডি.টি.সি ) নামক একটি ভূইফোঁড় ভুয়া ,অনিবন্ধিত ( লাইসেন্স নিবন্ধন দেখাতে ব্যার্থ ) সংগঠন বেকার যুবক ও জনসাধারণ কে প্রলোভন দিয়ে বিদেশ পাঠানোর নামে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা ।
প্রতারক রজব ও তার স্ত্রী মিলে চালাচ্ছেন এই ভূয়া প্রতিষ্ঠান টি । পরিচালক হিসেবে আছেন গোদাগাড়ী উপজেলার মাদারপুর গ্রামের মৃত তাহাসান আলীর ছেলে মোঃ রজব আলী আর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে আছেন তার স্ত্রী সারাংপুর গ্রামের মোঃ কবির আলীর মেয়ে মোসাঃ কামরুন নাহার কাকলী । সাথে ম্যানেজার ও প্রশিক্ষক ও নিয়োগ দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তার প্রতারণার অভিনব কৌশল ।
নানা কায়দায় প্রতারণার ফাঁদ পাতে চক্রের সদস্যরা। সাধারণত সহজ-সরল মানুষ এবং অশিক্ষিত বেকার যুবকই তাদের টার্গেট। সুযোগ বুঝেই নানা ছলচাতুরী ও প্রলোভনে তারা প্রতারণা করছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান পাঠানোর নামে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে আছে এই প্রতারক চক্র । তবে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ না থাকায় ব্যবস্থা নিতে পারছেন না প্রশাসন ।
প্রতারণার স্বীকার, ভুক্তভোগীরা জানান, তাদের কারোও নিকট ৩ লাখ ৫০ হাজার, কারোও নিকট ৪ লাখ এভাবে সর্বোচ্চ ৭ লাখ করে টাকা নিয়েছেন এই প্রতারক চক্র । আর ভুক্তভোগীসহ তার পরিবারের বিশ্বাস অর্জনে একশত টাকা মূল্যের তিনটি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে ডিড ও এভিডেভিডের মাধ্যমে এসব অর্থের লেনদেন করা হয় ।
এছাড়া ও ভুক্তভোগীদের প্রতারক চক্রের মূলহোতা রজব নিজেকে রাজশাহী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ( টিটিসি ) র একজন প্রশিক্ষক বলে পরিচয় দেন এবং তার স্ত্রী কামরুন নাহার কাকলী ও জাপানি ভাষা প্রশিক্ষক বলে দাবি করেন ।
গোদাগাড়ী রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রায় ২০-২৫ জন এই প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে এখন দিশেহারা। ভুক্তভোগীরা আরও জানান , তাদের পাসপোর্ট গুলোও রয়েছে প্রতারক চক্র হাতে, আর এই পাসপোর্ট ও টাকা চাইতে গেলে রীতিমতো দেওয়া হচ্ছে হুমকি ।
মানবিক দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ( এইচ. এস.ডি.টি.সি ) গিয়ে দেখা মিলে ম্যানেজার জাকিয়া ও কয়েকজন প্রশিক্ষকের সাথে । প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন সম্পর্কে জানতে চাই জাকিয়া বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না । ১৬ মাস ধরে তারা কার্যক্রম চালাচ্ছে, তবে কোন প্রকল্প তারা পায়নি । কিন্তু তারা ১৬ টি রাষ্ট্রে লোক পাঠান, কিভাবে পাঠান ? তার কোন উত্তর দিতে পারেনি তিনি । তবে ম্যানেজারসহ অন্যান্য প্রশিক্ষকরা বলেন যে , রজব নাকি টিটিসির মেরিন ইন্জিনিয়ার ও প্রশিক্ষক এবং কাকলী টিটিসির জাপানি ভাষা প্রশিক্ষক।
এ বিষয়ে প্রতারক চক্রের মূলহোতা মানবিক দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ( এইচ. এস.ডি.টি.সি ) ‘র পরিচালক প্রতারক ইঞ্জিনিয়ার রজব ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রতারক কামরুন নাহার কাকলী উভয়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে, তারা তথ্য দিতে অপারগতা জানান । তারা রাজশাহী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ( টিটিসি ) প্রশিক্ষক কিনা ? সে বিষয়ে কাকলী কোন তথ্য দিতে নারাজ । তবে রজব আলী বলেন তিনি রাজশাহী টিটিসিতে চাকরি করেন, তবে ডেপুটেশন কুষ্টিয়া টিটিসিতে আছেন ।
ঘটনার সত্যতা জানতে মুঠোফোনে কথা হয় রাজশাহী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ( টিটিসি)’র ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আকতারা শাহীন এবং কুষ্টিয়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ( টিটিসি )’র অধ্যক্ষ মোঃ মিজানুর রহমান এর সাথে তারা জানান আমাদের প্রতিষ্ঠানে এই নামে কোন ইঞ্জিনিয়ার প্রশিক্ষক, প্রশিক্ষিকা বা কোন কর্মকর্তা -কর্মচারী ও নেই ।
এ বিষয়ে গোদাগাড়ী সার্কেল সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, মোঃ সোহেল রানা ‘র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন , প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স এর বিষয়টি আমাদের দায়িত্ব না তবে প্রতারণার বিষয়ে কেউ যদি অভিযোগ করেন তাহলে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।