রুপালি জগতের হাতছানি, নায়িকা হিসেবে অভিনয়, তারকা খ্যাতি এবং সেই খ্যাতির স্বর্গ থেকে ভূমির ধূলায় লুটিয়ে পড়া, হারিয়ে যাওয়া এরপর ন্যূনতম মানুষের মতো বেঁচে থাকার লড়াই- এমন চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে আসা এক সময়কার নায়িকা সাহিনা আকতার বনশ্রী। ১৯৯৬ সালে ‘সোহরাব রুস্তম’ সিনেমার মধ্যদিয়ে বড় পর্দায় পা রাখেন তিনি। এতে তার নায়ক ছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন। এরপর ‘নেশা’, ‘মহাভূমিকম্প’, ‘প্রেম বিসর্জন’, ‘ভাগ্যের পরিহাস’সহ বেশ কিছু সিনেমায় অভিনয় করে বেশ প্রশংসিত হন তিনি। অভিনয় ক্যারিয়ারে এই নায়িকা কাজ করেছেন ইলিয়াস কাঞ্চন, মান্না, রুবেল, আমিন খান, অমিত হাসানসহ অনেকের সঙ্গেই।
কয়েক বছর আগে হঠাৎ খবর আসে, ভালো নেই বনশ্রী। সংসার ভেঙে গেছে অনেক আগেই আর একটি মেয়ে; তাকেও হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। বেঁচে থাকার জন্য বাসে বাসে বই ও ফুল বিক্রি করেন তিনি। সেসময় প্রায়ই তার দেখা মিলত শাহবাগে। থাকতেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শেখের টেকের একটি বস্তিতে। একমাত্র ছেলেকে নিয়েই ছিল তার বসবাস। সেই বাসার ভাড়াও ঠিকমত পরিশোধ করতে পারতেন না জনপ্রিয় এই চিত্রনায়িকা।
অবশেষে বাধ্য হয়েই রাজধানী ছাড়েন বনশ্রী। চলে যান গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরে। কিন্তু গ্রামেও যেন মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। অবশেষে বর্তমানে তার ঠিকানা হয়েছে শিবচর উপজেলার মাদবরের চর ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্পে। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে সেখানেই বসবাস করছেন তিনি।
বনশ্রীর দদুর্দিনে পাশে দাঁড়ায় শেখ হাসিনার সরকার। বছর কয়েক আগে প্রধানমন্ত্রী তার হাতে তুলে দেন ২০ লাখ টাকা। এতেও অভাব ঘোচেনি এই নায়িকার। বনশ্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে ২০ লাখ টাকা দিয়েছেন। সেই টাকা আমি ব্যাংকে রেখেছি। আর সেই টাকার লাভের অংশ দিয়েই আমি চলি। আগে ২১ হাজার ৪শ টাকা লাভ পেতাম। এই টাকা দিয়ে ঢাকায় একটি ফ্ল্যাটে সাবলেট থাকতাম। পরে আনুমানিক ৪ বছর হবে সেই লাভের টাকা থেকে ৪ হাজার ২০ টাকা ব্যাংক কেটে নিয়ে যায়। বর্তমানে প্রতি মাসে ১৭ হাজার ২শ টাকার মতো ওখান থেকে লাভ পাই। সেই টাকা দিয়ে নিজের ওষুধ, সংসার ও ছেলের লেখাপড়াটা কোনমতে চলছে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে আছি। এটি আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। আমি এখন আর নায়িকা নেই। আমার মেয়েটি হারিয়ে গেছে। সে কোথায় আছে, জানি না। শেখ হাসিনার দয়ায় একমাত্র ছেলেকে নিয়ে এই বেদে পল্লীতে বেঁচে আছি।