বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি বলেছেন, দু:খী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে সমতার ভিত্তিতে অর্থনৈতিক মুক্তি আনয়নে বঙ্গবন্ধু বদ্ধপরিকর ছিলেন। শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের সংবিধান বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক চেতনারই প্রতিফলন। তিনি বলেন, ‘সংবিধান’ বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনেরই দর্পণ।
তিনি রোববার রাজধানীস্থ সুপ্রীম কোর্ট বার মিলনায়তনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত ৫২তম সংবিধান দিবস উপলক্ষে ‘১৯৭২ এর সংবিধান: বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনের দর্পন’- শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করে এসব কথা বলেন।
এ সময় স্পিকারকে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ও সুপ্রীম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র সভাপতি লেখক, সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক আজাহার উল্লাহ ভুইয়ার সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে এটর্নী জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রীম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো: মোমতাজ উদ্দিন ফকির, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান মো: মোখলেসুর রহমান বাদল, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, পোল্যান্ডের নেভার অ্যাগেইন সংগঠনের সভাপতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. রাফাল প্যানকোভোস্কি এবং সদস্য নাটালিয়া সিনায়েভা প্যানকোভস্কা বক্তব্য প্রদান করেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি বলেন, বাঙালির জন্য, বাংলার আপামর মানুষের জন্য যা কল্যাণকর তা বাস্তবায়ন করতে বঙ্গবন্ধু আজন্ম লড়াই সংগ্রাম করেছেন। শোষণ ও বৈষম্যহীন সোনার বাংলা গড়াই ছিল বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির মূল দর্শন। তিনি বলেন, বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠাকে লালন করেই টুঙ্গিপাড়ার খোকা বঙ্গবন্ধুতে পরিণত হয়েছিলেন।
স্পিকার বলেন, বঙ্গবন্ধু মনে করতেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে শোষণমূক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই, তাঁর লড়াই সংগ্রাম স্বার্থক হবে।
‘স্বাধীনতা আমার ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না খায়। এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়’- বঙ্গবন্ধুর এই উদ্ধৃতি উল্লেখ করে স্পীকার বলেন, বঙ্গবন্ধু মেহনতি মানুষের জন্য, ধনী- দরিদ্রের বৈষম্য নিরসনের জন্য স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিনবছরে বঙ্গবন্ধু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শন ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দারিদ্র্যের হার হ্রাস করেছেন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ঘরহীনদের ৯ লক্ষ ঘর প্রদান করেছেন, গর্ভবতী মা -ল্যাকটেটিং মায়েদের জন্য ভাতা, বিধবা-বয়স্ক-স্বামী পরিত্যাক্ত্যা ভাতা দিচ্ছেন, ১ কোটি শিক্ষার্থীকে শিক্ষা সহায়ক ভাতা দিচ্ছেন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির মধ্যে ১ কোটি ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে দরিদ্রদের স্বল্পমূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহ করছেন।
তিনি বলেন, সংবিধানের চেতনা সমুন্নত রাখতে প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিককে নিবেদিত হতে হবে। নতুন প্রজন্মকে একটি স্মার্ট ও মানবিক বাংলাদেশ গঠনে সংবিধানের আদর্শ ও দর্শন ধারণ করতে হবে। এসময় স্পীকার সংবিধান দিবস উপলক্ষে আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান।
এ অনুষ্ঠানে সুপ্রীম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র সদস্যবৃন্দ, আইনজীবীগণসহ গণমাধ্যমকর্মীগণ, আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।