ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করার জন্য সরকারের দেওয়া ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে। এতে আনন্দের জোয়ার বইছে নোয়াখালী হাতিয়ার জেলে পল্লীগুলোতে। মধ্যরাত থেকে মাছ ধরতে হাতিয়ার প্রায় ৪২টি ছোট-বড় ঘাট থেকে মাছ শিকারে নামবে লক্ষাধিক জেলে। রাতে নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ার পরই নদীতে মাছ শিকারে নেমে পড়বেন এসব জেলেরা।
প্রতি বছরের ন্যায় এই বছর ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ছিল এই নিষেধাজ্ঞা। এসময় সমুদ্রে নদীতে সকল ধরনের মাছ শিকার, আহোরন, মজুদ ও ক্রয় বিক্রয় বন্ধ ছিল। এতে ২২ দিন বেকার সময় পার করেছে জেলেরা। মৌসুমের শুরু থেকে নদীতে তেমন একটা মাছ পাওয়া যায়নি। আর্থিক অভাব অনটনের মধ্যে কেটেছে তাদের দিন।
হাতিয়া বাংলা বাজার ঘাটের জেলে নিত্যহরি জানান, একটি ছোট মাছধরা নৌকার মাঝি সে। তার নৌকায় তিনি সহ ১০ জন মাছধরার কাজ করেন। এই বছর মৌসুমের প্রথম থেকে আশানুরুপ মাছ পায়নি। নিষেধাজ্ঞার আগে করা হিসাবে দেখা গেছে প্রায় লাখ টাকার মত দেনা আছেন। গত কয়েকদিন জাল ও নৌকা মেরামতের কাজ শেষ করেছেন। রাতে সহকর্মীদের নিয়ে নদীতে মাছ শিকারে যাবেন। এজন্য সবাই সব শেষ প্রস্তুতি নিতে ঘাটে এসে নৌকায় অবস্থান করছেন। সবার মধ্যে এক ধরনের আনন্দ উল্লাস কাজ করছে।
নিত্যহরি আরও জানান, নিষেধাজ্ঞার পর নদীতে মাছ পাওয়া যাবে। কারণ কিছুদিন আগে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ আঘাত করেছিল বাংলাদেশেল উপূক’লীয় এলাকায়। ঘূর্ণিঝড়ের পর নদীতে মাছ পাওয়া যায়। এটি তাদের দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা।
সরেজমিনে দেখা যায়, নিত্যহরির মত বাংলাবাজার ঘাটের প্রায় শতাধিক জেলে নৌকার মাঝিরা তাদের জাল নৌকায় তুলে নিচ্ছেন। নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেরা ছিড়ে যাওয়া এসব জাল তীরে নামিয়ে মেরামত করেছেন। অনেকে জ্বালানি তেল ও খাওয়ার নিয়ে নিচ্ছেন। সবার মধ্যে একধরনের কর্ম তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে।
হাতিয়া মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারন সম্পাদক ইসমাইল জানান, হাতিয়াতে ৪১টি ঘাটে চোট বড় প্রায় ১০ হাজার জেলে নৌকা রয়েছে। এসব নৌকায় ১০ জন করে হলেও একলাখ লোক এই পেশার সাথে জড়িত। নিষেধাজ্ঞার এ সময় হাতিয়ার জেলেরা তীরে অবস্থান করেছে। কিন্তু পাশের বিভিন্ন উপজেলার জেলেরা হাতিয়ার অংশে এসে মাছ শিকারের চেষ্টা করেছে। মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে নিষেধাজ্ঞা। বিভিন্ন ঘাটে জেলেরা নদীতে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন।
তিনি আরও জানান, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় হাতিয়াতে ১২ হাজার জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। বড় একটি অংশ সরকারি এই সুবিধা থেকে বাদ পড়েছে। ২৫ কেজি চাল হয়ত একটি জেলে পরিবারের জন্য কিছুই হবে না। কিন্তু এই বছর নদীতে মাছ না পেয়ে জেলেদের মধ্যে এই চাল পাওয়ার জন্য হাহাকার ছিল অনেক বেশি।
হাতিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সাজু চৌধুরী জানান, রাত ১২টার পর জেলেরা নদীতে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। এই বছর হাতিয়ার জেলেরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে যাওয়ার চেষ্টা করেননি। কিন্তু পাশের বিভিন্ন উপজেলার জেলেরা হাতিয়ার অংশে এসে মাছ ধরার চেষ্টা করেছে।
এদের মধ্যে অনেককে আটক করে জেল জরিমানা করা হয়েছে। গত ২২ দিনে হাতিয়ায় ৭২ জন জেলেকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৪০ জনকে কারাদণ্ড ও ৩২ জনকে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।