রাজধানীর চিহ্নিত মাদক কারবারী মিসেস শাহিনুর আহমেদ ওরফে মডেল শাহিনুর এবার অভিনব উপায়ে মাদক কারবার চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। পল্লবী থানার বিপরীতে অবস্থিত একটি টিনশেড ঘরে চোখ ধাঁধানো ডেকোরেশন করে তারমধ্যে মানবাধিকার সংগঠন ও পত্রিকা অফিস খুলে বসেছে। আর এই অফিস থেকে সে পুলিশের চোখে ধূলো দিয়ে মাদক নেটওয়ার্ক পুরোদমে পরিচালনা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে দেখা যায় “ আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশন” এর অফিস খুলে এবং তাদের সহযোগী সংগঠন হিসেবে দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার, দৈনিক দেশ প্রান্তর ( অনিবন্ধিত অনলাইন পোর্টাল) ও ইংরেজি পত্রিকা বাংলাদেশ ডায়েরি’র নাম ব্যবহার করে সে আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছে।
ওই অফিসে যেয়ে দেখা যায়, মানবাধিকার সংগঠন ও পত্রিকার কোনো সাইনবোর্ড বাইরে প্রদর্শন করা হয়নি। যা আছে সব রুমের ভিতরে । ওই রুমে প্রবেশ করতেই দেখা যায় অনিবন্ধিত অনলাইন পোর্টালের প্রকাশক এস.এম. জীবন রুমের বামপাশে তার টেবিলে ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছেন, অনুরূপ এইক কায়দায় ডানদিকের টেবিলে ল্যাপটপ সামনে নিয়ে বসে আছেন ইয়াবা কন্যা ও কথিত সাংবাদিক শাহিনূর আহাম্মেদ (৪৩)।
রাজধানীর বহুল আলোচিত এই মাদক কারবারী ইয়াবা কন্যা শাহিনূর ইতোপূর্বে বেশ কয়েকবার পুলিশী অভিযানে গ্রেফতার হন বলে জানা যায় এবং তার নামে মাদক মামলায় চার্জশিটও দেয় পুলিশ। কারামুক্তির পর ফিরে এসে সে আবারো মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পরে বলে অভিযোগ রয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে বিচরণ শেষে গত একবছর যাবৎ এই ইয়াবা কন্যা রাজধানীর পল্লবীতে ঘাঁটি করে মাদক বাণিজ্য চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে পল্লবীর কিছু চিহ্নিত মাদক কারবারীদের সাথে তাকে আড়ালে-আবডালে গোপন মিটিং করতে দেখা গেছে।
অধিকতর তদন্তে আরও জানা যায়, এই কথিত মানবাধিকার কর্মী ও কথিত রিপোর্টার মডেল শাহিনুর ওরফে ইয়াবা কন্যা শাহিনুর ২০২১ সালের ৬ই নভেম্বর সকাল ৫টার দিকে ভাটারা থানাধীন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ব্লক-জি’র ১৩ নং-রোডের ৯৪৩ নাম্বার (সাত তলা) বাড়ির তৃতীয় তলার এক রুম বিশিষ্ট ফ্লাট থেকে ভাটারা থানার ইন্সপেক্টর (নি:) মোহা: সাজেদুর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি চৌকস পুলিশ টিমের হাতে গ্রেফতার হন। এ অভিযানে আরও উপস্থিত ছিলেন এসআই আসহাব উদ্দিন, এএসআই মো: আবু হান্নান, সিপাই মো: আজাদ উদ্দিন, মহিলা সিপাই মমতাজ আক্তার ও সুফিয়া আক্তার।
ওই সময় তৃতীয় শ্রেণীর মডেল ও ইয়াবা কন্যা শাহিনূরের হাতে থাকা একটি সাদা রংয়ের কাপড়ের ব্যাগের ভিতর থেকে মহিলা পুলিশের সহায়তায় তল্লাশী করে শাহিনুরের হেফাজতে থাকা ২০০০ ( দুই হাজার ) পিছ ইয়াবা ( তৎকালীন বাজার মূল্য ৬ লাখ টাকা ) ভাটারা থানা পুলিশ জব্দ করে। এই ইয়াবা উদ্ধার ও ইয়াবা কন্যা শাহিনুর গ্রেফতারের ঘটনায় ভাটারা থানা পুলিশ ৩৬ (১) এর ১০(ক) মাদকদ্রব্য আইন ২০১৮ ধারা মোতাবেক মাদক মামলা দায়ের করে। পরে এই মামলায় চার্জশিট দেয় পুলিশ।
অভিযোগ রয়েছে ইয়াবা সম্রাজ্ঞী নিকিতার এক সময়ের প্রধান সহযোগী ছিলেন এই ইয়াবা কন্যা শাহিনূর আহম্মেদ।
এ বিষয়ে পল্লবী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান মিয়া বলেন, ডিএমপি কমিশনার স্যারের নির্দেশে মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজসহ সকল অসামাজিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমাদের চলমান অভিযান আরও বেগবান করা হয়েছে। অপরাধী যত শক্তিশালিই হোক না কেনো কোনোরকম ছাড় দেওয়া হবেনা।
উল্লেখিত মানবাধিকার সংগঠন প্রসঙ্গে সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক এই প্রতিবেদককে বলেন, পল্লবীতে “ আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশন” এর কোনো অফিস খোলার জন্য কাউকে লিখিত অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তাছাড়া এমন কোনো বিষয় অবগত নয়, মাদক ব্যবসায়ী হয়ে থাকলে এবং তার প্রমাণ থেকে থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।