ফিলিস্তিনি গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান থেকে অনবরত বোমা হামলার প্রেক্ষাপটে দ্রুত বদলে যেতে শুরু করেছে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি। ফিলিস্তিন-ইসরাইলের যুদ্ধের দামামা ইরান-যুক্তরাষ্ট্রসহ পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়বে বলে মনে করছেন অনেকে।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ এখন পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়ারআশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে সেখানে ‘টার্মিনাল হাই অ্যালটিটিউড এরিয়া ডিফেন্স’ বা থার্ড প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে পেন্টাগন। এ ছাড়াও পারস্য উপসাগর অঞ্চলে অতিরিক্ত ‘প্যাট্রিয়ট’ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও মোতায়েন করা হবে বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর জানিয়েছে।
গণমাধ্যমের বিশ্লেষণে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক তৎপরতা বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন দৃঢ় করা ও মার্কিন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।সাম্প্রতিক উত্তেজনার কথা উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেন, সম্ভাব্য উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আমাদের নাগরিক ও সেনাদের ওপর হামলার বিষয়গুলো বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ এরই মধ্যে মার্কিন বেশ কিছু ঘাঁটিতে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
হামাস-ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলার পর থেকে ইসরায়েলের পক্ষে সামরিক তৎপরতা বাড়িয়ে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার (২৩ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তাদের ওপর হামলা হওয়া মাত্রই বদলা নেওয়া শুরু হবে।
অন্যদিকে ইরান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ফিলিস্তিনি সাধারণ মানুষের উপর হামলা বন্ধ না হলে তারা খোদ ইসরায়েলের হাইফা শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে দ্বিধা করবে না।ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সরাসরি লড়াইয়ের হুঁশিয়ারি দিয়ে ইরানের আইআরজিসির উপ-প্রধান আলী ফাদাভি বলেছেন, ইরান এখন ইসরায়েলের হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে দ্বিধা করবে না। ইরান বিনা দ্বিধায় হাইফায় সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করবে।
ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ডের ডেপুটি কমান্ডার ফাদাভি আবারও বলেছেন, যদি প্রয়োজন হয় ইরান নির্দ্বিধায় ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় শহরে হামলা চালাবে।উত্তেজনার এই পরিস্থিতিতে মিসরীয় সীমান্তে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি ট্যাংক। এতে অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন।এদিকে হিজবুল্লাহর পাল্টা আক্রমণের ভয়ে ইসরায়েল লেবানন সীমান্তবর্তী এলাকা থেকেনাগরিকদের সরিয়ে নিয়েছে। খবর রয়টার্স, আল জাজিরা ও পার্স টুডে।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়, রোববার থেকে ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৪ শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। রাতভর ঘনবসতিপূর্ণ জাবালিয়া শরণার্থী শিবির এবং গাজার আল-শিফা ও আল-কুদস হাসপাতালের কাছাকাছি আবাসিক এলাকায় বিমান থেকে বোমাবর্ষণ করেছে।এদিকে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ৪ হাজার ৬৫১ ফিলিস্তিনির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
খবরে বলা হয়, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাদের একটি স্থল হামলা প্রতিহত করেছে ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। হামাসের সামরিক বাহিনী আল-কাসসাম ব্রিগেডস টেলিগ্রাম চ্যানেলে সংক্ষিপ্ত ঘোষণায় বলেছে, গাজা সীমান্তে ইসরায়েলি সেনাদের একটি অগ্রবর্তী দলকে তারা পিছু হটে যেতে বাধ্য করেছে।
এদিকে হিজবুল্লাহর ভয়ে লেবানন সীমান্তের আরও ১৪টি গ্রাম খালি করছে ইসরায়েল। এর আগে গত সপ্তাহে লেবানন সীমান্তবর্তী ২৮টি গ্রামের সব মানুষকে দক্ষিণের দিকে সরিয়ে নেয় তেল আবিব।এর আগেও গাজা সীমান্তবর্তী আশকেলন ও সাদেরুতসহ বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে ইসরায়েল। এর ফলে প্রায় ১ লাখ ইসরায়েলি অভ্যন্তরীণভাবে শরণার্থীতে পরিণত হয়েছে।
প্রতিবেদনে জানা যায়, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গত রোববার লেবানন সীমান্তে মোতায়েন সেনা অবস্থান পরিদর্শনে গিয়ে বলেছেন, হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে এত শক্ত আঘাত হানব যে, তা তারা কল্পনাও করতে পারবে না।অন্যদিকে হিজবুল্লাহও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনী অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নির্বিচার হামলা বন্ধ না করলে হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে হামলা আরও শক্তিশালী করা হবে।