শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, শিক্ষা জীবন গঠনের চাবিকাঠি। একটি শিক্ষিত জাতি সমাজ থেকে শুরু গড়ে দেশ গঠনে ভূমিকা পালন করে। শিক্ষার মর্যাদা সুউচ্চ স্থানে। আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছিলেন শিক্ষার জন্য সুদূর চিনে যাও। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত শেখার শেষ নেই। আর শিক্ষক হচ্ছেন শিক্ষা গুরু। প্রতিটি শিক্ষক শ্রদ্ধেয়। আমরা সকল শিক্ষকে শ্রদ্ধা করবো আমৃত্যু।
শিক্ষা গুরুকে অসম্মান করা কেউ পছন্দ করে না, বা করবেন না। সেই শিক্ষা গুরু যদি কারো হাতে লাঞ্ছিত বা অপমানিত হন তাহলে চারিদিকে ঢালাওভাবে ছিঃছিঃ রব উঠবে! আর বিষয়টা যদি ছাত্র কর্তৃক শিক্ষক অপমানিত বা লাঞ্ছিতের মতো ঘটনা ঘটে তাহলে তো ১০০% সমর্থন শিক্ষকের পক্ষে যাওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তাছাড়া আমাদের দেশে আছে বেশ কিছু শিক্ষক সমিতি বা সংগঠন। কিছু হলেই রাস্তায় লাইন দিয়ে ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে তিক্ত প্রতিবাদে ঝাপিয়ে পড়বেন, এটা এদেশের চিরচেনা নিয়ম। বাবা ছেলের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া জন্য গলা ফাটাবেন! শিক্ষক সমিতি বা সংগঠনের নেতা থেকে সদস্যরা লাঞ্ছিত শিক্ষকে বলবেন, দেখেছেন আমরা সারা দেশজুড়ে আপনার জন্য কি? মহান আন্দোলন গড়ে তুলেছি! ঐ ছাত্রের জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়বো। আমাদের ইউনিট কতো মজবুত! এ আন্দোলন সরকারের কাছে কোন চাওয়া-পাওয়ার আন্দোলন না। এই আন্দোলন আমাদের একজন নাবালক ছাত্রের বিচারের দাবীতে। শিক্ষকরা জখন রাস্তায় নিজ হাতে গড়া একজন নাবালক ছাত্রের বিরুদ্ধে বিচারের জন্য রাস্তায় লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে মিছিল মানববন্ধন করছেন। তখন মনে হলো আমরা মেরুদণ্ডহীন! শিক্ষকরা কি যেন মহান দাবি নিয়ে রাস্তায় লাইন ধরে দাঁড়িয়ে যথার্থ পদক্ষেপ নিয়েছেন। শিক্ষা গুরুরা তাদের আন্দোলনে জয়ী (নাবালক ছাত্রের জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়লেন) হয়ে ঘরে ফিরলেন। হলো মহারথীদের স্বপ্ন পূরন!
ছোট বেলায় একটা কবিতা ছিলো আমাদের পাঠ্য পুস্তকে “কুকুর আসিয়া এমন কামড় দিলো পথিকের পা’য়……. তাই বলে কি কুকুর গায়ে কামড়ানো মানুষের শোভা পায়।”আমরা ডিজিটাল যুগে বাস করছি; আমরা কেন কুকুরকে ছেড়ে দেব, আমরাদের কোন কুকুর কামড়ালে, আমরাও তাদের কামড়ে দিয়ে প্রতিশোধ নিবো! কারণ, আমারা শক্তিশালী, যে কাউকে কামড় দেয়া আমাদের জন্য ওয়ান টুর ব্যাপার মাত্র!
পর সমাচারঃ পৃথিবীর সকল বাবা-মা চায় তার সন্তান লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হোক, পৃথিবীর সকল বাবা-মা একই স্বপ্ন দেখেন। কারো বাবা-মা সন্তানকে এমন শিক্ষা দেননা যে শিক্ষক কিছু বললে দু-গালে থাপ্পড় কোষে বাড়ি আসবে! চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিক্টোরিয়া জুবিলী (ভিজে) সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর নাবালক ছাত্র কর্তৃক শিক্ষক লাঞ্ছিত হয়েছেন। একটি অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ বা ঘটনা। ছাত্র ক্ষমার অযোগ্য মহা অন্যায় করেছে, আমি বলবো সারা দেশ বলবে। ঘটলো ঘটনা, শুরু হলো আন্দোলন। এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নিয়ে ( স্কুলের সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখতে বা নাবালক ছাত্রের ভবিষ্যতের দিকে চিন্তা করে ) স্কুল কমিটি বা আন্দোলনরত মহারথী মহোদয় গণ একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে, দোষী ছাত্রের বাবা-মাকে ডেকে বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে পারতেন। তা আর হলো না! কারণ সন্তানের বাবা এই জেলার বহুল প্রচারিত দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক, মা শিক্ষক এদের বাটে ফেলতেই হবে। সাহসী কলম যোদ্ধাদের শত্রুর অভাব নেই, তার পর একই রক্তমাংসে গড়া কিছু জাতভাই তো আছেন। তপ্ত আগুনে ঘি ঢেলে অনেকেই সান্ত্বনার বুলি আওড়িয়েছেন। ওর বাবা কাউকে ছাড় দেয় না, সুযোগ এসেছে, বেটাকে বাটে ফেলতেই হবে, তাও পর্দার আড়ালে!
ধরুন উক্ত শিক্ষক ছেলেটার বাবা-মাকে ডেকে বলতেন, আপনার ছেলে যে জঘন্য অপরাধ করেছে ক্ষমার অযোগ্য, তবুও আমি চাই না ওর এটা ভুলে জীবনটা ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাক, আমি চাইনা এই ঘটনার কোন পুনরাবৃত্তি! আমি চাইনা ওর একটা বছর লেখাপড়া পিছিয়ে যাক বা আজীবন কোন শাস্তি ওকে আস্তা কুঁড়ে খাক? আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম! কিন্তু তা হলোনা। বিষয়টা দাঁড়াল, কেউ করো নাহি ছাড়ে সমান সমান…..!
আবার অনেকে বলছেন, কিছুদিন আগে চুয়াডাঙ্গার একটি গার্লস স্কুলের শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী যৌন নিপীড়ন ঘটনায় শিক্ষকের শাস্তি হওয়ার জের! ( একজন ছাত্রী শিক্ষকদ্বারা যৌন নিপীড়ন বা ধর্ষণের শিকার, আর ছাত্র কর্তৃক শিক্ষককে চড় থাপ্পড় দেয়া, আকাশ পাতাল ফারাক ) তারা ভাবলেন আমরাও ছেড়ে দেবনা! তাছাড়া ওর বাবা খুব দেখিয়ে ছিলো! পত্রিকার পাতা গরম করে দিয়েছিলো? বাহ্ বাহ্ বাহ্ ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক! উক্ত ঘটনাটি নিজে মনে মনে একটু গভীর ভাবে ভেবেই দেখুন। মনে হচ্ছে এদেশে বাবাও সন্তানকে ক্ষমা করেন না, আমরা ডিজিটাল থেকে স্মার্ট নাগরিকদের কাতারে নাম লিখাচ্ছি! আমাদের দেশের শিক্ষকদের সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়ে আমরা মাথানত করে সম্মান করি এবং করবো, আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা হবে বিশ্বজয়ী মেধাবী। ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকের মাঝে থাকবে মা-বাবা-সন্তানের মতো সম্পর্ক, তাবেই হবে আমাদের স্বপ্নপূরণ, আমরা করবো জয় নিশ্চয়ই!
উল্লেখ্য গত ০৮/১০/২০২৩ ইং তারিখ বেলা ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গার সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিক্টোরিয়া জুবিলী (ভিজে) হাইস্কুলে এসএসসির টেস্ট পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে অনাকাঙ্ক্ষিত তর্কবিতর্কে নাবালক ছাত্র সাইফুল আমিন শীর্ষ’র হাতে শিক্ষক হাফিজুর রহমান লাঞ্ছিত হয়। উক্ত ঘটনার মামলায় ছাত্রকে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে (কারাগার) কিশোর সংশোধীতে পাঠিয়েছেন।