ভারতে চলমান ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই বেশ কিছু বিশ্বরেকর্ডের মালিক হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। শ্রীলংকার বিপক্ষে ৪২৮ রানের পাহাড় সমান স্কোর করে দুর্দান্ত জয়ে বিশ্বকাপ শুরু করে প্রোটিয়ারা। টানা দ্বিতীয় জয়ের লক্ষ্য নিয়ে আজ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে টেম্বা বাভুমার দল। তবে ফর্মের তুঙ্গে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্বকাপে প্রথম জয়ের স্বাদ নিতে চায় অজিরা।
বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) লখনৌর ভারতরত্ন শ্রী অটল বিহারী বাজপায় ইকানা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে বিশ্বকাপের ১৩তম আসরের দশম ম্যাচটি। বিশ্বকাপের আগ মুর্হূতে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়া সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত ৩-২ ব্যবধানে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ঐ সিরিজের আত্মবিশ্বাস বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই কাজে লাগায় তারা।
নয়া দিল্লিতে শ্রীলংকার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন কুইন্টন ডি কক, রাসি ভ্যান ডার ডুসেন ও আইডেন মার্করাম। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এই প্রথম একই ইনিংসে তিন ব্যাটারের সেঞ্চুরির বিশ্ব রেকর্ড হয়। ডি ককের ১০০, ডুসেনের ১০৮ ও মার্করামের ১০৬ রানের সুবাদে ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ৪২৮ রান করে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর শ্রীলংকাকে ৩২৬ রানে অলআউট করে দিয়ে ১০২ রানে ম্যাচ জিতে নেয় প্রোটিয়ারা।
অসাধারণ পারফরম্যান্সে বিশ্বকাপ শুরুর পর ফুরফুরে মেজাজে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেও অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে দেয়ার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিপক্ষ। দলের ওপেনার কুইন্টন ডি কক বলেন, ‘শ্রীলংকার বিপক্ষে অসাধারণ ব্যাটিং পারফরম্যান্স ছিলো আমাদের। বোলিংও ভালো করেছি আমরা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও ব্যাটিং-বোলিংয়ে জ্বলে উঠতে হবে আমাদের। অস্ট্রেলিয়াকেও এক বিন্দু ছাড় দেয়া হবে না। আগ্রাসী ক্রিকেট খেলে অজিদের ধরাশায়ী করতে প্রস্তুত আমরা।’
অন্যদিকে, নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাজে ব্যাটিংয়ের খেসারত দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ভারতের কাছে ৬ উইকেটে ম্যাচ হাতে তারা। ব্যাটারদের ব্যর্থতায় প্রথমে ব্যাট করে মাত্র ১৯৯ রান করে অজিরা। মাঝারি মানের পুঁজি নিয়ে জবাব দিতে নেমে দারুণ শুরু করেছিলো অস্ট্রেলিয়া। ২ রানে ভারতের ৩ উইকেট তুলে নেয় তারা। কিন্তু চতুর্থ উইকেটে ২১৫ বলে ১৬৫ রানের জুটি গড়ে অস্ট্রেলিয়ার স্বপ্ন ভঙ্গ করেন বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুল।
প্রথম ম্যাচে হারের পেছনে ব্যাটিংকে দায়ী করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। দ্বিতীয় ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ব্যাটাররা দায়িত্ব নিয়ে খেলবেন বলে বিশ্বাস করেন তিনি। কামিন্স বলেন, ‘প্রথম ম্যাচে ভারতের স্পিনাররা ভালো বোলিং করেছে। আমাদের ব্যাটাররা ভালো খেলতে পারেনি। আগে বা পরে যখনই ব্যাটিং করা হোক না কেন, উইকেটে দীর্ঘক্ষণ টিকে থাকতে হবে এবং বড় ইনিংস খেলতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচটি চ্যালেঞ্জিং হবে। এই চ্যালেঞ্জ নিতে আমরা প্রস্তুত এবং দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে আসরে ঘুড়ে দাঁড়াতে চাই আমরা।’
বিশ্বকাপের মঞ্চে দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হওয়া মানেই শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচের জন্ম দেয়া। বিশ্বকাপে ইতিহাসে এই দু’দলের বেশ কিছু উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ রেকর্ড বইয়ে সেরা দশ ম্যাচের মধ্যে অনায়াসে জায়গা করে নিবে। ইংল্যান্ডের মাটিতে ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সুপার সিক্সে লিডসে নাটকীয়ভাবে জিতে ফাইনাল খেলে অস্ট্রেলিয়া। ২০০৭ বিশ্বকাপেও সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৭ উইকেটে হেরেছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা। অবশ্য গত বিশ্বকাপে লিগ পর্বের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১০ রানের জয় পেয়েছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা।
এখন পর্যন্ত ওয়ানডেতে ১০৮ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা। অস্ট্রেলিয়ার জয় ৫০টিতে ও দক্ষিণ আফ্রিকার জয় ৫৪টিতে। ৩টি ম্যাচ টাই ও ১টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।
অস্ট্রেলিয়া দল :
প্যাট কামিন্স (অধিনায়ক), সিন অ্যাবট, মার্নাস লাবুশেন, অ্যালেক্স ক্যারি, ক্যামেরন গ্রিন, জশ হ্যাজলউড, ট্রাভিস হেড, জশ ইংলিস, মিচেল মার্শ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, স্টিভেন স্মিথ, মিচেল স্টার্ক, মার্কাস স্টয়নিস, ডেভিড ওয়ার্নার ও এডাম জাম্পা।
দক্ষিণ আফ্রিকা দল :
টেম্বা বাভুমা (অধিনায়ক), জেরার্ল্ড কোয়েৎজি, কুইন্টন ডি কক, রেজা হেনড্রিকস, মার্কো জানসেন, এনরিচ ক্লাসেন, কেশব মহারাজ, আইডেন মার্করাম, ডেভিড মিলার, লুঙ্গি এনগিডি, আন্দিলে ফেলুকুওয়াও, কাগিসো রাবাদা, তাবরিজ শামসি, রাসি ভ্যান ডার ডুসেন ও লিজার্ড উইলিয়ামস।