১০ ডিসেম্বরের পর দেশ চলবে খালেদা জিয়ার কথায়’—ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান গত বছরের ৮ অক্টোবর এই ঘোষণা প্রদান করেন। তার এই ঘোষণা সাড়া ফেলে বিএনপির তৃণমূলে। দেশজুড়ে চলমান বিএনপির সভা সমাবেশ থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে এক ধরনের রাজনৈতিক চঞ্চলতা দেখা যায় বিএনপিজুড়ে। শুধু আমান নয়, একই কথা শোনা যায় বিএনপির সিনিয়র কেন্দ্রীয় নেতা শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও মীর নাছিরউদ্দিন আহমেদের বক্তব্যেও। কিন্তু সেই বক্তব্যর এক বছর অতিবাহিত হলেও এখনও বিএনপির নেতৃত্ব দেখা যায়নি দেশজুড়ে।
অবশ্য আমান উল্লাহ, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও মীর নাছিরউদ্দিন আহমেদের এমন বক্তব্যের পর এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় বিএনপি মহাসচিব ও অন্য নেতাদের কাছে। কি হতে যাচ্ছে ১০ ডিসেম্বর? তার উত্তরও সরাসরি না দিয়ে বিএনপির নেতৃত্ব জানিয়েছিল ১০ ডিসেম্বর মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। কিন্তু দিন শেষে সরকার পতনের কোনো আন্দোলনই সেদিন করতে পারেনি বিএনপি। উল্টো গোলাপবাগ মাঠে ছোট পরিসরে সমাবেশ করে বিদায় নিতে হয় নেতাকর্মীদের। অথচ ৯ ডিসেম্বর রাতেও সরকার পতনের আন্দোলনের ডাকের জন্য অপেক্ষা করছিল দলটির তৃণমূল। ৯ ডিসেম্বর রাতে ও ১০ ডিসেম্বর সকালে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়া একাধিক তৃণমূল নেতাকর্মীর কথায় ছিল বড় আন্দোলনের সুর।
১০ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশ চলবে— এমন বক্তব্য বিএনপি প্রচার করে তৎকালীন সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের চাঙা করতে। এ কথা এখন সকলেই জানে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই বক্তব্য ঘিরে বিএনপির কার্যক্রম ও প্রচারণাও ছিল বেশ আগ্রাসী। এমনকি ১০ ডিসেম্বর সংসদ থেকে বিএনপির সর্বশেষ সংসদ সদস্যরাও পদত্যাগ করেন, যার মাধ্যমে বিএনপি বড় কোনো সংঘাতজনক পরিবেশ সৃষ্ট করতে চাচ্ছে বলে ধারণা করা হয়।
অক্টোবরের এই বক্তব্যের পর প্রতি শনিবার দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সমাবেশ ও গণ সংযোগ আরও বেগবান করে বিএনপি। এ সময় দীর্ঘদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকা অনেক বিএনপি কর্মী সমর্থক বেরিয়ে আসে। কিন্তু দিন শেষে ১০ ডিসেম্বর পরবর্তী কর্মসূচির ভবিষ্যৎ স্পষ্ট না করে সভা শেষ করায় হতাশ হতে দেখা যায় বিএনপি তৃণমূলকে। যেখানে ‘খালেদা জিয়ার নির্দেশে দেশ চলবে’ শুনে সমাবেশে যোগ দেওয়া, সেখানে সমাবেশ থেকে বড় ও গ্রহণযোগ্য কোনো কর্মসূচি না দেওয়া এবং এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যাও না দেওয়ায় হতাশা নিয়েই শেষ গোলাপবাগের সমাবেশ।
সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, এই মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি আরও একটি মিথ্যা ছড়িয়ে দেন নারায়ণগঞ্জের এক বিএনপি নেতা। ২১ অক্টোবরের কাছাকাছি সময় তিনি বলে বসেন, ১০ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার কথায় দেশ চলবে, সেই সঙ্গে ১১ ডিসেম্বর দেশে আসবেন তারেক জিয়া।
অবশ্য পরবর্তীতে এ সকল মিথ্যা বক্তব্যকে ‘কথার কথা’ বলে পাশ কাটিয়ে যান বিএনপি নেতারা। উল্টো ১০ ডিসেম্বরের পর অনেক বিএনপি নেতা তাদের নিজস্ব ফোরামের আলোচনায় বলে বসেন, ‘সরকার ফেলিয়ে দেয়া এত সহজ নয়।’ তাহলে জন সভায় ভিন্ন বক্তব্য কেনো দিয়েছিলো বিএনপি। তারা কী তৃতীয় কোনো শক্তির সহায়তায় ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল? রাজনৈতিক আন্দোলনের আড়ালে ভিন্ন উপায়ে বল প্রয়োগ করে কী বিএনপি ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করেছিলো? তাহলে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কথাই বা কেনো বলছে বিএনপি। সেটাও কী ‘কথার কথা’? প্রশ্নগুলো ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।