নীলফামারীর সৈয়দপুরে প্রায় এক সপ্তাহ থেকে হদিস নেই হানিফ আলী নামে এক রেলকর্মচারী ও তাঁর পরিবারের। এলাকাবাসীর ধারণা বিভিন্ন এনজিও ও দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে প্রায় ২০ লাখ টাকা ঋণ করেন তিনি।
এই ঋণের চাপেই গত সোমবার রাতের অন্ধকারে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে রেলওয়ে কোয়ার্টাড় ছেড়েছেন হানিফ আলী। এদিকে তার নামে বরাদ্দকৃত রেলওয়ে ওই বসতবাড়ি (কোয়ার্টার) মালামাল সহ দখলে নিয়েছে একজন চিহ্নিত সুদখোর। ঘটনাটি ঘটেছে শহরের ইসলামবাগ বড় মসজিদ এলাকায়।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, হানিফ আলী সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় বিভাগীয় তত্বানধায়কের (ডিএস) কার্যলয়ে পিওন পদে কর্মরত। তিনি শহরের ইসলামবাগ বড় মসজিদ এলাকায় ৫৩৬/এফ নং রেলওয়ে কোয়ার্টার বরদ্দ নিয়ে বসবাস করতেন। তার গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার নামুড়ি চন্দ্রপুর গ্রামে।
এনজিওসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে ঋণ নেন তিনি। ঋণের টাকা পরিশোধে পাওনাদাররা তাগাদা দিলে হানিফ আলী বসত বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে উধাও হয়। সেই থেকে তাদের হদিস মিলছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে কর্মস্থলেও যাচ্ছেন না তিনি। এমনকি গ্রামের বাড়িতেও যাননি।
এ সময় কথা হয় প্রতিবেশি ওমেদুল হাসানের সাথে। তিনি জানান, সোমবার দিনের বেলায় ওই পরিবারের সদস্যরা বাড়িতেই ছিল। কিন্তু পরদিন মঙ্গলবার সকালে বাড়িড় প্রধান ফটকে তালা ঝুলতে দেখা যায়। শুনেছি তাদের অনেক দেনা রয়েছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন পাওনাদাররা তাদের খোঁজে বাড়িতে আসছেন। এদের মধ্যে বিভিন্ন এনজিও লোকজনই বেশি।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এলাকাবাসী বলেন, পালিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে শাহীন নামে এক পাওনাদার (সুদের কারবারী) এসে হানিফ আলীর নামে বরদ্দকৃত রেলওয়ে বাসার তালা ভেঙ্গে তা দখলে নিয়েছেন। শাহীন শহরের গোলাহাট ওয়াপদা পশ্চিমপাড়ার নুরুদ্দীর ছেলে।
এলাকার একাধিক ব্যাক্তি জানান, আমাদের জানামতে, ওই পরিবারের ঋণের পরিমান প্রায় ২০ লাখ টাকা হবে। এমনকি কর্মস্থল থেকেও হাউস বিল্ডিং লোন বাবদ ৭ লাখ টাকা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
একটি সূত্র মতে, মূলতঃ সুদখোর শাহীনের কুট কৌশলের কারণেই হানিফ আলী পালিয়ে গেছে। এব্যাপারে হানিফ আলীর মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তার মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি এবং রেলওয়ে কারখানার ডিএসডাব্লিউ মোবাইল রিসিভ না করায় তাঁর মতামতও জানা যায়নি।
তবে শাহীনের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সুদ নয় আমি চালের ব্যবসা করি। সেই চাল বাকি নিয়েছেন হানিফ। চালের দাম চেয়েছি, কোন চাপ দেইনি। বরং স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় হানিফ পাওনা টাকা বাবদ তার বাসাটি মালামাল সহ ৩শ’ টাকার স্টাম্পে আমাকে লিখে দিয়েছে। সেজন্য বাসাটি তালা লাগিয়ে দখলে নিয়েছি।
আপনি কি কারো নামে বরাদ্দকৃত সরকারী বাসা লিখে নিতে পারেন বা এটা কতটা বৈধ? এর জবাবে শাহীন বলেন, সৈয়দপুরে তো এভাবেই কোয়ার্টারসহ রেলওয়ের জায়গায় গড়ে ওঠা স্থাপনা কেনাবেচা বা হস্তান্তর হয়। আমিও সেইভাবে নিয়েছি। আর সুদ তো সবাই খায়। ব্যাংকগুলোওতো সুদের ব্যবসা করে। আমরা করলেই দোষ?