আবারও ফাঁস হয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভান্ডারে থাকা নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য। নির্বাচন কমিশনের তথ্যভান্ডার ব্যবহারকারী ১৭৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এক বা একাধিকের মাধ্যমে এ তথ্য ফাঁস হয়েছে। এ ঘটনায় জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
এ ঘটনায় সন্দেহজনক মনে হওয়ায় ভূমি মন্ত্রণালয়কে এনআইডির তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ নির্বাচন কমিশন বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে টেলিগ্রামের যেই চ্যানেল থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য পাওয়া যেত সেখান থেকে এখন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। সম্প্রতি টেলিগ্রামের এনআইডি ইনফরমেশন শীর্ষক চ্যানেলের মাধ্যমে তথ্য ফাঁসের বিষয়টি ব্যবহারকারীদের নজরে আসে। বিষয়টি বিজিডি ই-গভ সার্ট থেকে ইসিকে জানানো হলে বুধবার (৪ অক্টোবর) রাত একটা থেকে সন্দেহভাজন প্রতিষ্ঠানগুলোকে তথ্য প্রদান বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ইসি তথ্য দেওয়া বন্ধ করার আগ পর্যন্ত টেলিগ্রামের চ্যানেলটিতে এনআইডি নম্বর ও জন্মতারিখ দিলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম, পিতা, মাতা, স্বামী/স্ত্রীর নাম, জন্মতারিখ, ধর্ম, লিঙ্গ, মুঠোফোন নম্বর (দেওয়া থাকলে), বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা এবং ছবি দেখা যাচ্ছিল।
এ বিষয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক একেএম হুমায়ূন কবীর সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের (ইসির তথ্যভান্ডার) থেকে তথ্য ফাঁস হয়নি। আমাদের তথ্যভান্ডার হ্যাকও হয়নি। যেসব প্রতিষ্ঠান আমাদের তথ্যভান্ডার থেকে এনআইডির তথ্য নিয়ে থাকে, তার মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের তথ্য এক জায়গায় করে সেগুলো ফাঁস করতে পারে। কতটি প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য ফাঁস হয়েছে তা এখনই এটা বলা যাবে না। আমরা দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। প্রতিবেদন পাওয়ার পর বলতে পারব। তবে, যে প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য ফাঁস হয়েছে তার প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, এনআইডির তথ্য নেওয়া প্রতিষ্ঠান থেকে এমন হতে পারে। বুধবার রাত একটার সময় সন্দেহভাজন প্রতিষ্ঠানগুলোকে তথ্য দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে। এরপর থেকে ওই চ্যানেলে আর তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
এক প্রশ্নের জবাবে হুমায়ূন কবীর বলেন, প্রাইভেসি কোথায় আছে? পাবলিক সার্ভিস কমিশনে চাকরির আবেদন করতে যখন সব তথ্য দেওয়া হয় তখন কি ওই প্রার্থীর প্রাইভেসি থাকে? যখন নিকাহ নিবন্ধন করেন তখন কি প্রাইভেসি থাকে? টেকনোলজির যুগে প্রাইভেসি বলতে কিছু থাকে না।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় ইসির কোনো দুর্বলতা নেই। কারণ ইসির এখান থেকে হ্যাক হয়নি। ইসির টেকনিক্যাল দিকটা খুব স্ট্রং। তারা সবসময় এটা মনিটর করে।
এর আগে, গত জুলাই মাসে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি নাগরিকের তথ্য ফাঁস হয়। ওই ঘটনায় জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্ট্রার কার্যালয়কে দায়ী করা হয়। ওই প্রতিষ্ঠানটিও জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভান্ডার থেকে নাগরিকদের তথ্য যাচাই করত। ওইসব তথ্য তারা সংরক্ষণও করেছিল। ওই ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসাবে জন্ম-নিবন্ধন কার্যালয়ের পাশাপাশি ভূমি মন্ত্রণালয়কেও তথ্য সেবা দেওয়া বন্ধ করে দেয় ইসি। জনদুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবং তাদের ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের শর্তে ইসি পুনরায় সেবাটি চালু করে দেয়।
উল্লেখ্য, নির্ধারিত ফি দিয়ে ইসির সার্ভার থেকে বর্তমানে ১৭৫টি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এনআইডির তথ্য যাচাইয়ের সেবা গ্রহণ করছে। নামজারি, জমি ও ফ্ল্যাট বিক্রির রেজিস্ট্রেশনের কাজে নাগরিকদের এনআইডির তথ্য যাচাই করে থাকে ভূমি মন্ত্রণালয়।