সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পৌর শহরের কান্দাপাড়া মহল্লার মৃত আব্দুর
রউফের বিধবা স্ত্রী ছালেহা খাতুন (৩৮) প্রায় ৭০ লাখ টাকা মূল্যের বাড়ির
সম্পত্তি উদ্ধারে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ন্যায় বিচার পাচ্ছে না।
ফলে দুই এতিম শিশু সন্তানের প্রায় ৭০ লাখ টাকা মূল্যের ৬ দশমিক ৬৬ শতক
বাড়ির সম্পত্তি গ্রাস হয়ে যাচ্ছে। এ সম্পত্তি রক্ষায় তিনি শাহজাদপুর
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা,সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও সিরাজগঞ্জ পুলিশ
সুপারের কাছে একাধিকবার আবেদন করেছেন। তারা শাহজাদপুর থানা পুলিশকে
ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিলেও তার কোনো কাজ হয়নি। উল্টো শাহজাদপুর থানার
এসআই গোপাল চন্দ্রের ঘুষ দাবী ও অসদাচরণের শিকার হয়েছেন। এর প্রতিবাদে গত
শুক্রবার দুপুরে দেওয়ানপাড়া মহল্লার ভাড়া বাসায় ছালেহা খাতুন তার দুই
এতিম মেয়ে লাবিবা খাতুন(১৪) ও ছেলে মাহিন(১৩)কে সাথে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন
করেছেন। এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিধবা ছালেহা খাতুন বলেন, ব্যাংকের ঋণ
পরিশোধের অর্থ যোগাতে ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর আমার শ্বশুর নঈম উদ্দিন
সরকার তার নিজ নামিয় বাড়ির ১০ শতক জায়গা আমার স্বামী আব্দুর রউফের কাছে
বিক্রি কবলা করে দেন।’ এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আমার দেবর এসএম শামীম আমাদের উপর
অত্যাচার নির্যাতন শুরু করেন। এ অত্যাচর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে
স্বামী ও নাবালক দুই সন্তান নিয়ে আমরা দেওয়ারপাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস
শুরু করি। গত ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর আমার স্বামী আব্দুর রউফ করোনা রোগে
আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর থেকে আমি দুই এতিম সন্তান নিয়ে এই ভাড়াবাসায়
অতিকষ্টে চলছি। এর উপর আমাদের না জানিয়ে আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি ওই ১০ শতক
জায়গার মধ্যে ৩ দশমিক ৩৪ শতক জায়গার ওয়ারিশ দাবীমূলে গোপনে আমার দেবর
এসএম শামীমের নামে শিখে দেয়। ফলে শামীম আমার শ্বশুর-শ্বাশুরির যোগ সাজসে
আমার ও আমার সন্তানদের প্রায় ৭০ লাখ টাকা মূল্যের ৬ দশমিক ৬৬ শতক বাড়ির
সম্পত্তি গ্রাস করার পায়তারা করছে। এখন আমার ভাড়াবাসায় থেকে সংসার চালানো
কষ্টকর হয়ে পড়ায় আমি গত ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সন্তানদের নিয়ে স্বামীর
ক্রয়কৃত কান্দাপাড়ার ওই বাড়িতে ওঠতে যাই। এ সময় আমার দেবর এসএম শামীম ও
শ্বশুর নঈম উদ্দিন সহ ৫/৬ জন আমাদের বাড়িতে উঠতে বাঁধা দিয়ে বেধরক মারপিট
ও নির্যাতন শুরু করে। আমরা প্রাণ রক্ষায় দৌড়ে পালিয়ে পাশের বাড়িতে আশ্রয়
নেই। সেখানেও আমাদের উপর হামলা করলে পুলিশের সহায়তা কামনা করে ৯৯৯ নম্বরে
কল করি। এরপর শাহজাদপুর থানার এসআই গোপাল চন্দ্র আমাদের উদ্ধার করে
হাসপাতালে পাঠায়। চিকিৎসা শেষে ওইদিন রাতেই আমি শাহজাদপুর থানায় একটি
মামলা দায়ের করতে যাই। এ মামলা নিতে এসআই গোপাল চন্দ্র আমার কাছে মোটা
অংকের ঘুষ দাবী করে। আমি তার দাবীকৃত টাকা দিতে না পাড়ায় তিনি আমাকে
মামলা করতে বাধা দিয়ে বলেন, আপনার মামলা নেওয়া যাবে না। এক বড় ভাইয়ের
নিষেধ আছে। উল্টো শামীম আপনার বিরুদ্ধে মামলা দিলে তা নিতে হবে। তারপরেও
আমি ডিউটি অফিসারের কাছে আমার লিখিত এজাহার কপি জমা দেই। কিন্তু তাতে
কোনো কাজ হয়নি। আমি হতাশ হয়ে ফিরে আসি। এরপর শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তা,সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার বরাবর
প্রতিকার চেয়ে আবেদন করি। তারা থানা পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ
দিলেও এখনও আমি কোনো প্রতিকার পাইনি। তাই আমি অবিলম্বে প্রশাসনের কাছে
আমার বাড়ির দখলমুক্ত করে আমাকে বুঝে দেয়ার জন্য সার্বিক সহযোগিতা ও এসআই
গোপাল চন্দ্রের অসদাচরণের সুবিচার দাবী করছি। এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত
ছিলেন, বিধবা ছালেহা খাতুনের মেয়ে ১০ম শ্রেণির ছাত্রী লাবিবা খাতুন (১৪) ও
ছেলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মাহিন (১৩)।
এ বিষয়ে রাজশাহী নবদিগন্ত মহিলা উন্নয়ন সংস্থার নারী ও শিশু আইনী সহায়তার
নির্বাহী পরিচালক রাজিয়া সুলতানা বলেন, আমাদের সংস্থার পক্ষ থেকে আইনী
সহায়তা প্রদানের লক্ষে এই এতিম শিশু ও বিধবা ছালাহা খাতুনের সাথে ২৫
সেপ্টেম্বর রাতে আমি শাহজাদপুর থানায় যাই। আমার সামনেরই এসআই গোপাল
চন্দ্র ঘুষ দাবী করেন ও মামলা করতে বাঁধা দিয়ে অসদাচরণ করেন। আমি বিষয়টি
তাৎক্ষণিক ভাবে প্রতিবাদ করলেও কোনো কাজ হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে এসএম শামীমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হয়। কিন্তু সংযোগ না পাওয়ায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর থানার এসআই গোপাল চন্দ্র এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন
আমি তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেছি। তাদের এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর থানার ওসি নজরুল ইসলাম মৃধা বলেন, তার অভিযোগ সত্য নয়।
তারপরেও এসআই গোপাল চন্দ্র যদি কোনো অসদাচরণ করে থাকেন তবে তার বিরুদ্ধে
তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।