কোনো কারণ ছাড়াই দুই বছর ধরে শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি যোগ্য ৭ হাজারের বেশি কর্মকর্তার পদোন্নতি আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষ সমিতি। সংগঠনটির নেতাদের দাবি, এসব কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য সরকারের কোনো অতিরিক্ত অর্থ প্রয়োজন নেই। ক্যাডার সার্ভিসে শুন্য পদ না থাকলে পদোন্নতি দেয়া যাবে না এমন কোনো বিধান নেই। অথচ শুন্য পদের অজুহাতে পদোন্নতি বঞ্চিত রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রংপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এসব অভিযোগ তোলা হয়। ক্যাডার কম্পোজিশনের সুরক্ষা, পদোন্নতি, পদসৃজন, স্কেল আপগ্রেডেশন ও আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনসহ ন্যায্য দাবি আদায়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি রংপুর জেলা কমিটি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. সাইফুর রহমান। আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা সভাপতি অধ্যাপক মোশারফ হোসেন, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) মাহফিজুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সদস্য সমরেশ কৃষ্ণ রায়, সরকারি সিটি কলেজ অধ্যক্ষ বোরহান উদ্দীন, কারমাইকেল কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক দিলীপ চন্দ্র রায় প্রমুখ।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি রংপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ড. সাইফুর রহমান বলেন, শিক্ষার রুপান্তরের অন্যতম কারিগর বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা। তারাই প্রণয়ন করেছেন নতুন শিক্ষাক্রম, এর বাস্তবায়নেও তাঁরাই অন্যতম শক্তি। শিক্ষা ক্যাডারের ১৬ হাজার কর্মকর্তা বর্তমান সরকারের ভিশন-২০৪১ তথা স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। অথচ আমাদেরকে প্রাপ্য অধিকার ও সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই দুই বছর ধরে পদোন্নতি বন্ধ আছে। এই মূহুর্তে শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তার সংখ্যা ৭ হাজারের বেশি। এরমধ্যে অধ্যাপক পদে পদোন্নতিযোগ্য ১২০০ জন। সহযোগী অধ্যাপক পদোন্নতিযোগ্য ৩০০০ জন, সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তা আছেন প্রায় ৩০০০ জন। এই কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য সরকারের কোনো অতিরিক্ত অর্থ প্রয়োজন নেই। সবাই পদোন্নতিযোগ্য পদের বেতন স্কেলের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে গেছেন। ক্যাডার সার্ভিসে শুন্য পদ না থাকলে পদোন্নতি দেয়া যাবে না এমন কোনো বিধান নেই। অথচ শিক্ষা ক্যাডারকে শুন্য পদের অজুহাতে পদোন্নতি বঞ্চিত রাখা হয়।
সাইফুর রহমান অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী সকল ক্যাডারের জন্য সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিয়ে ক্যাডার বৈষম্য নিরসনের নির্দেশনা দিলেও তা কার্যকর হয়নি। অথচ প্রধানমন্ত্রী আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনের নির্দেশ দিয়েছেন বারবারি, কিন্তু সে নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। অন্য ক্যাডারের মত শিক্ষা ক্যাডারে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি অনুসৃত না হওয়ায় অন্যান্য ক্যাডারের তুলনায় শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা পিছিয়ে আছেন। বেতন স্কেল অনুযায়ী ৪র্থ ও ৬ষ্ঠ গ্রেড প্রাপ্য কর্মকর্তাদের প্রস্তাব এক বছর আগে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়েও কোনো অগ্রগতি নেই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষক ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহে জনবলের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। পূর্বের তুলনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে, শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেড়েছে, সঙ্গে সিলেবাস/কোর্স বেড়েছে কয়েকগুন। কিন্তু সে তুলনায় পদ সৃজন হয়নি। বর্তমান শিক্ষা ক্যাডার নিয়ন্ত্রিত সরকারি কলেজসমূহে উচ্চ মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা স্তরে প্রায় ৫০ লক্ষ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষকের পদ সৃজন অপরিহার্য। অথচ বর্তমান সরকারি কলেজসহ শিক্ষা প্রশাসনে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার সংখ্যা মাত্র ১৬ হাজার। দীর্ঘ নয় বছর ধরে শিক্ষার মতো এত গুরুত্বপূর্ণ একটি খাতে ১২ হাজার ৪৪৪টি পদ সৃজনের প্রস্তাব আটকে আছে।
শিক্ষক নেতা বলেন, দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত হলো শিক্ষা। প্রশাসনসহ অন্যান্য খাতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অফিস রয়েছে। কিন্তু জেলা ও উপজেলায় শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনের জন্য শক্তিশালী শিক্ষা প্রশাসন গড়ে ওঠেনি। বর্তমান সরকার প্রতিটি উপজেলায় এক বা একাধিক কলেজ সরকারি করেছে, সেখানে উচ্চশিক্ষা চালু আছে। উপজেলায় ও জেলায় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থাকলেও উচ্চশিক্ষা দেখভালের জন্য কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। দেশের সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে শিক্ষা ক্যাডার নিয়ন্ত্রিত জেলা ও উপজেলা শিক্ষা প্রশাসন প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন।
দীর্ঘদিনের পুরাতন এসব সমস্যা সমাধানের দাবি তোলা হলেও সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এসময় দাবি আদায়ে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী ২ অক্টোবর সারা দেশে একদিনের কর্মবিরতি এবং দাবি পূরণে দৃশ্যমান না হলে ১০, ১১ ও ১২ অক্টোবর টানা তিন দিনের কর্মবিরতি পালন করার ঘোষণা দেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে রংপুরের বিভিন্ন সরকারি কলেজ, সরকারি মাদ্রাসাসহ দপ্তর ও অধিদপ্তরে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।