সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার নাদা দাখিল মাদ্রাসায় আয়া পদে ও নিরাপত্তাকর্মী পদে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে দুই প্রার্থীর নিকট থেকে ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে মাদ্রসার সুপার আব্দুল মজিদ ও সভাপতি আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
এবিষয়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ও ১৯ সেপ্টেম্বর উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার উজ্জল হোসেন বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন ভুক্তভোগিরা।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির সদস্যরা হলেন, উল্লপাড়া উপজেলার মৎস্য অফিসার আতাউর রহমান ও যুব উন্নয়ন অফিসার ছাইদুল ইসলাম মোগল।
নাদা দাখিল মাদ্রসায় আয়া পদে মিনা খাতুন ও নিরাপত্তাকর্মী পদে মনিরুল ইসলামকে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে দুই প্রার্থীর কাছে ২৭ লাখ টাকা দাবী করেন মাদ্রসার সুপার ও সভাপতি। বাকি ১৬ লাখ টাকা নিয়োগ পত্র পাওয়ার পর দেয়ার কথা ছিলো।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, উল্লাপাড়া উপজেলার নাদা দাখিল মাদ্রসায় আয়া ও নিরাপত্তাকর্মী পদে ২০২২ সালের ২৬ জুন পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মাদ্রসা কর্তৃপক্ষ। এর পর এদুটি পদে ৫ জন নারী ও ৬ জন পুরুষ আবেদন করেন। প্রার্থীদের মধ্যে আয়া পদে মিনা খাতুন ও নিরাপত্তাকর্মী পদে মনিরুল ইসলামকে নিয়োগ দেয়ার প্রতিশ্রুত দেয় মাদ্রসার সুপার আব্দুল মজিদ ও সভাপতি আবুল কাশেম। এজন্য তারা দুই প্রার্থীর কাছে ২৭ লাখ টাকা দাবী করেন। দাবীকৃত টাকা দিতে রাজি হন দুই প্রার্থী। মাদ্রসার সভাপতি ও সুপার দুই প্রার্থীর বাড়ি গিয়ে একাধিক স্বাক্ষীদের উপস্থিতিতে ১১ লাখ টাকা অগ্রিম গ্রহন করেন। কিন্তু টাকা নেয়ার পরও তাদের চাকরী না দিয়ে ২য় ও ৩য় দফায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মাদ্রসা কর্তৃপক্ষ। এর পর দুই প্রার্থী টাকা ফেরত চাইতে গেলে সুপার ও সভাপতি টালবাহানা শুরু করে।
এঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আয়া পদে প্রার্থী মিনা খাতুনের স্বামী আব্দুল আলীম ও নিরাপত্তাকর্মী পদে মনিরুল ইসলাম জেলা প্রশাসক ও উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন’। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন উল্লাপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
নিরাপত্তাকর্মী পদে প্রার্থী মনিরুল ইসলাম বলেন, নাদা দাখিল মাদ্রসায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আমি নিরাপত্তাকর্মী পদে আবেদন করি। আবেদন করার কিছুদিন পর মাদ্রসার সুপার ও সভাপতি আমাকে ডেকে নিয়ে যায়। তারা আমাকে বলে তুমি যদি চাকরী করতে চাও তাহলে ১৫ লাখ টাকা দিতে হবে। তখন আমি
একাধিক স্বাক্ষীর উপস্থিতিতে অগ্রীম হিসেবে ৫ লাখ টাকা আমি লোন করে ও জমি বন্ধক রেখে টাকা দিয়েছি,সভাপতি ও সুপারকে আমি আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
আয়া পদে প্রার্থী মিনা খাতুনের স্বামী আব্দুল আলীম বলেন, আমার স্ত্রীকে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে মাদ্রসার সুপার ও সভাপতি আমার কাছে ১৫ লাখ টাকা দাবী করে। আমি ১২ লাখ টাকা দিতে রাজি হয়। ইতিমধ্যে ৬লাখ টাকা দিছি’।
অভিযোগের বিষয়ে নাদা দাখিল মাদ্রসার সুপার আব্দুল মজিদ ও সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলে প্রার্থী খুঁজে পাওয়া যায়নি। দুই প্রার্থী চলে যায়। আমরা নিয়োগ দিতে পারিনি। ডিজি প্রতিনিধি আনতে পারিনি। তৃতীয় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর আবেদনের শেষ তারিখ ছিলো। বিধি মোতাবেক পরীক্ষা হবে। যে প্রথম হবে তার চাকরী হবে। আমরা কোন প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নেয়নি। অভিযোগটি মিথ্যা ভিত্তিহীন। এই নিয়োগে টাকা পয়সার কোন লেনদেন হবে না।
উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার উজ্জল হোসেন বলেন, ১১ লাখ টাকা নিয়ে চাকরী না দেয়ার অভিযোগটি হাতে পেয়েছি’। এরই প্রেক্ষিতে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা প্রতিবেদন দিলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।