নিজস্ব প্রতিবেদক
কিছুদিন আগে দেশীয় জায়ান্ট এক কোম্পানির ‘স্বল্পপরিচিত’ এক স্যাটেলাইট টিভি থেকে আমার কাছে ফোন আসে। আমার নাকি ইন্টারভিউ। হতবাক হয়ে গেলাম। কবে সিভি দিয়েছি, কেন দিয়েছি, কিছুই মনে পড়ছে না। সঙ্গিনী বললো, শুভাকাঙ্ক্ষী কেউ হয়তো দিয়ে থাকতে পারে। তুমি তো ঘরকুনো, যাও না দেখ, কাজ না হলেও নতুন কোনো অভিজ্ঞতা পেতে পারো!
প্রচণ্ড কৌতুহল নিয়ে গেলাম। কয়েকজনের সঙ্গে পরিচয় হয়ে দারুণ লাগলো। ইন্টাভিউ বোর্ডে ছিলেন তরুণ একজন। যার লেখা পড়ে দূর থেকেই অনেকটা ভক্ত ছিলাম। বোর্ডকে বললাম, সত্যিই দুঃখিত, সিভির বিষয়টি মনে পড়ছে না। অভিজ্ঞতা নেই, তাই টিভির জন্য আমি যোগ্যও নই। ডাকা হয়েছিল, তাই সাড়া দিতে এসেছি। আপনাদের সময় নষ্ট করলাম শুধু।
বোর্ডের সবাই বললেন, ওকে, ঠিক আছে, কোনো ব্যাপার নয়। তবে সেই তরুণ সাংবাদিক প্রসঙ্গ টেনে ধরে বললেন, আচ্ছা আপনার সিভিতে দেখলাম, দৈনিক আনন্দবাজার। এটা কী বলেন তো? শুনে আমি অপ্রস্তুত। প্রশ্নটা এমন যে, দৈনিক আনন্দবাজার খায়, না মাথায় দেয়? সামলে নিয়ে বললাম, এটা বাংলাদেশের আনন্দবাজার। সামনে তো দৈনিক লেখাই আছে। এক দশক আগে সরকারের অনুমোদন দেয়া, মিডিয়াভুক্ত। এরপর তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বললেন, এটা কি বের হয়?
মাথাটা গরম হয়ে গেল। দৈনিকটি বিষয়ক খানিকটা বকে প্রসঙ্গ পাল্টালাম। বললাম, আপনারা যারা এখন টিভির সাংবাদিক সবার ব্যাকগ্রাউন্ড তো পত্রিকা। টিভির অভিজ্ঞতা তো ছিল না! সেই তরুণকে বললাম, আর আপনি তো রেডিওতে ছিলেন। কিছুটা বিব্রত হয়ে সবাই বললেন, টিভিতে আসার আগে অনেক প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে। বললাম, টিভিতে কাজের প্রশিক্ষণ আমিও তো নিয়েছি কয়েক দফায়। সার্টিফিকেটও আছে। মাঠেও কাজ করেছি। শুধু তাই নয়, প্রিন্ট মিডিয়ার আজকের যে মাল্টিমিডিয়া, সেটা বোধ হয় আমরাই প্রথম শুরু করেছিলাম দৈনিক ভোরের কাগজে। আসলে অনলাইন নিউজমিডিয়াতেই আমার এক দশকের ব্যাকগ্রাউন্ড…।
বোর্ড হঠাৎ যেন থমকে গেল। সৌজন্যতাবোধের মাত্রা অতিক্রম হচ্ছে ভেবে ক্ষমা চেয়ে উঠতে চাইতেই একজন বললেন, আচ্ছা আপনি তো নিউজ এডিটর হিসেবে কাজ করেছেন। এখানে যদি সুযোগ হয়, কী করতে চান। বললাম, প্রচলিত ধারার টিভিতে কাজ করার সত্যিই যোগ্য নই আমি। তবে কখনও ধারা পাল্টালে নিউজ প্ল্যানিং বেছে নিতাম। কারণ সোশ্যাল মিডিয়া টিভিকে একেবারেই অস্তিত্ব সংকটে ফেলেছে। টিকে থাকতে হলে নতুন রুট তৈরি করতে হবে।
শেষ অবধি মন খারাপ নিয়েই বেরিয়ে এলাম। তরুণ সাংবাদিকটির প্রতি যে ভালোবাসাবোধ ছিল সেটা কেমন আলগা হয়ে গেল। দূর হতে কারো জন্য জমে রাখা মুগ্ধতা, কাছে গেলে যদি এভাবে শূন্য হয়ে যায় তাহলে মন খারাপ হওয়া স্বাভাবিক। সম্প্রতি নয়াপল্টনে তরুণ মেধাবী বীর সাহাবীকে (শেয়ারবিজ, দৈনিক বাংলা) ‘অখ্যাত’ মিডিয়ার সাংবাদিক হিসেবে পুলিশের নাজেহাল করার ঘটনায় সেই মন খারাপটা ফের জেগে উঠলো। ভাবলাম, মিডিয়া কখনও বড় বা ছোট হিসেবে অনুমোদন পায় না। আমরাই মিডিয়াকে হাতিরপুল (আভিজাত) আর ফকিরাপুলে (আন্ডারগ্রাউন্ড) ভাগ করি। সংবাদকর্মীরাও বিভক্ত হন অভিজাত আর ব্রাত্যজনে। (চলবে)