সিরাজগঞ্জের তাড়াশে গবাদি পশুর শরীরে লাম্পি স্কিন (এলএসডি) রোগের সংক্রমণ হচ্ছে। এই রোগ ছড়িয়ে পড়ায় খামারিদের কপালে পড়েছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। রোগটির সুনির্দিষ্ট কোনো প্রতিষেধক না থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক ও গৃহস্থরা।
বৃহস্পতিবার উপজেলার তালম ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাড়াশ উপজেলায় প্রায় শতাধিক গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, সরকারিভাবে এ বিভাগ থেকে আক্রান্ত গরুকে ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে ও কৃষক ও গৃহস্থদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
গৃহস্থদের অভিযোগ, রোগটি ব্যাপক আকার ধারণ করছে। তারা গ্রামের কিছু পশু ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। এতে গরু সুস্থ না হয়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
পশু চিকিৎসকরা বলছেন, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এ বছর বর্ষা মৌসুমের আগেই লাম্পি স্কিনের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। তবে তা বিক্ষিপ্তভাবে ছড়াচ্ছে।
জানা যায়, তাড়াশ উপজেলার তালম ও বারুহাস ইউনিয়নের অধিকাংশ বাড়িতেই এ রোগ দেখা দিয়েছে। ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামের পর গ্রাম। গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির এই পরিস্থিতিতে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন মালিকরা।
উপজেলার তালম পদ্মাপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন জানান, আমার একটি বড় গরুর গলার নিচে ফুলে সারা গায়ে ফোসকা বের হয়েছে। গরুটির অবস্থা খুবই খারাপ। শরীর পচে গর্ত হয়ে যাচ্ছে। সাড়ে ৫ হাজার টাকা খরচ করেও সুস্থ হয়নি গরুটি।,
একই গ্রামের আলী হোসেন জানান, পশু হাসপাতালে এসেও ঘুরে যাচ্ছি ডাক্তার পাচ্ছি না বলে। এই হাসপাতালে এসে কখনো কাউকে পাওয়া যায় না। এখানে নাকি কোনো ডাক্তার নেই। এ অবস্থায় গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছি। তিনি আরও বলেন, তালমশাহী পাড়ায় দুই দিনে প্রায় বাড়ির গরুর লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে।,
আল-মাহমুদ কোবাদ ও লাবু মিয়া নামের গৃহস্তরা জানান, শুরুতে গরুর সারা শরীরে বসন্তের মত গুটিগুটি উঠছে। তারপর পায়ের হাটু গোড়ালি ও গলা ফুলে যাচ্ছে। গলায় জমছে পানি। জ্বর ও প্রচন্ড ব্যাথায় খাওয়া ছেড়ে দেয় আক্রান্ত্র গরুগুলো। অনেক সময় মুখ দিয়ে লালা পড়ছে। কেউ কেউ আক্রান্ত গরুকে অন্য গরু থেকে মশারি দিয়ে আলাদা করে রাখছেন। কিন্তু তারপরও সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না। আর তাদের দুটি গরুসহ প্রায় এই এলাকায় ১০/১২টি গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে জানান তারা।,
তাড়াশ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা.অলিউর রহমান জানান, এ পর্যন্ত লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরুগুলোকে ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে। এছাড়া গৃহস্তদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে যে, এ রোগে আক্রান্ত হলে প্রথমেই অসুস্থ গরুটিকে আলাদা করতে হবে। মশারি টাঙিয়ে রাখতে হবে, যাতে মশা বা মাছি গরুর শরীরে না বসে। কেননা মশা বা মাছি অসুস্থ গরুটিকে কামড় দিয়ে যদি সুস্থ কোনো গরুকে কামড়ায় তাহলে সেটিও অসুস্থ হয়ে পড়বে।,