জনতা ব্যাংক, শাহজাদপুর শাখার গ্রাহকদের টাকা জালিয়াতির মুল হোতা আওলাদ হোসেন রঞ্জু শাহজাদপুর থানা পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার (১০ জুলাই) ভোর ০৫.৪৫ ঘটিকায় সিরাজগন্জ জেলা পুলিশ সুপার মোঃ আরিফুর রহমান মন্ডল, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) এর দিক-নির্দেশনায় এবং শাহজাদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জনাব মোঃ কামরুজ্জামান, পিপিএম-সেবা ও শাহজাদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম দ্বয়ের তত্ত্বাবধানে শাহজাদপুর থানার এসআই গোপাল চন্দ্র মন্ডল এর নেতৃত্ত্বে শাহজাদপুর থানা পুলিশের একটি চৌকশ টিম গোপালগঞ্জ সদর থানার পূর্ব মিয়াপাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে ঘটনার মূল হোতা ১ মো: আওলাদ হোসেন রঞ্জু (৪০), পিতা- মৃত নুরুল হক, সাং- পারকোলা, থানা- শাহজাদপুর, জেলা-সিরাজগঞ্জ, ২৪,০২০/- টাকা ও একটি মোবাইলসহ গ্রেফতার করেছে।
গ্রেফতারকৃত আসামী মো: আওলাদ হোসেন রঞ্জু (৪০), পিতা-মৃত নুরুল হক, সাং-পারকোলা, থানা- শাহজাদপুর, জেলা-সিরাজগঞ্জ, জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সে ১৯৯৯ সালে এইচএসসি পাশ করে এবং ২০০১ সালে বিকম পরীক্ষা দেয়। কিন্তু পর পর ৩ বার পরীক্ষা দিয়েও পাশ করতে পারে নাই। সে ২০০২ সালে স্থানীয় একটি কাপড়ের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ শুরু করে।
২০০৩ সালে জনতা ব্যাংক শাহজাদপুর শাখাতে সে পিওন কাম পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে ( No Work, No Pay) যোগদান করে। ২০০৭ সালে সে তার কাজের পাশাপাশি ডেচপাশের কাজ শুরু করে এবং ব্যাংকের প্রবেশ দ্বারে একটি ডেস্ক স্থাপন করে। সে তার কাজের পাশাপাশি যখন কেউ একাউন্ট খুলতে আসত তখন তার ফরম পুরণ করে দিত।
২০১৬ সালের দিকে সে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে। সে স্থানীয় লোকজনের কাছে চড়া সুদে আনুমানিক ১৫ লক্ষ টাকা ঋণ নেয়। এরপর উক্ত ঋণের টাকা পরিশোধ করার জন্য সে টিএমএসএস, ব্রাক, আশা, দিশা সহ বিভিন্ন এনজিও থেকে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা ঋন নেয়। তাকে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৩০ হাজার টাকা কিস্তি দিতে হত।
সে ২০২২ সালের শুরুর দিকে গ্রাহকদের কাছ থেকে জালিয়াতি করে টাকা নেয়ার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সে তার পরিচিত লোকদের টার্গেট করে এবং তাদের একাউন্ট খুলে দেয়। তার গ্রাহকরা তাকে বিশ্বাস করতেন এবং তার পরিচিত টার্গেট একাউন্টের কেউ টাকা জমা ও উত্তোলন করতে আসলে তার মাধ্যমেই করত। কোন গ্রাহক টাকা তুলতে আসলে তারা যে টাকার পরিমান লিখত তার বাম পাশে গোপনে সে একটি ডিজিট বসায়ে বেশি টাকা তুলত। আবার মাঝে মাঝে সে চেক নিজের কাছে রেখে তার কাছে থাকা টাকা দিয়ে দিত। পরে সুবিধামত সময়ে চেক দিয়ে বেশি টাকা উত্তোলন করত।
আবার তার পরিচিত কেউ যখন টাকা জমা দিতে আসত তখন তার কাছে টাকা দিয়ে চলে যেত। কিন্তু সে উক্ত টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে নিজের কাছে রাখত এবং পরের দিন গ্রাহক কে ভুয়া জমা রশিদ প্রদান করত।
গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ আওলাদ হোসেন রন্জু ঘটনার কথা স্বীকার করেছে এবং তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।,
উল্লেখ,গত ইং ০৬/০৭/২৩ তারিখ জনতা ব্যাংক, শাহজাদপুর শাখার একজন সম্মানিত গ্রাহক জনাব মো: আবু হানিফ উক্ত ব্যাংকে তার একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলনের জন্য আসেন এবং চেক জমা দেয়ার পরে তিনি জানতে পারেন যে, তার একাউন্টে কোন টাকা নাই। তিনি আরও জানান যে, গত ইং ০২/০৫/২৩ তারিখ তিনি অত্র ব্যাংকে কর্মরত পিওন আওলাদ হোসেন রঞ্জুর মাধ্যমে ৫,০০,০০০/(পাচ লক্ষ টাকা মাত্র) জমা প্রদান করেছেন। এরপরে তিনি উক্ত ব্যাংকের ম্যানেজারকে বিষয়টি অবহিত করেন। ম্যানেজার সাহেব জানতে পারেন যে, আওলাদ হোসেন রঞ্জু ঈদের ছুটির পর থেকে ব্যাংকে অনুপস্থিত আছে এবং উক্ত তারিখে হানিফ এর কোন জমা ভাউচার নেই। রঞ্জুর অনুপস্তিতির বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রাহকরা ব্যাংকে আসতে শুরু করেন,। উক্ত ঘটনায় ম্যানেজার সাহেব শাহজাদপুর থানাতে একটি সাধারন ডায়েরি করেন যাহার নং ৩২৭, তারিখ ০৬/০৭/২৩ ইং। পরবর্তীতে ম্যানেজার সাহেব জানতে পারেন যে আওলাদ হোসেন রঞ্জু দৈনন্দিন ব্যাংকিং কার্যাবলীর অগোচরে ব্যাংকের সিল ও স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া ভাউচার তৈরি করে গ্রাহকদের সাথে ব্যক্তিগত সুসম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে ২৫ জন গ্রাহকের প্রায় ৪৫,০০,০০০/-(পয়তাল্লিশ লক্ষ টাকা মাত্র) আত্নসাত করেছে। উক্ত ঘটনার বিষয়ে ম্যানেজার মো: জেহাদুল ইসলাম বাদী হয়ে এজাহার দায়ের করলে শাহজাদপুর থানার মামলা নং- ২৩, তারিখ- ১০/০৭/২০২৩ ইং, ধারা-৪০৬/৪২০/৪৬৭ /৪৬৮/৪৭১ দ: বি: রুজু হয়।