রাজশাহী জেলার তানোরে নির্মিত প্রধান মন্ত্রীর উপহারের বাড়িতে অবস্থান নেয়া এক অসহায় নারীকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে তানোর উপজেলা সরনজাই ইউপির মধ্য ভাগনা গ্রামে। এঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এঘটনায় ভুক্তভোগী নারী বুলবুলি খাতুন বাদি হয়ে তিন জনের বিরুদ্ধে তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন অভিযোগ ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, উপজেলা সরনজাই মধ্যভাগনা গ্রামের পুকুর পাড়ে বুলবুলি একটি খুপরি ঘরে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছিলেন।
সম্প্রতি সেখানে তানোর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই পুকুর পাড়ে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকে উপলক্ষে প্রধান মন্ত্রীর উপহারের ১৫ টি বাড়ি নির্মান করা হয়। বুলবুলির ওই খুপরি ঘর ভেঙ্গে তাকে প্রধান মন্ত্রীর উপহারের পাকা বাড়ি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিলো। প্রধান মন্ত্রীর উপহারের বাড়ি নির্মানের সময় বুলবুলি সেখানেই পার্শে একটি খুপরি করে বসবাস করছিলো।
প্রধান মন্ত্রীর উপহারের পাকা বাড়ি নির্মানের পর বুলবুলি ওই পাকা বাড়িতে উঠে বসবাস শুরু করেন। সম্প্রতি গত ১২ই মে শুক্রবার সরনজাই ইউপির সংরক্ষিত মেম্বার ও ওয়ার্ড মেম্বার যুবলীগ নেতা ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ নেতা এক ভূমিহীনকে বাড়ি থেকে বের করে তালা লাগিয়ে দেন।
এঘটনায় ভূমিহীন বুলবুলি বেগম বাদি হয়ে গত ১৫ মে সোমবার ওয়ার্ড মেম্বার যুবলীগ নেতা সেলিম উদ্দিন, সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার সিমা বেগম ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মুর্তুজাকে বিবাদী করে উপজেলা নির্বাহীর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন।
এর অনুলিপি জেলা প্রশাসক, অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ও সহকারী কমিশনার ভূমিকে দেওয়া হয়েছে। উপজেলার সরনজাই ( ইউনিয়ন) ইউপির সিধাইড় মধ্য ভাগনা তেতলা পুকুর পাড়ে ঘটনাটি ঘটে রয়েছে।
এঘটনায় বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে পারছেন না বুলবুলি। এতে করে বাড়ির বারান্দায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অপর দিকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে একের পর এক হুমকি প্রদর্শন করছেন মেম্বার ও নেতা।
শনিবার বিকেলের দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার সরনজাই ইউপির সিধাইড় গ্রাম পার হয়ে রাস্তার উত্তরে প্রধানমন্ত্রীর বেশকিছু উপহারের বাড়ি রয়েছে। তবে এখনো নির্মান কাজ সম্পন্ন হয়নি। জায়গাটি মধ্য ভাগনা তেতলা পুকুর হিসেবে পরিচিত। ছোট পুকুর আবর্জনায় ভরে গেছে। তার চারদিকে উপহারের বাড়ি।
পুকুরের উত্তর পশ্চিমে ভূমিহীন বুলবুলির বাড়ি। সরকার থেকে বাড়ি পেয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করে আসছিলেন। বাড়ি পাওয়ার পর থেকে সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার টাকার দাবি করে করেন। এ অবস্থায় চলতি মাসের ১২ মে শুক্রবার সরকারী বাড়িতে মহিলা ও পুরুষ মেম্বার এবং নেতা মিলে বাড়ির দরজায় তালা লাগিয়ে বের করে দেন বুলবুলিকে।
সেখানে বসবাস করা একাধিক ব্যক্তিরা জানান, বুলবুলি দীর্ঘ প্রায় ১০-১২ বছরের বেশি সময় ধরে বসবাস করছেন। এমনকি বুলবুলি পুকুরের পাড়ে জঙ্গলের মধ্যে কাগজ দিয়ে ঘিরে জীবন যাপন করতেন। সে চরম অসহায়, কেউ নেই। সরকার বাড়ি দিয়েছে এরা তালা মারার কে।
বুলবুলি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, অনেক কষ্ট করে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে রাতে ঘুমাব সে জায়টাও ছিল না। কাগজ দিয়ে ঘিরে থাকতাম, সামান্য পানি হলে আর থাকা যেত না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কিন্তু মুর্তুজা তার মেয়ে মৌসুমীকে বাড়ি দিতে আমাকে বের করে দিয়ে তালা মেরেছেন এবং নানা ভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।
তালা দেওয়ার পর থেকে বারান্দায় থাকছি। মহিলা মেম্বারকে ৫ হাজার টাকা দিলে কিছুই হত না। মৌসুমীর পিতার পাকা বাড়ি জমি সবই আছে এবং মেয়ে মৌসুমির বিয়ে হয় মোহনপুর উপজেলার কাশিমালা গ্রামে। ১.২.৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার সিমা বেগম টাকা ও তালা দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, বুলবুলি এবং মৌসুমি ও তার পিতা মুর্তুজারা তালা মেরেছেন।
আমি মিমাংষা করার চেষ্টা করেছি কিন্তু তারা আমার কথা শুনেনি। আপনি কি ইউএনও কিংবা পিআইও বা চেয়ারম্যান কে অবহিত করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন না কাউকে জানানো হয়নি। মেম্বার সেলিমকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও রিসিভ করেন নি। তবে ২ নম্বর ওয়ার্ড আ’লীগের সম্পাদক মুর্তুজা বলেন, আমার মেয়ের নামে বাড়িটি বরাদ্দ হয়েছে, আমার মেয়ে তালা মেরেছে।
আপনার মেয়ের বিয়ে হয়েছে মোহনপুর উপজেলার কাশিমালা গ্রামে এবং আপনার পাকা বাড়ি ও জমি আছে কিভাবে মেয়ে বাড়ি পায় জানতে চাইলে তিনি জানান, মেয়ের তালাক হয়েছে, পাকা বাড়ি জমি আমার আছে মেয়ের নাই, এজন্য বাড়ি পেয়েছে বলে দাম্ভিকতা প্রকাশ করেন তিনি।
গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও তানোর উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, যিনি আগে থেকে ছিলেন তার নামে বাড়ি থাকলে যারা তালা মেরেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আর যে তালা মেরেছে তার নামে বাড়ি বরাদ্দ থাকলে পূর্বের ব্যক্তির থাকার সুযোগ নাই। রবিবার পিআইওকে তদন্ত করতে বলা হবে এবং কোন ব্যক্তি বাড়ি পাওয়ার পর যদি না থাকে সেক্ষেত্রে তদন্ত করে প্রকৃত ভূমিহীন আবেদন করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে বলে জানান তিনি।