গ্রাম্য সালিশের রায় মানেননি, দেয়ননি জরিমানা করা ৫০ হাজার টাকাও। ফলে তিন মাস যাবত একঘরে করে রাখা হয়েছে সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার রমাকান্ত মাহাতো (২৩) নামের এক ব্যাক্তির পরিবারকে’।
উপজেলার তালম ইউনিয়নের উপরসিলেট গ্রামের বোয়াল পুকুর পাড়ায় এ ঘটনাটি ঘটেছে।
জানা যায়, রমাকান্ত মাহাতো ও তাঁর মা আর এক ভাগ্নিকে নিয়ে ওই পাড়ায় বসবাস করেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে রমাকান্তর প্রতিবেশি পূর্ণ চন্দ্রের বাড়ি থেকে ২৫ হাজার টাকা চুরি হয়। তখন পূর্ণ চন্দ্র টাকা উদ্ধারের জন্য উপজেলার রানীদিঘি গ্রাম থেকে ফরজ আলী নামের এক কবিরাজকে গ্রামে নিয়ে আসেন। কবিরাজ ফরজ আলী তিন দফায় হাত চালান দিলে সে হাত রমাকান্ত মাহাতোর বাড়িতে উঠে। তখন পূর্ণচন্দ্র এ নিয়ে গ্রাম প্রধানের স্মরণাপন হন এবং বিষয়টি নিয়ে গ্রাম্য শালিশও বসেন। এ শালিশে কবিরাজের কথামত রমাকান্ত মাহাতোর ভাগ্নি কিশোরী (১৩) কে চোর সাবস্ত করা হয়। পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ঘোষণা করেন ও জরিমানার টাকা তিন দিনের মধ্যে পরিশোধের নির্দেশ দেন গ্রাম পঞ্চায়েতরা।
ওই শালিশে গ্রাম পঞ্চায়েতরা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, শংকর কুমার, সরকার কুমার, মন্টু সরকার, সুশীল সরকারসহ অনেকে। এ দিকে রমাকান্ত তিন দিনের মধ্যে জরিমানার ওই টাকা পরিশোধ করতে না পারায়। আবারও গ্রাম পঞ্চায়েতরা একটি শালিস আহবান করেন। এ শালিসে সময় মত জরিমানার টাকা না দেওয়ায় রমাকান্তের পরিবারকে একঘরে ঘোষণা করে গ্রামের সকল বাসিন্দাকে ওই বাড়িতে না যেতে, তাদের কাছে দোকানের কিছু বিক্রি না করতে, কথা না বলতে নির্দেশ দেন। আর এরপর থেকে ওই পরিবারটি এক ঘরে হয়ে পরে আছেন’।
সরেজমিনে শনিবার (৬ মে) সকালে রমাকান্তের মা রাইমনি মাহাতো (৪৮) জানান, আজ প্রায় তিন মাস হলো গ্রামের কোন লোক তাদের সাথে কথা বলেন না। গ্রামের দোকানে গেলে দোকানদার তাদের কাছে কোন জিনিসপত্র বিক্রি করেন না। জমিতে বোরো ধান পেঁকে আছে কিন্তু গ্রামের কৃষি শ্রমিকরা ধান কাটতে রাজি না হওয়ায় বিপদে আছি। এমন কি আমার নাতনী স্কুলেও যেতে পারছে না। আমাদেরকে একঘরে করে রাখায় খুব কষ্টে চলতে ফিরতে হচ্ছে।’
গ্রাম পঞ্চায়েত শংকর কুমার জানান, বিষয়টি সামাজিক এর বেশি কিছু বলতে পারবো না।
তালম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল খালেক জানান, রমাকান্তের পরিবারকে একঘরে রাখার বিষয়টি আমি দুদিন হলো জেনেছি। আর খুব দ্রূতই ওই গ্রামে গিয়ে বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো’।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ থানার পুলিশ পরির্দশক (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি জানার পর তদন্তের জন্য পুলিশ পাঠানো হয়েছে।