রাজশাহীর কাজী মোঃ দূরুল হুদার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগ উঠেছে। তিনি চারঘাট থানার এম.এ হাদি ডিগ্রি কলেজের বাংলার প্রভাষক এবং একই থানার ডাকরা গ্রামের বাসিন্দা।
জানা গেছে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানাধিন (রাসিক ২৩ নং ওয়ার্ডের) শেখের-চক ঠিকানা দিয়ে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রানালয়, বিচার শাখা-৭ হতে নিকাহ্ রেজিস্ট্রার লাভ করেছেন। ফলে মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী ১৯৭৫ সালের বিধি মোতাবেক অধিক্ষেত্রের মধ্যে মসজিদ মাদ্রাসায় চাকরি করতে পারবেন। কিন্তু অধিক্ষেত্রের বাইরে চারঘাট থানার এম.এ হাদি ডিগ্রি কলেজের বাংলার প্রভাষক হিসেবে চাকরী করছেন। বে-সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮(২৩ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সংশোধিত) এর অনুচ্ছেদ ১১.১০(ক) মোতাবেক এমপিওভূক্ত কোন শিক্ষক কর্মচারী একই সাথে একাধিক কোন পদে/ চাকুরীতে বা অর্থিক লাভজনক কোন পদে নিয়োজিত থাকতে পারবেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অভিজ্ঞ নিকাহ্ রেজিস্ট্রার বলেন, (রাসিক ২৩ নং ওয়ার্ডের) শেখের-চক কাজী অফিসে কাজী মোঃ দূরুল হুদার সহকারী মোঃ আব্দুল মতিন (মুকুল)। তিনি মধ্য নওদাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি গত ২৪/০২/২০১৭ তারিখে, রেজিঃ নং-২২/২০১৭ বিবাহ রেজিস্ট্রী করেন। বর মোঃ রফিকুল ইসলাম ও মধ্য নওদাপাড়ার গ্রামের মোঃ নূর ইসলামের কণ্যা মোসাঃ মুক্তা খাতুন। এদিন তিনি রাসিক ১৭ নং ওয়ার্ডের নিকাহ্ রেজিস্ট্রার মোঃ আব্দুর রাকিবের স্বাক্ষর জাল করে গত ০৪/০৬/২০১৮ তারিখে বিবাহের কাবিন নামা প্রদান করেন। এছাড়াও গত ২৫/০৩/২০২০ তারিখে রোড নওদাপাড়া গ্রামের মোঃ আসাদ আলীর পুত্র মোঃ আজাদ আলীর সাথে একই গ্রামের মোঃ রাজের কণ্যা মোসাঃ সুন্দরী খাতুনের সাথে খোলা বা মুবারত তালাকের নোটিশ দ্বারা বিবাহ বিচ্ছেদ করেন। গত ০৪/১২/২০২০ তারিখে রাসিক ১৭ নং ওয়ার্ডের বড়বনগ্রামের আলাউদ্দিনের কণ্য মোসাঃ হামিদা পারভিন জুলি এবং বর পাঁচ পাড়া গ্রামের মোঃ ইনশান আলী খানের পুত্র মোঃ গোলাম মাওলার সহিত বিবাহ রেজিস্ট্রী করেন। ওই তারিখের বিবাহের কাবিন নামা না দিতে পারায় পূণরায় ০১/০১/২০২৩ তারিখে বর ও কণ্যর পূণরায় বিবাহ রেজিস্ট্রী করেন। বিবাহ রেজিস্ট্রী বইয়ে দেখা যায়, বিবাহের স্থান কাজী অফিস দেখাচ্ছে, কিন্তু মেয়ে সুন্দরী খাতুনের বাড়িতে তার ও ভাই ইকবাল সহি নেয়, মোঃ নাজমুল এবং সহকারী আব্দুল মতিন নিজেই স্বাক্ষী হিসেবে সাক্ষর করেন।
অভিযোগ উঠেছে, কাজী মোঃ দুরুল হুদা একাধিক মামলায় স্বাক্ষী হয়েছেন। সাবেক জেলা রেজিস্ট্রার মোঃ ইলিয়াস হোসেন ও একাধিক নিকাহ্ রেজিস্ট্রারদের বিরুদ্ধে। তবে তিনি স্বিকার করেছেন একাধিক মামলায় তাকে স্বাক্ষীর করা বিষয়টি তিনি জানেন না।
ভূক্তভোগী গোলাম মাওলা জানান, আমার দুইবার বিবাহের রেজিস্ট্রী খাতায় সহি করেছি। ০৪/১২/২০২০ বিবাহ করলেও ০১/০১/২০২৩ বিবাহ রেজিষ্ট্রী করেন। এদিন কণ্যার কাজীর সহকারী মতিন আমার সহি কাজী অফিসে এবং কণ্যার সহি তার বাড়িতে গিয়ে নেয় এবং সাক্ষীতে মতিন নিজে সহি করেন। তিনি আরও বলেন, আমি গ্রামের মানুষ কাজীদের মারপ্যাচ বুঝিনা। তবে শেষ পর্যন্ত কাগজ পেয়েছি।
এ ব্যপারে মুঠো ফোনে জানতে চাইলে মোঃ আব্দুল মতিন জানান, আমি রাসিক ২৩ নং ওয়ার্ড কাজী মোঃ দূরুল হুদার সহকারী হিসেবে কাজ করি। মোঃ আব্দুর রাকিবের স্বাক্ষর জাল করে মোঃ রফিকুল ইসলাম ও মধ্য নওদাপাড়ার গ্রামের মোঃ নূর ইসলামের কণ্যা মোসাঃ মুক্তা খাতুনের বিবাহের বিষয় তিনি স্বিকার করেন। অন্যন্য প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়ে বলেন আপনার সাথে সাক্ষাতে কথা বলবো।
এ ব্যপারে মুঠো ফোনে জানতে চাইলে প্রভাষক (কাম) কাজী মোঃ দূরুল হুদা জানান, চারঘাট থানার এম.এ হাদি ডিগ্রি কলেজের বাংলার প্রভাষক। এছাড়াও আমি রাসিক ২৩ নং ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। তিনি আরও বলেন, মোঃ আব্দুল মতিন (মুকুল) আমার অফিসের সহকারী। রাসিক ১৭ নং ওয়ার্ডে সহকারী মতিন বিবাহ ও তালাকের কাজের বিষয়ে তিনি জানান, খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। তবে আমি বিভিন্ন সময় ব্যস্ত থাকলে বিবাহের কাজগুলি সেই করে থাকে। শিক্ষকতা পাশাপাশি কাজীর কাজ আইন বহিভূত। উত্তরে তিনি জানান, আমার মতো অনেক কাজী শিক্ষকতা ও চাকরি করে। আমি করলে দোষ কি ?
মুঠো ফোনে জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ নাসির উদ্দিন বলেন, বে-সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮(২৩ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সংশোধিত) এর অনুচ্ছেদ ১১.১০(ক) মোতাবেক এমপিওভূক্ত কোন শিক্ষক কর্মচারী একই সাথে একাধিক কোন পদে/ চাকুরীতে বা অর্থিক লাভজনক কোন পদে নিয়োজিত থাকতে পারবেন না।
চারঘাট থানার এম.এ হাদি ডিগ্রি কলেজের বাংলার প্রভাষক ও কাজী মোঃ দূরুল হুদার বিরুদ্ধে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা রেজিস্ট্রার মোঃ মতিউর রহমান বলেন, সহকারী কাজীকে দিয়ে বিয়ে পড়ানো যাবে না। কিন্তু অনেক কাজীরা এই ধরণের অনিয়ম করছে। কাগজ কলমে তথ্য প্রমান পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, অধিক্ষেত্রের বাইরে শিক্ষকতা করা যাবে না। এই ধরনের অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।