1. admin@crimenews24.net : cn24 :
  2. zpsakib@gmail.com : cnews24 :
বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২১ অপরাহ্ন

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দিবস-২০২২ উদযাপিত

মোঃ সাকিব হাসানঃ
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ৮৬ বার নিউজটি পড়া হয়েছে
২০ ডিসেম্বর  যথাযোগ্য মর্যাদা ও অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দিবস-২০২২’উদযাপিত হয়েছে।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে সকাল ১০টায়  রাজধানী ঢাকার পিলখানাস্থ সদর দপ্তর বিজিবি’র বীর উত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজিবি দিবসের আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজ শুরু হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছালে তাঁকে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং বিজিবি মহাপরিচালক অভ্যর্থনা জানান। এরপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন এবং বীরত্ব ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিজিবি সদস্যদের পদক প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ১৯৭৪ সালের ০৫ ডিসেম্বর তৎকালীন ইপিআরের ৩য় ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রদত্ত ভাষণের কিয়দংশ  প্রদর্শন করা হয়।
  অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশ্যে মূল্যবান বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই বাহিনীকে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে এর পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নের কাজ শুরু করেন। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ সরকার বিজিবি’র সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছে। এর ফলে এই বাহিনী একটি দক্ষ, শক্তিশালী আধুনিক ও ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপলাভ করেছে। বিজিবি এখন জল, স্থল ও আকাশ পথে দায়িত্ব পালনে সক্ষম। বিজিবি’র সাংগঠনিক কাঠামোতে নতুন ইউনিট/সেক্টর/রিজিয়ন সৃষ্টির ফলে কমান্ডস্তরে একটি ভারসাম্য সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সুষ্ঠুভাবে সীমান্ত সুরক্ষা, সীমান্ত অপরাধ দমন এবং সীমান্তবর্তী জনসাধারণের জানমাল রক্ষা করা আগের চেয়ে সহজতর হয়েছে।
 মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি চোরাচালান রোধ, মাদক ও নারী-শিশু পাচার রোধ, আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনসহ সীমান্তবর্তী জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা রক্ষায় বিজিবি’র দায়িত্ব ও পেশাদারিত্বের প্রসংশা করে নিচ্ছিদ্র ও শান্তিপূর্ণ সীমান্ত বাস্তবায়নের জন্য বিজিবি’র সকল সদস্যকে আরও সচেষ্ট হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কক্সবাজারে আশ্রয়গ্রহণকারী বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের নিরাপত্তা, চিকিৎসাসেবা, ত্রাণ কার্যক্রম এবং রেজিষ্ট্রেশন কার্যক্রমসহ পুর্নবাসন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সীমান্ত পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে বিজিবি সহনশীলতা ও পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছে।
 তিনি আরও বলেন, বিজিবির সাংগঠনিক কাঠামোতে অত্যাধুনিক ও যুগোপযোগী অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি যুক্ত করায় এ বাহিনীর আভিযানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সৈনিকদের মনোবল ও কর্মউদ্দীপনা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার পার্বত্য সীমান্তের নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং দুর্গম পার্বত্য এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সর্বমোট ১ হাজার ৩৬ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এরই অংশ হিসেবে ১ম পর্বে ৩১৭ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এর ফলে সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি পার্বত্য অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে বিজিবির আভিযানিক কর্মকাণ্ড সহজতর হবে।
 মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিজিবি কর্তৃক বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে  বিভিন্ন প্রকার সীমান্ত পিলারের গায়ে PAK/PAKISTAN লেখা পরিবর্তন করে বাংলাদেশ/BD লেখায় অত্যন্ত সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং বিজিবিকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ভারত এবং মায়ানমার সীমান্তে ০৪টি ব্যাটালিয়ন এবং সুন্দরবন এলাকায় ২টি ভাসমান বিওপিসহ মোট ৬২টি বিওপি সৃজনের মাধ্যমে ৫৩৯ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্তের মধ্যে ৪০২ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্ত ইতোমধ্যে নজরদারীর আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়াও ২৪২টি নতুন বিওপি সৃজন এবং সীমান্ত হতে অধিক দূরত্বে স্থাপিত ১২৬টি বিওপি সীমান্তের সন্নিকটে স্থানান্তরের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
 মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার সৈনিকদের জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন ধরণের কল্যাণমূখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিজিবি সদস্যদের নতুন র‍্যাংক ব্যাজ প্রবর্তন, যোগ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতি, সীমান্ত ভাতা বৃদ্ধি, জুনিয়র কর্মকর্তা ও হাবিলদার পদবির সদস্যদের বেতন স্কেল উচ্চ ধাপে উন্নীতকরণ, অগ্রিম বেতনসহ বাৎসরিক ২ মাসের ছুটি প্রদান, পারিবারিক রেশন ও ৩ বছরের নীচে সন্তানদের পূর্ণস্কেল রেশন প্রদানসহ বিজিবি সদস্যের প্রতিবন্ধী সন্তানদের অবসরের পূর্ব পর্যন্ত নগদমূল্যে রেশন প্রদান করা হচ্ছে।দূর্গম এলাকার জনবিচ্ছিন্ন বিওপি হতে আইপি টেলিফোনের মাধ্যমে বিজিবি সদর দপ্তরসহ যে কোন স্থানে যোগাযোগ সহজতর করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্ভর ভি-স্যাট প্রযুক্তির মাধ্যমে টেলিফোন সুবিধা সম্প্রসারণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০০৯ সাল হতে চলতি বছর পর্যন্ত ২২টি ব্যাচে সৈনিক পদে মোট ৩৪ হাজার ৩৬১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ সময়ে ৩ হাজার ৩৪৪ জনকে বিভিন্ন অসামরিক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৫ সাল হতে এখন পর্যন্ত বিজিবিতে ৯২২ জন মহিলা সৈনিক ভর্তি করা হয়েছে। আরও ১৫ হাজার জনবল সৃজনের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
 প্রশিক্ষণের উপর গুরুত্বারোপ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেকোন পেশাদার বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুশৃঙ্খল ও দক্ষ বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই। বিজিবি সদস্যদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য সাতকানিয়ার ‘বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ’ এর পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গায় অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ সুবিধা সম্বলিত আরও একটি প্রশিক্ষণ সেন্টার স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিজিবি’র মনোমুগ্ধকর কুচকাওয়াজ বিশেষ করে নারী সৈনিকদের ড্রিল দেখে অত্যন্ত মুগ্ধ হন। তিনি বিজিবিতে বীরত্ব ও কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পদক প্রাপ্তদের অভিনন্দন জানান।
তিনি বলেন, শৃঙ্খলা এবং চেইন অব কমান্ড একটি বাহিনীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি। তিনি বিজিবি’র প্রতিটি সদস্যকে চেইন অব কমান্ড এবং কর্তৃপক্ষের আদেশ মেনে চলার আহবান জানান। তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৭৪ সালের ০৫ ডিসেম্বর পিলখানায় এসে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “ঈমানের সাথে কাজ করো, সৎ পথে থেকো, দেশকে ভালবাস।” তিনি সকল বিজিবি সদস্যকে বঙ্গবন্ধুর এই চিরন্তন দিক নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানান।
 মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এ দেশের দুঃখী  মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন এবং আওয়ামী লীগ সরকার সেই লক্ষ্যে কাজ করে চলছে। বঙ্গবন্ধুর দেশে একটি মানুষও ভূমিহীন,গৃহহীন থাকবে না বলে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি উন্নয়নশীল দেশের আত্মমর্যাদা ধরে রাখার পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষাপটে নিজেদের আরো স্বনির্ভর হওয়ার তাগিদ দেন। তিনি  বিজিবি’র বিভিন্ন স্থানে পতিত জমিতে কৃষি খামার গড়ে তোলার উদ্যোগের প্রশংসা করে সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি ডিজিটাল প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশ গড়ার কথা বলেন এবং ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সবশেষে তিনি জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্য মুক্ত উন্নত এবং সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্যে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
ভাষণ প্রদান শেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মনোজ্ঞ মার্চপাস্ট, হার্ডওয়্যার ডিসপ্লেসহ বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ এবং বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে ‘সোনার বাংলা বিনির্মাণে সংশপ্তক নির্মাতা ‘ শীর্ষক সম্মিলিত প্রদর্শনী উপভোগ করেন। কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমন্ত্রিত অতিথিবর্গের সাথে চা চক্রে অংশগ্রহণ করেন এবং শেষে পিলখানাস্থ সীমান্ত সম্মেলন কেন্দ্রে বিজিবি সদস্যদের বিশেষ দরবার গ্রহণ করেন।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দিবসের অনুষ্ঠানে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, অন্যান্য মন্ত্রীবর্গ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং বিজিবি মহাপরিচালকসহ উচ্চ পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, কূটনৈতিক কোরের সদস্যবৃন্দ এবং আমন্ত্রিত অতিথিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বিজিবি দিবস উপলক্ষ্যে সকালে ফজরের নামাজের পর পিলখানাস্থ সকল মসজিদে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ, এসপিপি, এনএসডব্লিউসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি সকালে মহাপরিচালকের সচিবালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজিবি’র রেজিমেন্টাল পতাকা উত্তোলন করেন এবং সীমান্ত গৌরবে মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এসময় বিজিবি’র সকল কর্মকর্তা, জুনিয়র কর্মকর্তা ও নির্ধারিত অন্যান্য পদবীর সৈনিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।  বিজিবি দিবস উপলক্ষে পিলখানার বাইরেও সকল রিজিয়ন, সেক্টর এবং ইউনিটে যথাযোগ্য মর্যাদায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এ জাতীয় আরো খবর ....
© All rights reserved © 2022 crimenews24.net
Design & Developed By : Anamul Rasel