তখন বয়স ৫ বা ৬ বছর, পাঠ্যবইয়ে একজন কিংবদন্তীর জীবনি পড়ে তার প্রেমে পড়ে যায় আমি। বাবা – মা ব্রাজিলের সমর্থক তাই আমিও ব্রাজিলের পথেই হাটবো বিষয়টি আমার ক্ষেত্রে ভিন্ন। কুষ্টিয়ার মধুপুর গ্রামে তখনও ডিশের আগমন ঘটেনি তাই ক্লাব ফুটবল খেলা না দেখলেও ততদিনে জেনে গিয়েছি শৈল্পিক ফুটবলের জনক ব্রাজিল। পেলের প্রতি ভালবাসা থেকেই আমার সমর্থন ব্রাজিলের প্রতি।
বলছিলাম ফুটবলের রাজা কালো মানিক “এডসন ওরান্তেস দো নাসিমেন্তে পেলে” র কথা। জন্মের সময় বাবা নাম রেখেছিলেন এডিসন। অনেকটা আলোর আবিস্কারক টমাস আলভা এডিসনের নামের সাথে মিল রেখেই। গায়ের বর্ণ ছিল একেবারেই কালো। কিন্তু সেদিন কয়জন ভেবেছিলো ১৯৪০ সালে ব্রাজিলের এক বস্তিতে জন্ম নেওয়া এক মিশমিশে কালো ছেলে সারা বিশ্বে আলো ছড়াবে। আজ সারা বিশ্বের মানুষের কাছে বিস্ময়কর এক ফুটবলারের নাম পেলে।
“আমার নাম রোনাল্ড রিগ্যান এবং আমি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। আপনার পরিচয় দেওয়ার দরকার নাই। আপনাকে সবাই চেনে।” একজন ফুটবলারকে এভাবেই পরিচয় করিয়ে দেন ইউনাইটেড স্টেট অব আমেরিকার ৪০ তম প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড উইলসন রিগ্যান।
১৯৫৮-এর বিশ্বকাপে মাত্র সতের বছর বয়সেই সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপে অভিষেক হয় পেলের এবং ৪ ম্যাচে ৫ গোল করে বিশ্বকাপ জিতে নেই সুইডেনকে হারিয়ে।
একটা সময় ফুটবলে কালো চামড়া মানুষরা ছিলেন খুবই অবহেলিত। পেলে ছিলেন সেই সময়ের একটি বিদ্রোহ যিনি বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছিলেন এক অমীয় সত্য বাণী – গায়ের রং কখনও কাউকে ছোট করে না, কেড়ে নিতে পারেনা কারো প্রতিভা। ফুটবল বিশ্বকাপে যখন পুরোটা দুনিয়া মুগ্ধ হয়ে দেখেছিলেন এক কালোমানিকের আধিপত্য তখন সেই জয়ধ্বনিতে ছিল বহু কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের হুঙ্কার, স্বাধীনতা পাওয়ার তীব্র ইচ্ছে। মিথ আছে যে,শুধুমাত্র পেলেকে এক নজরে দেখার জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায় রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ!