আলমডাঙ্গায় নওলামারী গ্রামের এক নারী স্বামীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্ত্রী রীনা খাতুন। স্ত্রীর টাকা হাতিয়ে নিয়ে স্ত্রীকে ফাঁসাতে স্বামীর থানায় মিথ্যা অভিযোগ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে রিনা খাতুন নামের ওই নারী গতকাল বৃহস্পতিবার রিনা খাতুন সংবাদ সম্মেলন করেন।
লিখিত সংবাদ সম্মেলনে রিনা খাতুন জানান, ১৫ সালে রেজাউলের সাথে বিয়ের আগে তার কাছে প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা ছিল। প্রথম বিয়ের স্বামীর সাথে তার ছাড়াছাড়ির সময় তিনি দেনমহরের কয়েক লক্ষ টাকা পান। সেই টাকা দিয়ে তিনি মাঠে জমি বন্ধক রাখেন। ইজিবাইক কিনে তা ভাড়ায় চালাতে থাকেন। এমনকি আলমডাঙ্গা শহর থেকে অটবির ফার্নিচার, প্লাস্টিকের চেয়ার-টেবিল কিনে এলাকায় কিস্তিতেও বিক্রি করে টাকা জমাতে থাকেন। এভাবে তিনি ১৫ সালের আগেই প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা জমিয়ে ফেলেন।
রিনা খাতুন জানান, এলাকায় নারী উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করার সময় মালেশিয়া প্রবাসী আলমডাঙ্গার কেশবপুরের রেজাউলের সাথে ১৫ সালে মোবাইলে তার পরিচয় হয়। মোবাইলে রেজাউলের চাতুর্যপূর্ণ কথায় রিনা তার বশে চলে যান। এক সময় মোবাইলে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিদেশে আরো সুন্দর জীবনের আশা দেখিয়ে রেজাউল তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। রিনাও রাজি হয়ে যান। ১৫ সালে মোবাইলে তারা বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন।
এরপর ১৬ সালে রেজাউল রিনাকে মালেশিয়ায় নিয়ে যান। সেখানে নিয়েই প্রথম প্রতারণার ফাঁদ পাতে রেজাউল। স্বপ্ন দেখিয়ে মালেশিয়ায় একটি রেস্টুরেন্ট করতে রিনার কাছ থেকে তার গচ্ছিত ১৭ লক্ষ টাকা নিয়ে নেন রেজাউল। রিনাও সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় রেজাউলকে টাকা দিয়ে দেন। এর মধ্যে চলে আসে করোনা মহামারি। এসময় রেজাউল রেস্টুরেন্ট রিনার কাছে দিয়ে আদম ব্যবসা ও নারী সাপ্লাইয়ের কাজ করতে থাকে। তিনি জানান, রেজাউলের মূল নেশা ছিল নারী। বিভিন্ন মেয়েদের সাথে দৈহিক মেলামেশা করেই সে সব টাকা উড়িয়ে দিতো। আবার ইন্দোনেশিয়ান দুই মেয়েকে বিয়ে করেও সে প্রচুর টাকা নষ্ট করে। এসবের প্রতিবাদ করলে রেজাউলের আসল চরিত্র উন্মোচিত হতে থাকে। বের হতে থাকে রেজাউলের একের পর এক বিয়ের খবর। রিনা জানান, দেশে-বিদেশে রেজাউলের মোট ৬ টি বিয়ের খবর বের হয়ে আসে। এরপর সংসারে ঝামেলা দেখা দিলে তার ওপর নেমে আসে অকথ্য নির্যাতন। এসব নির্যাতনে রেজাউলের সাথে যোগ দেয় তার ভাইয়ের জামাই মালেশিয়া প্রবাসি মিলন ও ভাতিজা কবির। নির্যাতন এমন পর্যায়ে তারা নিয়ে যায় যে, এক পর্যায়ে তারা তার চার বছরের ছেলেকে অপহরন করে তার কাছ থেকে জোরপূর্বক ৩০ লক্ষ টাকা আদায় করে। তাকেও একবার অপহরনের চেষ্টা করেছিল। কিন্ত দেশী প্রবাসিদের কারনে তা সম্ভব হয়নি।
রিনা জানান, আলমডাঙ্গার মাদ্রাসাপাড়ার টিনশেডের যে বাড়িটি তিনি ৭ লক্ষ টাকা দিয়ে কিনেছিলেন সেটা ১৬ সালে মালেশিয়া যাওয়ার আগে। তা নাহলে ওই টাকাও রেজাউল হাতিয়ে নিত।
রিনা খাতুন জানান, এতো অত্যাচার ও নির্যাতনের পরও রেজাউলের সাথে তিনি সংসার করতে চেয়েছিলেন। গত নভেম্বরের ২৫ তারিখে দেশে এসে রেজাউলকে সাথে নিয়েই তিনি তার বাপের বাড়ি নওলামারীতে যান। রেজাউল কয়েকদিন তার সাথেই ছিলেন। কিন্ত এক সকালে রেজাউল তার স্বর্নের গহনা ও নগদ এক লক্ষ টাকা নিয়ে পালিয়ে চলে আসে। এসেই আমার নামে থানায় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ দেয়। তিনি জানান, রেজাউল আমার জীবনটা ধ্বংস করে দিয়েছে। আমার সঞ্চিত সব অর্থ সে হাতিয়ে নিয়েছে। অথচ আমার বিরুদ্ধে সে থানায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। আমি সত্যটা জানানোর জন্য সংবাদ সম্মলনের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করছি।