আদালতের আদেশ না মেনে সদরের কাথন্ডা বাজারস্থ বৈকারী ইউনিয়ন পরিষদের উত্তর পাশের্^ জোরপূর্বক চার শতক জমি জবর দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে কাথন্ডা গ্রামের মৃত. শামছুর রহমান ওরফে মো. সামছুল হক এর ছেলে সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি গত ৭ নভেম্বর সকালে বৈকারী ইউনিয়ন পরিষদের উত্তর পার্শ্বের চার শতক জমিতে ঘটে। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ভুক্তভোগী কাথন্ডা গ্রামের মৃত. শহর আলী সরদারের মেয়ে ও বাংলাদেশ জাসদ সাতক্ষীরা সদর উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি মো. রবিউল ইসলামের স্ত্রী মোছা. ফিরোজা খাতুন। বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে দেখা যায় ওই নালিশী তফশীলভুক্ত সম্পত্তিতে সাইফুল ইসলাম পাকা স্থাপনা নির্মাণ কাজ চলমান রেখেছে। তবে সাইফুল ইসলামের কাছে জমির মালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। এদিকে জনশ্রুতি ওই কাথন্ডা মৌজার হাল ১৯৭ দাগের নালিশী সম্পত্তি দীর্ঘ মেয়াদি বন্দোবস্ত পেতে বৈকারী ভূমি সহকারী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত আবেদন করেন সাইফুল ইসলামের ভাই মো. মহাসীন কবীর দুলু। অপরদিকে বৈকারী ইউপি চেয়ারম্যান আবু মো. মোস্তফা কামাল জানান, ওই নালিশী জমির মালিক সাইফুল ইসলাম গংরা, মৃত. শহর আলী সরদারের ওয়ারেশরা নয়। স্থানীয়দের প্রশ্ন-জমির মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা চলমান। এরপরেও সাইফুল ইসলামদের ওই নালিশী জমি হলে তার ভাই কেন দীর্ঘ মেয়াদী বন্দোবস্ত পেতে বৈকারী ভূমি সহকারী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত আবেদন করলেন। উপরিউক্ত ঘটনাটি অবশ্যই তদন্তের দাবি রাখে। সেই প্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানান তারা।
জানা যায়, সদরের কাথন্ডা মৌজার কাথন্ডা গ্রামের শহর আলী সরদার মৃত্যুবরণ করলে ওয়ারেশ সূত্রে সিএস ৩০৯, এসএ ৪৬৩ খতিয়ানে ও সাবেক ১৬০ দাগের ৪ শতক জমির মালিক তার সন্তানরা। অথচ ওই জমি জোরপূর্বক কাথন্ডা গ্রামের মৃত. শামছুর রহমান ওরফে মো. সামছুল হক এর ছেলে সাইফুল ইসলাম গংরা গত ২০২২ সালের ২৮ অক্টোবর দখল করতে উদ্যত হলে মৃত. শহর আলী সরদারের মেয়ে মোছা. ফিরোজা খাতুন বাদী হয়ে সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারী কার্য্যবিধি অনুযায়ী ১৪৫ ধারা মোতাবেক প্রতিকারের প্রার্থনা করেন। যার পিটিশন নং-২১৪৪/২২ (সাত.)। সেই প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ৩১ অক্টোবর ২০২২ ইংরেজি তারিখে ৩১৪১ নম্বর স্মারকে সাতক্ষীরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কে নালিশী জমির দখল বিষয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট দিবেন এবং পক্ষদ্বয়ের মধ্যে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি বিবাদী সাইফুল ইসলামকে ২০২৩ সালের ১১ জানুয়ারি আদালতে হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয়। এরপর সাতক্ষীরা থানার ওসি নালিশী জমির দখল বিষয়ে প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে এসআই মো. শাহজালালকে নির্দেশ প্রদান করেন। সেই নির্দেশনা মোতাবেক এসআই মো. শাহজালাল গত ১ নভেম্বর ২০২০ ইংরেজি তারিখে বাদী ও বিবাদীকে তফশীল ভুক্ত জমিতে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে একটি লিখিত নোটিশ প্রদান করেন। ওই নোটিশে তিনি উল্লেখ করেন বিজ্ঞ আদালতের আদেশ অমান্য করে শান্তি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরও জানা য়ায়, সদর উপজেলার কাথন্ডা মৌজার সিএস ৩০৯, এসএ ৪৬৩ খতিয়ানে ও সাবেক ১৬০ দাগের ৪ শতক জমিসহ অন্যান্য দাগের ০.২৭ একর একুনে ০.৩১ একর জমি আছমানী বিবি ২ আনা অংশের মালিক। আছমানী বিবি তার রেকর্ডীয় জমিতে দখলকারিনী থাকাকালে ১ম পুত্র শহর আলী সরদারের ওয়ারেশ রাখিয়া মৃতবরণ করেন। এরপরে শহর আলী সরদার ১ম পুত্র রুহুল আমিন সরদার ও ৩ কন্যা মোছা. রাজিয়া খাতুন, মোছা. ফিরোজা খাতুন এবং মোছা. রাশিদা খাতুনকে ওয়ারেশ রাখিয়া মৃত্যুবরণ করেন। ওয়ারেশ সূত্রে এসএ ৪৬৩ খতিয়ানের সাবেক ১৬০ দাগে চার শতক জমি প্রাপ্ত হয়ে শান্তিপূর্ণ ভোগদখলে মৃত. শহর আলী সরদারের পুত্র ও কন্যারা। তবে মাঠ জরীপে ভুলবশত ওই জমি বাংলাদেশ সরদারের পক্ষে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মালিক হয়। সেটি সংশোধনের জন্য মৃত. শহর আলী সরদারের পুত্র ও কন্যারা বাদী হয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, সাতক্ষীরা সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও বৈকারী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে বিবাদী করে বিজ্ঞ সাতক্ষীরা সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং-দে: ৬৪১/২১। মামলাটি শুনানিঅন্তে বিচারক ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের ১১ তারিখে পরবর্তী দিন ধার্য্য করেন।
বিষয়টি সম্পর্কে ভুক্তভোগী মোছা. ফিরোজা খাতুন জানান, ওয়ারেশসূত্রে ওই নালিশী সম্পত্তির মালিক আমরা। আমাদের জমি জোরপূর্বক দখল করার হুমকি দিলে আমি আদালতে ১৪৫ ধারায় মামলা করি। আদালতের বিচারক ওই জমিতে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ প্রদান করে। অথচ আদালতের ওই আদেশ অমান্য করে একই এলাকার মৃত. শামছুর রহমান ওরফে মো. সামছুল হক এর ছেলে সাইফুল ইসলাম ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের ইন্ধনে এবং স্থানীয় কতিপয় দালালদের যোগসাজসে ওই জমি দখল করে কয়েকদিন পাকা ঘর নির্মাণ কাজ শুরু করেছে এবং করছেন। তাদের কাজ করতে নিষেধ করলে মারপিট করতে উদ্যত হয়। এতে চরম নিরাপত্তাহীন ভুগছি। ঘটনাটি সাতক্ষীরা থানা পুলিশকে অবহিত করেছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। এমতাবস্থায় জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার সহ সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।