নড়াইলে বে-সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ মানেই যেন টাকার খেলা।আর খেলায় নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ,যার প্রভাব পড়ছে শিক্ষাঙ্গনে, বিগ্ন হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায়।স্কুল-কলেজের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০২১ অনুসারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনি পদে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর (ল্যাব থাকলে) আয়া,নিরাপত্তা কর্মী,পরিচ্ছন্নতা কর্মীর পদ সৃষ্টি করা হয় ।আর এসব পদে নিয়োগ স্থানীয় ম্যানেজিং কমিটির অধীনে হওয়ায় দূনীতি.স্বজন প্রীতি ও টাকার খেলার অভিযোগ রয়েছে বিস্তর।
নড়াইল সদর উপজেলার কালুখালী ধারিয়াঘাটা মাগুরা(কেডিএম) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহন কুমার দাস ও সভাপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন সাগরের বিরুদ্ধে ৩০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ৩ জন চতুর্থ শ্রেনির কর্মচারি নিয়োগের অভিযোগ পাওয়া গেছে।অবৈধ এ নিয়োগ বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী।
মানব বন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, ৩০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে আয়া পদে সীমা খাতুন,নৈশ প্রহরী পদে মনিরুল(তানজিদ) বিশ্বাস,পরিচ্ছন্নতা পদে রকিবুল ইসলামকে চাকুরী দেওয়া হবে আমরা আগে থেকেই শুনেছিলাম। প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি যোগসাজসে ঐ ৩ জন প্রার্থীকে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম বানিয়েছে।
মাগুরা গ্রামের মোঃ আমিন অভিযোগে বলেন, এ নিয়োগের শুরু থেকেই দূনীতি শুরু হয়েছে।গত জুন মাসের ১৩ ও ১৪ তারিখে বিজ্ঞপ্তি দেওযা হলেও ঐ তারিখের পত্রিকা গুলো নড়াইলে পাওয়া যায়নি, ফলে অনেকে আবেদন করতে পারিনি।এছাড়া নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করতে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্টেট চেয়ে ২৭ জুন জেলা প্রশাসক কাছে আবেদন করেছিলাম।কিন্ত এত কিছুর পরেও তারা দূনীতির মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালিয়া যাচ্ছে। এ বিষয়ে ১৮ অক্টোবর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অভিবাবক সদস্য মোঃ ইকবাল হোসেন বলেন,নিয়োগের ব্যাপারে আমরা কিছু জানি না,প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন সাগর নিজেদের ইচ্ছামত সব কিছু করে যাচ্ছে।আমরা প্রধান শিক্ষকের কাছে নিয়োগ সংক্রান্ত রেজুলেশানসহ কোন কাগজপত্র দেখাচ্ছে না।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক বিদ্যুৎসাহী সদস্য মোঃ তাজুল ইসলাম অভিযোগে বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহন কুমার দাস ও সভাপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন সাগরের বিরুদ্ধে ৩০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ৩ জন চতুর্থ শ্রেনির কর্মচারি নিয়োগ দিচ্ছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এই নিয়োগ বাতিল করে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নিয়োগের দাবি জানাই।
মাইজপাড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সভাপতি মোঃ হাবিবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন,পরিচ্ছন্নতা পদে রকিবুল ইসলাম জমি বিক্রয় করে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষককে টাকা দিয়ে চাকুরী নিয়েছে।আমি সেই জমি বেচা কোনার সাথে ছিলাম।
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল্লা আল মামুন বলেন, আমরা যখন শুনলাম ৮লাখ/১০লাখ টাকার বিনিময়ে দূনীতি করে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে তখন অভিবাবকরা অভিযোগ দিলেও প্রধান শিক্ষক টাকা খেয়ে দূনীতির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহন কুমার দাস অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ম মেনে বিধি মোতাবেক স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে হচ্ছে।এ সময় সংবাদ কর্মীরা প্রধান শিক্ষকের কাছে নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র আমার বাড়িতে রয়েছে।
৩০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ৩ জন চতুর্থ শ্রেনির কর্মচারি নিয়োগের অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন সাগর বলেন, এখানে কোন প্রকার টাকার লেনদেন হয়নি।পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্টন্ন করা হচ্ছে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ ছায়েদুর রহমান কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কেডিএম স্কুলের নিয়োগের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর প্রধান শিক্ষককে নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রাখতে নির্দেশ দিয়েছি। এ বিষয়ে তদন্তে করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ,শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকার এনটিআরসি এর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দিলেও প্রশাসন্কি ও ৩য়,৪র্থ শ্রেণির পদের নিয়োগ স্থানীয় ম্যানেজিং কমিটির অধীনে রয়েছে। নড়াইল জেলার তুলারামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়,সিংঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়,টাবরা নবকৃষœ মাধ্যমিক বিদ্যালয়,জুড়ালিয়া আলিম মাদ্রাসাসহ অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে দুনীতি,স্বজন প্রীতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন,মানব বন্ধন, আন্দোলন,প্রতিবাদ সমাবেশসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে।