যখন পৃথিবীর বুকে চলছিল অন্যায় অবিচার জুলুম অত্যাচার আর নির্যাতনে মশগুল ছিল সেকালে মানুষ, আইয়্যামে জাহিলিয়াতে পরিণত হয়েছিলো তখনকার পৃথিবী।
অতপর আঁধার ছিঁড়ে আলোর রবি উদিত হলো দূর আরবে আব্দুল্লাহর ঘরে মা আমেনার কোলে ৫৭০খ্রিষ্টাব্দে।
তখন মুছতে থাকলো সকল অন্যায় অবিচার, এভাবে প্রতিষ্ঠিত হলো সাম্য-শান্তি আর সু-বিচার।সেকালের মানুষ পরিণত হলো সোনার মানুষে।
পৃথিবীর ইতিহাসে মানবচরিত্রে একমাত্র অনন্য ব্যক্তিত্ব খাতামুন নাবিয়্যিন, সাইয়্যিদুল মুরসালিন,রাহমাতুললিল আলামিন,হযরত মুহাম্মদ সা.। যার প্রতিটি আচার-আচরণ প্রতিটি অভিব্যক্তি ও বাণী বিশ্বস্ত বর্ণনার মাধ্যমে ধরে রাখা হয়েছে, শুধু তাইনা তার সাথে সাথে রাসুল সা.এর চেহারা মুবারকের অবয়বও সাহাবায়ে কেরাম রাযি.বর্ণনা দিয়ে গেছেন।
বুখারী,মুসলিম,তিরমিযী, মসনদে আহমদ কিতাবে,রাসুল সা.এর আকৃতি ও শামায়েলের কিতাবাদীতে এভাবে পাওয়া যায়, যে রাসুল সা.এর চেহারা মুবারক ছিল অপূর্ব।
জাবির ইবনে সামুরা রাযি. কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, রাসুল সা.এর চেহারা কি খোলা তরবারীর মতো ঝলমল করতো? তিনি বলেন না পূর্ণিমার রাতের চাঁদের মতো চমকাতো।
তিনি আরও বলেন আমি এক পূর্ণিমার রজনীতে একবার রাসুলের দিকে আরেকবার পূর্ণিমার চাঁদের দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম, রাসূল সা.এর চেহারার কাছে পূর্ণিমার চাঁদ কে অনেক টা দীপ্তিহীন মনে হতো। সুবহানাল্লাহ।
রাসুল সা. এর মুখ ছিল প্রশস্ত, যার কারণে তাঁর মুখ থেকে ভরাট শব্দ বের হতো।
রাসুল সা.কখনও অস্পষ্ট ও অসম্পূর্ণ কথা বলেন নি।
তিনি ছিলেন স্পষ্টভাষী রাসূল সা.এর কালো ডাগর বিশিষ্ট চোখ ছিল, হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. হতে বর্ণিত রাসুল সা. এর ঠোঁট ছিল সদ্যফোঁটা ফুলের পাপড়ীর মতো।
তিনি যখন কথা বলতেন তার সামনের দাঁত থেকে নূরের ঝিলিক বের হতো।
রাসূল সা.এর নাসিকা মুবারক ছিল স্বাভাবিক মানের, তবে নূরের তাজাল্লির কারণে উঁচু মনে হতো। রাসুল সা. জাঁদুমাখা কণ্ঠের অধিকারী ছিলেন, তার কথাও সুরে থাকতো স্নেহ মায়া-মমতা মিশ্রিত।
তাইতো তার কথায় ও আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মানুষ ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করে নিজেদের সোনার মানুষে রুপান্তরিত করেছিল।
হযরত আনাস রাযি.বলেন রাসুল সা.এর চুল মুবারক ছিল নরম ও মুলায়েম এবং তাঁর দাড়ি এতো ঘন ছিলো যে,তাঁর বক্ষদেশ আচ্ছাদিত হয়ে যেতো।
তিরমিযী শরীফে এসেছে, রাসুল সা.এর দাড়ি মুবারক মুটি দিয়ে ধরতেন এবং তিনি গোফ কর্তন করতেন।
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. হতে বর্ণিত রাসুল সা.এর গর্দান মনে হতো রৌপ্য দিয়ে তৈরি করা, যেনো কোনো শিল্পী আলতো ভাবে নিজের হাতে কোনো ছঁবি একেঁছেন।
রাসুল সা. এর বক্ষও পেঠ মুবারক প্রায় সমান ছিল।
হযরত উম্মে হানি রাযি.বর্ণনা করেন আমি রাসুলের পেঠ দেখেছি তা সুন্দর ও মসৃণ ছিল।
হযরত আবু হুরায়রা বলেন রাসূল সা.এর স্কন্দ দ্বয়ের মধ্যখানে উঁচু মাংস বিশেষ খতমে নবুওয়াত ছিল এবং হুজুর সা.এর পৃষ্ঠদেশ বিগলিত রৌপ্যের মতো ছিল।
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাযি.বলেন রাসুল সা.মধ্যম আকৃতির ছিলেন তিনি যখন সবার সাথে হাটতেন তখন তাঁকে সব’চে উঁচু মনে হতো।
রাসুল সা. হাঠার সময় ঝুঁকে হাটতেন মনে হতো ফুলের ভারে ফুল গাছ সামনের দিকে ঝুঁকে আছে।
রাসুলের পায়ে বেশি মাংসল এবং গোড়ালি সরু ছিল। পরিশেষে রাসুল সা.ছিলেন পৃথিবীর মধ্যে অনন্য ব্যক্তি তার চেহারার নিখুঁত বর্ণনাও চুলচেরা বিশ্লেষণ করলেও পূর্ণতা পাবেনা।
সুরা কলমের ৬৮নং আয়াতে বলা হয়েছে, পৃথিবীর মধ্যে রাসুল সা. ছিলেন উত্তম চরিত্রের অধিকারী।
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাযি. কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল রাসুল সা.কেমন ছিলেন? তিনি বললেন হুবহু কোরআন ছিল তার চরিত্র।
রাসুল সা.অনাড়ম্বর জীবনযাপন করতেন, যেমনটা ছিলেন ইসলামের শুরুর দিকে, জীবনের অন্তিম মূহুর্ত পর্যন্ত এভাবেই কাটিয়ে দিয়েছিলেন।
রাষ্ট্রপ্রধান হওয়া সত্ত্বেও তিনি বিলাসিতা জীবনযাপন করেননি এবং করতে রাজিও হননি।
তিনি ছিলেন ধৈর্যের পাহাড়। নিজের ব্যক্তিগত শত্রুতায় কারো কাছ থেকে কখনও প্রতিশোধ নেন নি।ক্ষমা করা ছিল তাঁর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যখন তায়েফ বাসী হুজুর সা. কে পাথর মেরে রক্তাক্ত করে পাগল বলছিল, তখনও রাসুল সা. তাদের বদদোয়া দেননি, মক্কার বড় বড় নেতারা যখন মাথানত করে রাসুলের সামনে দাঁড়িয়েছিল রাসুল সা. বলেন আমার কাছ থেকে তোমরা কেমন আচরণ প্রত্যাশা করো? তারা বললো হে মুহাম্মাদ, তুমি তো আমাদের ছেলে,আমাদের ভ্রাত্রা-পুত্র,তোমাকে আমরা সব-সময় ক্ষমা কারীদের দলে পেয়েছি। রাসুল সা.বলেন,আমি তোমাদের সাথে সে রকম আচরণ করবো যেমনটা হযরত ইউসুফ আ. তাঁর ভাইদের সাথে করেছিলেন। যাও আজ তোমরা মুক্ত।
মহানুভবতা,উদারতা ছিল রাসুল সা.এর অন্যতম গুণ তাঁর বিশ্বস্ততাও আমানতদারিতে মুগ্ধ হয়ে মক্কার সর্বস্তরের লোক তাঁকে আল আমিন উপাধি ঘোষণা করেছিলো।
আল্লাহ বলেন এখানেই শেষ নয় তিনি হলেন সায়্যিদুল মুরসালিন,রাহমাতুললিল আলামিন। রাসুলের আদর্শেই পরিচালনা হোক আমাদের জীবন। আল্লাহ সবাইকে কবুল করুন।আমিন।
লেখক:
ইকরামুল হক জাবের
সহকারী সম্পাদক,
সীমান্তের আহবান।