আজকের শিশু আগামীদিনের ভবিষ্যত, আর এই শিশুর সঠিক বিকাশ সাধনই শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য। বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য হলো শিশুর শারীরিক,মানসিক,সামাজিক,নৈতিক,মানবিক,আধ্যাত্মিক ও আবেগ-অনুভ’তির বিকাশ সাধন এবং তাদের দেশাত্ববোধে,বিজ্ঞানমনস্কতায়,সৃজনশীলতায় ও উন্নত জীবনের
স্বপ্নদর্শনে উদ্ধুদ্ধ করা এই লক্ষ্যকে কেন্দ্র কেন্দ্র করে ১ম-৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ভ প্রাথমিক পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা হয়। শিক্ষক পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তুকে শিক্ষার্থীরা যাতে সহজ ভাবে বুঝতে পারে তার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। শিশুরা শিখে বিভিন্ন ভাবে। তবে তার শিক্ষার একটি বড় অংশজুড়ে থাকে তার পরিবার ও তার চারপাশের পারিপার্শ্বিক অবস্থা।
শিক্ষা যদি সঠিক পরিবেশে সুষ্ঠুরূপে বিকশিত হয় তবে অবশ্যই মানব শিশু মানব সম্পদ রূপে গড়ে উঠবে। শিশুকে বুঝতে হবে লেখাপড়ার সুযোগ তার অধিকার। লেখা-পড়া মনদিয়ে করা তার কর্তব্য। লেখা-পড়া আয়ত্ব নয় আত্মস্ত করতে হবে।
আমরা একটি বড় গর্তে এসে আটকে গেছি। শুধু ফলাফল দিয়েই শিক্ষার মূল্যায়ন করি, করতে চাই। আর এখানেই শিক্ষার লক্ষ্য প্রচন্ডরূপে ব্যর্থ হয়।শিশুকে সঠিক শিক্ষা দিতে হলে পরিবার,সমাজ,বিদ্যালয়ে শিশুর শিখন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া শিক্ষা কোন উদ্ভিদ নয় যে তার ফল না ধরলে তার মান ভাল হবেনা। বরং শিক্ষা হলো সুরভিত রঙিন ফুল যা বিকশিত হবে, হতে দিতে হবে। যার বিকাশ হবে সমগ্র জীবনব্যাপী। শিশুকে প্রকৃত শিক্ষাদান করতে হলে তার মধ্যে থাকা আত্মবিশ্বাসকে জাগিয়ে তোলতে হবে। শিশু যে নতুনের সাথে পরিচিত হতে যাচ্ছে সেখানে আমি পারবই এই বিশ্বাস জরুরী। একটি শিশু পরীক্ষায় কত বেশি নম্বর পেল তার রোল কত হলো এটাই একটি শিশুর সঠিক যোগ্যতার মাপকাঠি হতে পারেনা। আমাদের এখান থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। শিশুকে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখাতে গিয়ে আমরা যদি শিশুকে বলি ভালো করে পড়, বড় হবে, বড় চাকুরী করবে, গাড়ীতে চড়বে, দেশ-বিদেশ ঘুরে-বেড়াবে, বড় বাড়ি হবে, সুখে-শান্তিতে থাকবে। আর এ পথ দিয়ে সুন্দর মানব সম্পদটিকে কুৎসিত দানব রূপে প্রতিষ্ঠা করবে। যার শিক্ষা কোন আলো না আগুনে সব পুড়িয়ে খাবে।
শিশুকে শিক্ষা দিতে হবে কোন লোভ বা কু-শিক্ষা নয়। শিশুকে শিখাতে হবে মানবিক হতে কিভাবে অসহায়দের সহায় হয়ে উঠা যায়। শিশুদের দেশকে ভালবাসতে শিখাতে হবে। ব্যক্তি স্বার্থ থেকে দেশ বড় এই বোধ জাগ্রত করতে হবে। শিশুদের তার পরিবেশের প্রতি যতœশীল হতে শেখাতে হবে। প্রকৃতির ভারসাম্যতায় তার করণীয় সম্পর্কে জানাতে হবে। বড়দের সম্মান করতে ও ছোটদের স্নেহ করতে শেখাতে হবে। যা আমার নয় সেটা আমি নিতে পারি না তা শিশুকে জানাতে হবে। নিজের কাজ নিজে করতে শেখাতে হবে। এই পৃথিবীতে তার জন্মের একটি কারণ আছে ’’ সেটি হচ্ছে এই সুন্দও পৃথিবীকে আরও সুন্দর করে তুলতে সর্বদা প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।”
শিশুকে তার পরিবারের প্রতিটি সদস্যের প্রতি কি দায়িত্ব তা শেখান, শিশুকে সহমর্মিতা, সহিঞ্চুতা,ভ্রাতৃত্ববোধ. শ্রদ্ধা, স্নেহ,মমতা ও ভালবাসতে শেখান।
আজকের শিশু আগামীর বাংলাদেশ। তাই শুধু লেখা-পড়া নয় আপনার শিশুকে সর্বোচ্চ নম্বর নিশ্চিত করছে ভালো কিন্তু লক্ষ্য করুন সে যেন আতœকেন্দ্রিক হয়ে না উঠে।শুধু লেখা-পড়া ভালো নয় আমরা চাই আমাদের শিশুরা ভাল মানুষ হয়ে উঠুক। তারা টাকা তৈরির মেশিন নয় রক্ত-মাংসের মানবিক মানুষ হউক। যার হৃদয় দেশ,সমাজ,পরিবার এর সদস্যদের প্রতি দায়িত্বশীল হবে। যে তার ছোট কাজ দিয়ে বড় উপকার করবে। আমাদের আগামী প্রজন্মের শিশুরা ভালো মানুষ হিসাবে বেড়ে উঠুক এই আমাদের প্রত্যাশা।
লুৎফুন্নাহার
বিএ,বিএড,এমএড
প্রধান শিক্ষক
৩৬ নং আতাদী সঃপ্রাঃবিদ্যাঃ
আড়াইহাজার,নারায়নগঞ্জ।