কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরধরে এক স্কুল শিক্ষক ও তার সহোদরের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার অভিযোগ উঠেছে। ওই মামলায় স্কুল শিক্ষক সরওয়ার আলম (৩৫) আদালতে জামিন আবেদন করলে আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন। এই ঘটনায় থানায় পাল্টা পাল্টি মামলা হয়েছে। তবে স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে করা মামলায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধির ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া গেছে।
রোববার (২১ আগষ্ট) দুপুরে আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন। এর আগে আদালত ওই মামলায় তার সহোদর বেলাল হোসেনের জামিন মঞ্জুর করেন।
গত ১৩ আগষ্ট কুতুবদিয়া বড় ঘোপ ইউনিয়নের পুতুন আলীর ছেলে এমতাজ উদ্দীন বাদী হয়ে বড় ঘোপ ইউনিয়নের উত্তর বড় ঘোপ এলাকার মৃত আবুল কালামের ছেলে সরওয়ার আলম (৩৫) ও বেলাল হোসেনকে (৪৫) আসামী করে কুতুবদিয়া থানায় মামলাটি মামলা দায়ের করেন। যার (মামলা নং- ৮/ ১৩-৮-২০২২ ইং)
মামলার এজাহার সূত্রে জানাযায়, গেলো ১০ আগষ্ট বিএস খতিয়ান নং- ১৩৯৬, বি এস দাগ নং- ১০২৫ এর ৪.৮০ একর জমি সৈকত নামের এক ব্যক্তিকে বিক্রি করা হয়। ১২ আগষ্ট উক্ত জমির দখল বুঝিয়ে দিতে গেলে সরওয়ার আলম (৩৫) ও বেলাল হোসেন (৪৫) আজ্ঞাত নাম লোকজন সহ ঘটনা স্থলে এসে হামলা চালায়। এসময় সরওয়ার কিরিচের দিয়ে মকবুল হোসেনের ডান হাতে আঙ্গুলে কুপ দেয়। তার সাথে অপরাপর ব্যক্তিরা লাটিসোটা নিয়ে মারাত্বক ভাবে হামলা চালায় এবং নগদ অর্থ ছিনিয়ে নেয়।
তার পরের দিন ১৪ আগষ্ট বেলাল হোসেনের স্ত্রী ইশরাত জাহান ঈশা বাদী হয়ে একই এলাকার গুরা চাঁন উরুফে পুতুন আলীর ছেলে এমতাজ উদ্দীন (৪৫), মকবুল হোসাইন (৩৮), মো. ইউনুছ (৩৩) মৃত জোনাব আলীর ছেলে মো. সৈকত (২২) কে আসামী করে কুতুবদিয়া থানায় একটি পাল্টা মামলা দায়ের করেন। যার (মামলা নং-৯/১৪-৮-২০২২ইং)।
উক্ত মামলার এজাহার সুত্রে জানা যায়, বিএস খতিয়ান নং- ১৩৯৬, বি এস দাগ নং- ১০২৫ এর ১১ শতক জমির মালিক আবুল কালাম মারা যাওয়ার পর পুতুন আলীর ছেলেরা উক্ত তফসিলের জমি দখলের চেষ্টা করে। এই ঘটনার সুরাহা চেয়ে অভিযোগটি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। বিষয়টি আমলে নিয়ে আদালত উক্ত জমিতে স্থিতি বজায় রাখার নির্দেশ প্রদান করেন। আদালতের নির্দেশ অমান্য করে গত ১২ আগষ্ট গুরা চাঁন উরুফে পুতুন আলীর ছেলে এমতাজ উদ্দীন, মকবুল হোসাইন, মো. ইউনুছ, মৃত জোনাব আলীর ছেলে মো. সৈকত দেশী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে জমি দখল করতে আসে। এসময় বাঁধা প্রদান করলে সরওয়ার আলমের উপর একযোগে হামলা চালায়। এতে সরওয়ার আলমের নিচের চোয়ালের একটি দাঁত ভেঙ্গে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম হয়।
মামলার বাদী ঈশার দাবী, কাদের উপর কারা হামলা করেছে সেটা ঘটনাস্থলের আশেপাশে বসবাসরত লোকজন দেখেছেন। আসামীরা আমার দেবরের দাঁত ভেঙ্গে দেয়ার অপরাধ থেকে বাঁচতে নিজের শরীরে নিজে আঘাত করে উলটো আমার স্বামী ও দেবরকে ফাঁসাতে মিথ্যা মামলার আশ্রয় নিয়েছে।
এই ঘটনায় কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর বড়ঘোপ ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (প্যানেল চেয়ারম্যান-২) মাঈন উদ্দীন হাসেম মিন্টু ‘বার্তা বাজার’কে জানান, ঘটনার দিন সকালে সরওয়ার ঘটনা স্থলে যাওয়ার পথে আমার সাথে দেখা হয়েছিলো। তখন তাকে খুবই সাদামাটা ভাবে যেতে দেখেছি। সে সময় তিনি আমাকে এমতাজ উদ্দীন জমি দখল করতে এসেছে বলে জানিয়েছিলেন।
তিনি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে আরো জানান, সরওয়ার জমি দখলে বাঁধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এতে কোন দেশী ধারালো অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবহার ঘটেনি। এছাড়া ঘটনার পরপরই এমতাজ উদ্দীন ও তার ভাইদের স্থানীয় বাজারে সুস্থ স্বাভাবিক দেখেছি।
কুতুবদিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ওমর হায়দার জানান, এই ঘটনায় উভয় পক্ষের লিখিত অভিযোগ পেয়ে নিয়মিত মামলা আকারে গ্রহন করা হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তাকে সঠিক ভাবে তদন্ত করে মামলার পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।