নওগাঁ জেলার মান্দায় নতুন কমিটিতে আসতে না পারায় বিভিন্নভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে জাফরাবাদ আদর্শ দাখিল মাদ্রসার সাবেক সভাপতি সেফাতুল্যা খানের বিরুদ্ধে। তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের প্রাণনাশসহ হুমকির কারণে বেশ কিছুদিন ধরে প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছেন না ওই মাদ্রাসার সুপার ইসমাইল হোসেন।
কমিটির দ্বন্দ্বে বর্তমানে মাদ্রাসাটিতে হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে। এতে মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম। স্থবিরতা নেমে এসেছে দাপ্তরিক কাজেও। এসব ঘটনায় মাদ্রাসা সুপার ইসমাইল হোসেন বাদী হয়ে চারজনের বিরুদ্ধে গত ২১ জুলাই মান্দা থানায় অভিযোগ করেন।
অভিযুক্তরা হলেন, জাফরাবাদ আদর্শ দাখিল মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি ও কাঁশোপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সেফাতুল্যা খান, জাফরাবাদ গ্রামের আজিজার রহমান, মোজাম্মেল হক ও ইয়াকুব আলী।
মাদ্রাসার সুপার ইসমাইল হোসেন বলেন, ২০২১ সালের ৭ মে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু করোনাকালিন পরিস্থিতিতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। এসময় এডহক কমিটি দিয়ে মাদ্রাসার যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল। সকল বিধি মেনে আব্দুল মান্নানকে সভাপতি করে এ বছরের ১১ জানুয়ারি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মাদ্রাসার সুপার আরও বলেন, এরপর থেকে মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি সেফাতুল্যা খান বিরোধীতা শুরু করেন। নবগঠিত কমিটির সদস্যদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে পদত্যাগ করানোর চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে তাঁর সাঙ্গ-পাঙ্গদের লেলিয়ে দিয়ে প্রকাশ্যে আমাকে প্রাণনাশসহ মারধরের হুমকি দিয়ে আসছেন।
মাদ্রাসা সুপার অভিযোগ করে বলেন, তাঁদের অব্যাহত হুমকির কারণে আমি মাদ্রাসায় যেতে পারছি না। চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছি।
মাদ্রাসা কমিটির অভিভাবক সদস্য জাবের আলী বলেন, মাদ্রাসা কমিটির সাবেক সভাপতি সেফাতুল্যা খান অফিস সহকারী পদে একজনকে নিয়োগ দিয়ে মোটা অংকের বাণিজ্য করেছেন। এছাড়া নিরাপত্তাকর্মী ও আয়া পদে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে দুই প্রার্থীর কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন অনেক টাকা। কিন্তু কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় ওইসব পদে আর নিয়োগ দিতে পারেননি। এসব অভিযোগের কারণে নতুন কমিটিতে তাঁকে সভাপতি করা হয়নি।
অভিভাবক সদস্য জাবের আলী অভিযোগ করে বলেন, ‘কমিটির সভাপতি হতে না পেরে সেফাতুল্যা খান মাদ্রাসায় বিভিন্নভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন। তাঁর হুমকির কারণে মাদ্রাসার সুপারসহ কয়েকজন শিক্ষক প্রতিষ্ঠানে আসতে পারছেন না। কমিটি থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছি এমন কাগজে জোর করে আমার স্বাক্ষর নেওয়ারও চেষ্টা করেছিলেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, মাদ্রাসার সুপার প্রতিষ্ঠানে না আসায় অন্য শিক্ষকেরাও নিয়মিত আসছেন না। আসলেও পাঠদান না দিয়ে এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করে চলে যাচ্ছেন। এতে করে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও অনেক কমে গেছে।
মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি সেফাতুল্যা খান নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মাদ্রাসা সুপার ইসমাইল হোসেন নিজের পছন্দের লোক দিয়ে পকেট কমিটি গঠন করেছে। এ কারণে এলকাবাসীর তোপের মুখে তিনি মাদ্রাসায় যেতে পারছেন না। সুপারকে প্রাণনাশসহ হুমকি দেওয়ার অভিযোগটিও অস্বীকার করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন, এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তের জন্য থানার উপপরিদর্শক হাবিবুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু বাক্কার সিদ্দিক বলেন, মাদ্রাসা সুপার ইসমাইল হোসেন প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছেন এমন বিষয় আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।