রাজশাহীর বাগমারায় নিজ কার্যালয়ে ডেকে ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা সম্প্রতি রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ২ নম্বর আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে বাগমারা থানাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম। তারই স্কুলের দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর দারিদ্র্যতার সুযোগ নিয়ে প্রাইভেট পড়ার খরচ, বই কিনে দেওয়াসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় বহনের আশ্বাস দিয়ে তার কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে ছাত্রীটির স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেওয়া শুরু করেন। এর ফলে ওই ছাত্রী প্রতিবাদ করলে প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম আরও বেপরোয়া হয়ে পড়েন।
একপর্যায়ে তিনি ওই ছাত্রীকে আরও দামি উপহারসামগ্রী দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে জোরপূর্বক শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন। এর ফলে ওই ছাত্রী মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে এবং স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। এতে প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম ওই ছাত্রীর প্রতি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি মোবাইল ফোনে ছাত্রীর পিতাকে জানিয়ে দেন সে স্কুলে না আসলে তার উপবৃত্তি বন্ধ হওয়াসহ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা সমস্যা হবে।
পরে ছাত্রীটির দরিদ্র কৃষক পিতা মেয়েকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আবারো স্কুলে পাঠানো শুরু করেন। সম্প্রতি ওই ছাত্রী আবারো স্কুলে নিয়মিত আসতে থাকলে প্রধান শিক্ষক স্কুল শেষে ছাত্রীকে আবারো কার্যালয়ে ডেকে তার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে জোরাজুরি শুরু করলে ছাত্রী সেখানে থেকে বের হয়ে তার পিতা-মাতাকে বিষয়টি খুলে বলেন।
পরে ছাত্রীর পিতা বিষয়টি মোবাইল ফোনে প্রধান শিক্ষককে জানালে তিনি অস্বীকার করেন এবং তার নামে এ ধরনের বদনাম ছড়ালে ভয়াবহ পরিণতি হবে বলে শাসান। নিরুপায় হয়ে ছাত্রীটির পিতা বিষয়টি বাগমারা থানায় জানিয়ে তাদের সহায়তা চাইলে পুলিশ এমন অভিযোগ নিতে অপারগতা প্রকাশ করে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেয়। এরপর ওই ছাত্রীর বাবা রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতে মামলা দায়ের করেন।
ওই ছাত্রীর বাবা জানান, তার মেয়েকে যৌন হয়রানি করার বিষয়ে মামালা দায়েরের পর থেকে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছেন। বিভিন্ন লোক মারফত তাকে মামলাটি তুলে নেওয়ার জন্য ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চলেছেন প্রধান শিক্ষক।
ওই ছাত্রীর বাবা বলেন, এখন বাড়ি থেকে বের হতে ভয় পাই। বিচার চাওয়ার পর থেকে সবসময় হুমকির মুখে আছি। আমার মেয়ের স্কুল ও লেখাপড়া বন্ধ। সামনে তার পরীক্ষা। কী হবে কিছুই জানি না।
তবে প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওই ছাত্রীটি স্কুলে এসে বাইরের এক ছেলেকে নিয়ে আড্ডা দেয় এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাইরে কাটাত। সে স্কুলের শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট করত, যা অন্য ছাত্রীরা প্রায়ই অভিযোগ করত। এসব বিষয়ে তাকেসহ তার পরিবারকে সতর্ক করা হলে তারা আমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
এ ব্যাপারে বাগমারা থানার ওসি রবিউল ইসলাম বলেন, আমি সবেমাত্র এ থানায় যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে আদালতে মামলা হয়ে থাকলে এবং আমাদের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হলে আমরা তা যথাযথভাবে পালন করব।