রাজশাহী জেলার বাগমারায় জামাইকে মোবাইল ফোন কিনে না দেওয়ায় তার মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। রাতে কোনও পরিবহন না পাওয়ায় ১৮ কিলোমিটার ভ্যান চালিয়ে মেয়ের মরদেহ পৌঁছে দিয়েছেন বাবা। বাগমারা উপজেলার যোগিপাড়া ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা ভ্যানচালক আবদুল মালেক তার মেয়ের মরদেহ থানায় পৌঁছে দেন। তার অভিযোগ, বিয়ের পর জামাইকে মোবাইল ফোন কিনে না দেওয়ায় তার মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় বাগমারা থানায় হত্যা মামলাও করেছেন তিনি।
সোমবার (১৮ এপ্রিল) রাতে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশের নির্দেশে মৃত মেয়ের মরদেহ ১৮ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে বাগমারা থানায় পৌঁছে দেন মালেক। মঙ্গলবার দুপুরে মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে জামাই, মেয়ের শ্বশুর ও শাশুড়িকে আসামি করে থানায় মামলা করা হয়।
ভ্যানচালক আবদুল মালেকের মারা যাওয়া মেয়ের নাম হোসনেয়ারা খাতুন। তিনি যোগিপাড়া ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা। সাত মাস আগে পাশের বীরকুৎসা গ্রামের জাহিদুল ইসলামের ছেলে রানা ইসলামের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেন। এদিকে, মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দাবি, অভিমানে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে হোসনেয়ারা খাতুন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিয়ের পর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। সোমবার সন্ধ্যায় শ্বশুরবাড়ি থেকে ওই গৃহবধূর লাঁশ উদ্ধার করে পুলিশ। তখন পারিবারিক অশান্তির কারণে হোসনেয়ারা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে স্বামীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। অন্যদিকে, গৃহবধূর বাবা অভিযোগ করেন, তার মেয়েকে পিটিয়ে হত্যার পর এলাকায় আত্মহত্যার খবর প্রচার করা হয়েছে। এ নিয়ে জটিলতা তৈরি হলে লাঁশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করতে সময় লেগে যায় পুলিশের।
পুলিশ জানায়, ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে পাঠাতে থানায় নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। তখন নিজে ভ্যান চালিয়ে মেয়ের লাঁশ রাত সাড়ে ১১টার দিকে থানায় পৌঁছে দেন আবদুল মালেক। মঙ্গলবার সকালে জেলা পুলিশের লাঁশবহনকারী গাড়িতে করে হোসনেয়ারার মরদেহ রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। দুপুরে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
আবদুল মালেক দাবি করেন, ঈদের আগে জামাই একটি স্মার্ট ফোন চেয়েছিল। কিন্তু সেটি দিতে না পারায় সে ও তার পরিবারের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। এ নিয়ে মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পরে আত্মহত্যার খবর প্রচার করা হয়। মেয়ের মরদেহ ঘরের বারান্দায় ফেলে জামাই ও তার মা-বাবা পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে বাগমারা থানার ইনচার্জ (ওসি) রবিউল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে থানায় একটি নিয়মিত মামলা হয়েছে। মামলায় ওই গৃহবধূর স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে তৎপরতা চলছে।