রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ীতে সড়ক সংস্কার কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে স্থানীয় যুবলীগ নেতাকে মারপিট করেছে ঠিকাদার ও তার লোকজন। শনিবার দুপুরে উপজেলার ছয়ঘাটি কালিতলা সামশুলের ভাটার সামনে এ ঘটনা ঘটে।
উপজেলায় ছয়ঘাটি থেকে বিয়ানাবোনা সড়কে সংস্কারের কাজে অনিয়মের প্রতিবাদ জানান উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামীম রেজা রাজু। এ সড়ক সংস্কারে নিম্মমানের পুরাতন পাথর ও খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছিল। এছাড়াও পরিষ্কার না করে ময়লা-আবর্জনার মধ্য দিয়েই পাথর ও পিচ ব্যবহার করছিল ঠিকাদার।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার দুপুরে সড়ক সংস্কার কাজে অনিয়মের প্রতিবাদ করে স্থানীয় লোকজন। এ সময় সেখানে রাজু গিয়ে বিষয়টি গোদাগাড়ী উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশলীকে জানায় এবং কাজ বন্ধ রাখতে বলে। এ নিয়ে রাজুসহ স্থানীয়দের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে ঠিকাদার ও তার লোকজন। এক পর্যায়ে ঠিকাদার ও তার লোকজন রাজুকে ধরে মারপিট করে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের ছয়ঘাটি মোড় থেকে বিয়ানাবোনা রাস্তায় প্রায় আড়াই কিলোমিটার রাস্তার মেরামত কাজ চলছে। ৭১ লাখ টাকার এই সংস্কার কাজ করছেন সেলিম রেজা নামের এক ঠিকাদার।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, শুরু থেকেই ওই রাস্তার উঠানো পুরাতন পাথর ও খুয়া মেশিন দিয়ে ভেঙ্গে ও মিশিয়ে পুনরায় ব্যবহার করা হচ্ছে। রাস্তায় কাজে এসব সামগ্রী ব্যবহারে মাটিসহ অনেক ময়লা আবর্জনায় ভরপুর হয়ে আছে। শনিবার (২ জুলাই) রাজুসহ স্থানীয়রা এসব নিম্নমান কাজের প্রতিবাদ করতে গেলে ঠিকাদারের লোকজন রাজুকে মারধরও করে। এতে করে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজান ছড়িয়ে পরে।
রাজু জানান, এই রাস্তাটিতে সব কাজই খারাপ হচ্ছে। রাস্তায় পূর্বে ব্যবহিত পুরাতন পাথর ও খোয়া শামসুলের পুরাতন ইটভাটার মধ্যে নিয়ে গিয়ে গোপনে মিশিয়ে রাস্তায় ব্যবহার করা হচ্ছে । আমরা এলাকাবাসী সেখানে গিয়ে এসব ব্যবহার করতে নিষেধ করি। পরে ঠিকাদার আমার উপর চাড়াও হয়ে মারধর করেছে বলে অভিযোগ করেন।
রাস্তায় কাজে নিয়োজিত রানা নামের একজন শ্রমিক বলেন, আমরা ঠিকাদারের নির্দেশে এসব পুরাতন ইট-পাথর খোয়া ব্যবহার করেছি। তিন গাড়ী আনা হয়েছিলো এর মধ্যে কয়েকগাড়ী ব্যবহার করা হয়েছে বাকিগুলো পাশেই রাখা আছে।
রাস্তা মেরামতের কাজ দেখাশোনার দায়িত্বে নিয়োজিত গোদাগাড়ী উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলের উপ-সহকারি প্রকৌশলী শাহাদত হোসেন রিপন বলেন, এখানের কোন কাজে পুরাতন ইট-পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে না। রাস্তা মেরামতের পাথর ও পিচ মেশানো সেই সাথে ময়লা আবর্জনার সাথেই কাজ করা হচ্ছে এমন ছবি তাকে মেসেঞ্জারে দেখালে সেই ছবিটি তাদেরই রাস্তা বলে স্বীকার করে। তবে পুরাতন পাথন মেশিনে ভেঙ্গে পুনরায় রাস্তায় ব্যবহার করা হচ্ছে এমন ছবিরে বিষয়ে তিনি বলেন ওই পাথর গুলো আমাদের না ওটা অন্যকাজের।
তবে ঠিকাদার ও স্থানীয়দের সাথে মারামারির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, শোনলাম মারামারি হয়েছে ওখান থেকে আমি দূরে আছি।
ঠিকাদার সেলিম রেজার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার রাস্তার কাজে কোন অনিয়ম বা নিন্মমানের কোন কিছু ব্যবহার হচ্ছে না। পুরাতন কোন কিছুও ব্যবহার হচ্ছে না। স্থানীয়দের সাথে মারামারি করেছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি মারেনি। ওরা ওখানকার স্থানীয় আমার কাছে চাঁদা চেয়েছিলো । তবে তিনি পরে বলেন চাঁদা চাওয়ায় ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়ে গোদাগাড়ী উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী সাদরুল ইসলাম বলেন, ওই কাজে কোন অনিয়ম হচ্ছে না। যে পাথর বা খোয়া ব্যবহারের কথা বলছেন সেগুলো আমাদের না। কাজ দেখাশোনার জন্য সেখানে সার্বক্ষনিক আমার অফিসের লোক নিয়োজিত আছে। পুরাতন ইট-পাথর বা অন্যকিছু ব্যবহারের সুযোগ নেই বলে জানান।