বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন পরিচালিত রামু রাবার বাগানের জমি জবর-দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে শক্তিশালী ভূমিসদ্যু চক্র। গত কয়েকদিন ধরে চক্রটি বাগানে ৩৫ একর জমিতে সম্প্রতি সৃজিত ৮ হাজার ৭০০ টি রাবার গাছের চারা কেটে দিয়েছে। এতে বাগানের ২৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেন জানালেন- বাগানের ব্যবস্থাপক নন্দী গোপাল রায়। ভূমিগ্রাসী চক্রের এমন নির্মমতায় হতবাক হয়ে পড়েছেন বাগান কর্তৃপক্ষ। এভাবে একের পর এক জবর-দখলের ঘটনায় বাগানে রাবার উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে।
বাগানে এমন বর্বরতা চালানোর খবর পেয়ে রবিবার, ১২ জুন সেখানে যান রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা। এরআগে শনিবার, ১১ জুন দুপুরেও ঘটনাস্থলে যান রামু উপজেলা নির্বাহি অফিসার প্রণয় চাকমা, রামু থানার ওসি আনোয়ারুল হোসাইন, ওসি (তদন্ত) অরূপ কুমার চৌধুরী ও রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক নন্দী গোপাল রায়সহ বাগানের কর্মকর্তা-কর্মচারিবৃন্দ।
রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক নন্দী গোপাল রায় জানান- সম্প্রতি বাগানের ৫০ একর জমিতে রাবার গাছের চারা রোপনের কাজ শুরু হয়। এরমধ্যে ৩৫ একর জমিতে রাবার চারা রোপনের কাজও সম্পন্ন হয়েছিলো। কিন্তু বাগানের মিতারছড়া এলাকায় একটি ভূমিগ্রাসী চক্র কয়েকদিন ধরে বাগানে সৃজিত ৮ হাজার ৭০০টি চারা গাছ কেটে দেয় এবং এসব পাহাড়ি জমি জবর-দখলের উদ্দেশ্য প্লাস্টিকের ছাউনী দিয়ে ১০/১২টি ঘর তৈরীর কাজ শুরু করে। চক্রটি বাগানের গাড়ি চলাচল বন্ধ করার উদ্দেশ্যে ওই স্থানে চলাচলের রাস্তাটিও কেটে দেয়। সর্বশেষ চারা রোপনে জড়িত শ্রমিকদের মারধরের হুমকী দিলে বাগান কর্তৃপক্ষ বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও থানাকে অবহিত করে।
গত রবিবার ও শনিবার বাগানের ওই স্থানে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা, ওসি আনোয়ারুল হোসাইন পাহাড়ি জমি দখলের চেষ্টা, বিপুল পরিমান চারা গাছ কেটে দেয়া, চলাচলের রাস্তুা কেটে বিচ্ছিন্ন করার সত্যতা পান। শনিবার দুপুরে পরিদর্শনকালে জবর-দখলকারি চক্রের সদস্যদের সাথে ইউএনও প্রণয় চাকমার বাক-বিতন্ডা সৃষ্টি হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা জানান-শনিবার জবর-দখলে যারা চেষ্টা চালিয়ে তাদের সাথে প্রাথমিক সমাধানের কথাবার্তা হয়েছিলো। কিন্তু রবিবার ভোরে জবর-দখলকারিরা তা অমান্য করে আবারো বাগানে রোপন করা বিপুল পরিমান রাবার গাছের চারা কেটে দিয়েছে। এমনকি বাগান জবর-দখলের উদ্দেশ্যে নতুন আরো ১০/১২ টি প্লাষ্টিকের ঘর তৈরী করেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের যারা ক্ষতিসাধাণ করবে তাদের ছাড় দেয়া হবে না। তাছাড়া এ বাগান রামুবাসীর সম্পদ, এখানকার গর্ব। এ বাগানের সম্পদ ও সৌন্দর্য রক্ষায় প্রশাসন সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।
রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ারুল হোসাইন জানান- সরকারি সম্পদ বিনষ্ট ও সরকারি কাজে বাঁধা দেয়া হলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তিনি রাবার বাগানের সরকারি জমি জবর-দখল ও চারা কেটে দেয়ার মত্য ঘৃণ্য অপকর্ম থেকে বিরত থাকার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানান।
রামু রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক নন্দী গোপাল রায় আরো জানান- কয়েকদিন ধরে বাগানের ৩৫ একর জমিতে রোপন করা সব গাছ কেটে দিয়েছে ভূমিদস্যুরা। রোপনের জন্য মুজদকৃত অনেক চারাও কেটে তছনছ করা হয়েছে। এখন তারা সেখানে বাগানের বিপুল পরিমান জমি জবর-দখলের জন্য অস্ত্র, দা, লোহার রড, লাটি-সোটা ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে অবস্থান নিয়েছে। বাগানে গাড়ি যাতে যেতে না পারে, সেজন্য চলাচলের সড়কও কেটে দিয়েছে ভূমিদস্যুরা।
ভূমিদস্যুদের এমন অপতৎপরতায় তিনি বিষ্ময় ও হতাশা প্রকাশ করে বলেন- এ বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হলে রামুবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ এটা রামুর সম্পদ। তিনি জানান- উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সমন্বয় করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। পাশাপাশি এমন বর্বরতায় জড়িতদের চিহ্নিত করারও চেষ্টা চলছে।