প্রতি বছর ধারণক্ষমতারও বেশি পর্যটক সমাগম হয় বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতের নগরী কক্সবাজারে। পর্যটনকে ঘিরে এই শহরে গড়ে উঠেছে ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট। আছে সহস্রাধিক রেস্তোরাঁও। এসব প্রতিষ্ঠানে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট সিস্টেম না থাকার ফলে তরল বর্জ্য ড্রেন দিয়ে সরাসরি যাচ্ছে সমুদ্রে।
আবার পুরো শহরের বর্জ্য গিয়ে পড়ছে বাঁকখালী নদীতে। এরপর পানির প্রবাহে মিশে এই বর্জ্যও যাচ্ছে সমুদ্রে। শুধু তা-ই নয়, কক্সবাজারের শতাধিক হ্যাচারির বিষাক্ত পানিও সমুদ্রেই গিয়ে মিশছে।
সৈকতের নাজিরারটেক থেকে হিমছড়ি পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে এমন দূষণযজ্ঞ। অনেকেই মনে করেন, ট্যুর অপারেটর ও হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীদের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কর্তৃপক্ষের অক্ষমতার কারণে প্রতিনিয়ত মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে সমুদ্রের নীল জলরাশি।
পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, প্রতি বছর কক্সবাজারে প্রায় ১০ লাখ পর্যটক আসেন। এর মধ্যে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত পর্যটন মৌসুমেই আসেন প্রায় ৬ লাখ। এই মৌসুমে ছুটির দিনগুলোতে কক্সবাজারে উপচে পড়েন পর্যটকরা।
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার জন্য কক্সবাজারে ৫১৬টি হোটেল-মোটেল রয়েছে। এসব স্থানেই প্রতিদিন শত শত টন বর্জ্য তৈরি হচ্ছে, যার বেশির ভাগই শেষ পর্যন্ত সাগরে গিয়ে পড়ছে।
এ ছাড়া পাহাড়ি ঢলের প্রবাহমান বাঁকখালী নদীতে পৌরসভার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এর ফলে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে স্থানীয় পরিবেশ ও সমুদ্রের পানি।
সমুদ্র অর্থনীতি নিয়ে বিপুল সম্ভাবনার কথা বলা হলেও দূষণের ফলে তা খাতা-কলমেই সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁকখালী নদীর উজানে ৩৫০ থেকে ৫০০ মিটার প্রশস্থতা থাকলেও মোহনায় তা সর্বোচ্চ ৫০ মিটার। এখানে পৌরসভার বর্জ্য ফেলে, তার ওপর নদী ড্রেজিংয়ের মাটি ফেলে হাউজিং প্রকল্প করা হয়েছে। পরিবেশ ধ্বংস করা এসব প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ করছে একাধিক সিন্ডিকেট।
সমুদ্র দূষণের জন্য পর্যটন নগরীতে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার অবস্থানকেও দায়ী করেছেন কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা। তার মতে, রোহিঙ্গা আগমনের ফলে পাহাড় কেটে তাদের জন্য ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে।
(সি/এন/টোয়েন্টিফোর)