আফ্রিকার বাইরে বিশ্বের কমপক্ষে ৩০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণ। এসব দেশে এখন পর্যন্ত ৫৫০ জনের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা- ডব্লিউএইচও’র বরাতে এ তথ্য দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
মাঙ্কিপক্স সংক্রমণ আফ্রিকার বাইরে পশ্চিমা ধনী দেশগুলোতে বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ নিয়ে গবেষণাও জোরদার করছে দেশগুলো। গবেষণার সুফল যেন নিম্ন আয়ের দেশগুলোও পেতে পারে, তা নিশ্চিত করতে ধনী দেশগুলোর কাছে আহ্বান জানিয়েছেন গবেষকেরা।
মাঙ্কিপক্স সাধারণত পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার দেশগুলোতেই হয়ে থাকে। ১৯৭০ সালে প্রথম এই ভাইরাসটি শনাক্ত হয়। যা এখন আফ্রিকার বাইরেও শনাক্ত হচ্ছে। তাই রোগটি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। কেননা, আফ্রিকা ভ্রমণ করেননি, এমন অনেকেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। আর এ বিষয়টিই মূলত গবেষকদের ভাবিয়ে তুলেছে।
সুইজারল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডসসহ কিছু ইউরোপের দেশ, যেসব দেশে মাত্র অল্প কয়েকজন শনাক্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে, তারা বলছে যে, আপাতত তাদের মাঙ্কিপক্সের জন্য পর্যাপ্ত পরীক্ষার ক্ষমতা রয়েছে। এছাড়া, যুক্তরাজ্যে প্রায় দুইশ জনের শনাক্ত নিশ্চিত করা হয়েছে। তারাও পরীক্ষা করার ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কাজ করছে।
বৃহস্পতিবার ডব্লিউএইচও আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে নাইজেরিয়া সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের মহাপরিচালক ইফেদায়ো অ্যাডেটিফা বলেছেন, নাইজেরিয়ায় ২০১৭ সাল থেকে মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব চলছে। সেখানে এখন পর্যন্ত ৬০০ সন্দেহভাজন এবং প্রায় ২৫০ রোগী শনাক্ত হয়েছে।
উদীয়মান হুমকি ও গ্লোবাল হেলথ সিকিউরিটি- ফাইন্ড, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ডায়াগনস্টিকস-এর সিনিয়র ডিরেক্টর ড্যানিয়েল বাউশ বলছেন, মাঙ্কিপক্স স্কেলে সংক্রমণের এই হার খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তবে এখনই ভুরি ভুরি পরীক্ষার প্রয়োজন নেই, যা কোভিড উদ্ভবের সময় করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, “এটি পরবর্তী কোভিডে পরিণত হচ্ছে না… তাই আমি মনে করি না যে, এটি পরীক্ষাকরণের চাহিদা খুব বেশি হবে। এমনকি আমি, পরীক্ষাকরণ সরঞ্জাম সরবরাহ করাটাও কোনো সমস্যা হতে পারে বলে আশা করি না।”
এদিকে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে মাঙ্কিপক্স ছড়িয়ে পড়ায় একে মোকাবিলায় শনাক্তকরণ পদ্ধতি ও টিকা সরবরাহে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বায়োফার্মাসিউটিক্যাল খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো।
এর আগে গত বুধবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত দ্রুত পরিবর্তনশীল আবহাওয়া পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে খাদ্যসন্ধানী অভ্যাসসহ প্রাণী ও মানুষ তাদের আচরণ পরিবর্তন করছে। এতে একসময় নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকা রোগজীবাণু আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে। এছাড়া অনেক রোগ মানুষ ও সংবেদনশীল প্রাণী প্রজাতির মধ্যে ফিরে আসছে।
এর ঠিক একদিন পরই কয়েকজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মাঙ্কিপক্সসহ অন্যান্য সংক্রামক রোগ মানুষের চিকিৎসাবর্জ্যের মাধ্যমে প্রাণীদের মধ্যে সংক্রমণের আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
তারা মাঙ্কিপক্সসহ অন্যান্য রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে অবিরাম সতর্কতা এবং বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেছেন। সূত্র- রয়টার্স।