বেনাপোল চেকপোস্টে গেলেই শুরু হয়ে যেত যাত্রীদের ব্যাগ নিয়ে দালালদের টানাটানি। তারাই করে দিত ইমিগ্রেশনের কাজ। এ জন্য যাত্রীদের কাছ থেকে নেয়া হতো ইচ্ছামতো টাকা।
এখন আর এমন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে না বলে জানান যাত্রীরা। দালালমুক্ত পরিবেশে তারা নিজেদের সব কাজ করতে পারছেন।
চিকিৎসার জন্য ঢাকা থেকে কলকাতা যাচ্ছিলেন ইশতিয়াক আহম্মেদ। বেনাপোল চেকপোস্টে এসে তিনি বলেন, ‘এবার এসে দেখি চেকপোস্টে যাত্রী ছাড়া আর কেউ নেই। অন্য সময় চেকপোস্টে দেখতাম, দালালরা যাত্রীদের ব্যাগ নিয়ে টানাটানি করছে। এবার সেটা চোখে পড়েনি। আমরা নিজেরাই ট্রলিতে লাগেজ নিয়ে গেছি, কাস্টমস ইমিগ্রেশনের সব কাজ নিজেরাই করেছি। অন্য সময় দালালরা এসব করত। দালালরা যা বলত আমরা তাই শুনতাম। নিজেদের খুব ছোট মনে হতো।’
ইশতিয়াক আরও বলেন, ‘আজকে বেনাপোল চেকপোস্টের পরিবেশ এয়ারপোর্টের মতো মনে হলো। দালালমুক্ত পরিবেশ দেখে খুব ভালো লাগছে। নিজেদের কাজ নিজেরা করতে পেরে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছি।’
বেনাপোল বন্দরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর প্রায় ১৮ লাখ মানুষ এই বন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশে যাতায়াত করে। মাঝে করোনার সংক্রমণ বাড়ায় নানা বিধিনিষেধের কারণে যাত্রীসংখ্যা কমে যায়। সংক্রমণ কমায় যাতায়াত আবার বেড়েছে। ২৪ এপ্রিল থেকে ১ জুন পর্যন্ত এই চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে গেছেন ৭৭ হাজার ৩২০ জন আর ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছেন ৬৩ হাজার ৮৯০ জন যাত্রী।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানায়, দীর্ঘদিন ধরে বেনাপোল চেকপোস্টে কিছু লোক পাসপোর্টধারী যাত্রীদের নানাভাবে হয়রানি করে আসছিল। সিরিয়াল ছাড়া দ্রুত কাজ করে দেয়ার নামে তারা টাকা হাতিয়ে নিত।
যাত্রীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করলে চলতি বছরের শুরুতে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন টার্মিনালে অত্যাধুনিক স্ক্যানিং মেশিন ও সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়। আনসার সদস্য ও চেকপোস্টের নিরাপত্তাকর্মীরা পাসপোর্ট ছাড়া কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না। এতে ভেতরে যেতে পারছেন না দালালরা।
পুরান ঢাকা থেকে আসা সুলতান আহম্মেদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমি প্রতিবছর পরিবার নিয়ে ভারতের উত্তর প্রদেশে আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে যাই। আজ বেনাপোল চেকপোস্টের যে পরিবেশ দেখলাম তা আগে কখনও দেখিনি। দালালমুক্ত চেকপোস্ট দেখে খুব ভালো লাগল। আমরা যারা নিয়মিত যাতায়াত করি, তাদের জন্য খুব ভালো হয়েছে। চেকপোস্ট দালালমুক্ত করায় আমরা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।’