দেশপ্রেম অনুভবের বিষয়, এটি লোকদেখানোর কোনো বিষয় নয়। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে দেখে সবার শেখা উচিত। কারণ ৩০০ আসনে সারা দেশের মানুষ স্থানীয় প্রার্থীকে নয়, শেখ হাসিনাকে ভোট দিয়েছে।’ এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক তদারক কমিটির আহ্বায়ক, দৈনিক ভোরের পাতা, দ্য ডেইলি পিপলস্ টাইমের সম্পাদক, এফবিসিসিআই পরিচালক ড. কাজী এরতেজা হাসান (সিআইপি)।
আজ বৃহস্পতিবার (২ জুন) সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বেলা ১২টায় শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের হলরুমে এ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাতক্ষীরা-৪ আসনের সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দার।
এর আগে ড. এরতেজা হাসানকে অভ্যর্থনা জানাতে আজ বৃহস্পতিবার (২ জুন) সকাল থেকেই সভাস্থলের বাইরে অপেক্ষা করতে থাকেন দলের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী। এ ছাড়া বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. এরতেজা হাসানকে অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের শ্যামনগর উপজেলা শাখার সভাপতি মো. রবিউল ইসলাম ও ভোরের পাতার শ্যামনগর প্রতিনিধি মো. মনিরুজ্জামান মুকুল প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. এরতেজা হাসান বলেন, ‘দেশপ্রেম দেখানোর বিষয় নয়, দেশপ্রেম অনুভূতির বিষয়। দেশপ্রেমিককে দেখলেই বোঝা যায় দেশের মাটির প্রতি তার ভালোবাসা কতটুকু। দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পশ্চিম পাকিস্তানে জেলে বন্দি ছিলেন, কিন্তু তার নামেই দেশ স্বাধীন হয়েছিল, কারণ আধ্যাত্মিকভাবে তার মধ্যে দেশপ্রেম ছিল এবং এই দেশপ্রেমের কারণেই তাকে জীবনের বেশিরভাগ সময় জেলে কাটাতে হয়েছে। জেল থেকে বসেও তিনি তার কর্মীদের প্রাণিত করেছিলেন। সেই কর্মীরাই তার কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশের পতাকাকে স্থান দিয়েছে। বিশ্বের মানচিত্র পরিবর্তন হয়ে গেছে বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরণায়। বঙ্গবন্ধুর শক্তি ছিল তার শক্ত কর্মীবাহিনী। আজ আপনারা যারা নেতা তাদের যদি কর্মীবাহিনী না থাকে তাহলে তো আপনারা নেতাই হতে পারবেন না।’
তিনি আরো বলেন, ‘তৃণমূল কর্মীদের সুসংগঠিত করতে হবে। আমি মনে করি, ৩০০ আসনেই জননেত্রী শেখ হাসিনা জিতেছেন। কারণ মানুষ আমাদেরকে ভোট দেয়নি, তাকেই মানুষ ভোট দিয়েছে। নেত্রী এবার বলে দিয়েছেন যার যার যোগ্যতায় এবার নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসতে হবে। তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার না করে মানুষের ঘরে ঘরে যান।’
দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশে^র বুকে দেশের পথ প্রদর্শক মন্তব্য করে ড. এরতেজা হাসান বলেন, ‘পুরো পৃথিবীতে এমন কোনো রাষ্ট্র নেই যে একসঙ্গে এতগুলো গৃহহীনকে ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। পদ্মা সেতু করা হয়েছে আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে। আমরা এখন শতভাগ বিদ্যুতায়নের দেশ। আমাদের এখন খাদ্যে ঘাটতি নেই। নেত্রী যেগুলো করেছেন সেগুলোই আপনারা করেন। তাই সবাইকে বলছি, আপনারা সবাই আপনাদের কর্মীর চোখের মাধ্যমে সবাইকে দেখবেন। এই কর্মীরাই যেন আপনার হয়ে যায় এবং আপনারা সেই কর্মীর হয়ে যান। এভাবে মিলেমিশে কাজ করুন।’
পদ-পদবীর লালসা না করে নিঃস্বার্থভাবে দলের জন্য কাজ করতে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দল করলেই পদ-পদবী নিতে হবে, এটা কেন? আপনারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক ও শেখ হাসিনার কর্মী হয়ে থাকেন। নেত্রী আমাকে সবকিছু দিয়েছেন, তিনি আমাকে চেনেন এটাই তো অনেক। আমাকে উনি যতবার তার সঙ্গে সফরে নিয়ে গেছেন আমার তো মনে হয় না সাতক্ষীরা থেকে আর কেউ এতবার তার সঙ্গে সফরে গেছেন।’
শ্যামনগরের প্রতি নিজের আলাদা ভালোবাসার অভিব্যক্তি প্রকাশ করে ড. এরতেজা হাসান বলেন, ‘শ্যামনগরের দায়িত্ব আমাকে কেউ দেয়নি, আমি এটা চেয়ে নিয়েছি। কারণ আমি তৃণমূল পর্যায়ে গিয়ে কর্মীদের কাছ থেকে কাজ শিখতে চাই। কারণ রাজনীতি একটা সাধনা, রাজনীতি কোনো শখ নয়। রাজনীতি একটা অধ্যাবসায়।’
অসুস্থ শরীর নিয়ে সারারাত না ঘুমিয়ে সকালে শ্যামনগরে পৌঁছার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এত কষ্ট করছি কিসের জন্য, কারণ দেড় বছর পর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে নৌকা দেবেন সেই নৌকার পক্ষে কাজ করার জন্য যে প্রেক্ষাপট সেটা তৈরি করতে হবে এখন। সেজন্য যেসব ইউনিয়নে এখনো কমিটি হয়নি, সেখানে সবার সম্মতি নিয়ে কমিটি দেন।’
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে ড. এরতেজা হাসান বলেন, ‘বর্তমান সময়ে দেশ ও জননেত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমরা যদি একত্রিত হয়ে এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা না করি তাহলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য আমরা একত্রিত হয়ে কাজ করব, ইনশাআল্লাহ্।’
ড. এরতেজা হাসানের সফরসঙ্গী হিসেবে সভায় উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক মো. শরিফুল ইসলাম খান বাবু, যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ হাসান হাবিব অয়ন, সাতক্ষীরা পৌর যুবলীগের সভাপতি মনোয়ার হোসেন অনু প্রমুখ।
শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আতাউল হক দোলনের সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন- সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা তদারকি কমিটির সদস্য সচিব কাজী আখতার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মো. আফসার আলী, জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. সুব্রত কুমার ঘোষ, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাহফুজা সুলতানা রুবিসহ শ্যামনগর উপজেলা শাখার কার্যকরী কমিটির সদস্য, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং দলীয় উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা।
এ জাতীয় আরো খবর ....