বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিটি ইউনিয়নে গৃহহীন বা ভূমিহীন পরিবার বা ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছে জমি সমেত ঘর তবে হয় তো এই ঘর প্রাপ্তির সৌভাগ্য সবার নেই। বলছি ফরিদপুর জেলা মধুখালি উপজেলা কামারখালি বাজার সংলগ্ন এলাকায় বসবাস কারী স্বামী পরিত্যক্তা কৃষ্ণা দত্তের কথা।
প্রায় ২৫ বছর আগে মেয়ে ও স্ত্রীকে রেখে চলে যান কৃষ্ণা দত্তের স্বামী দিলীপ কুমার দত্ত । সেই থেকে অন্যের বাড়ি কাজ করে, চেয়ে চিন্তে মেয়েকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে ছোট একটি ভাঙ্গা ঘরে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন স্বামী হারা এই মহীয়সী নারী কৃষ্ণা দত্ত। অন্যের দেওয়া আশ্রয়ের ভাঙ্গা ঘরেই কাটিয়েছেন জীবনের পঁচিশটি বছর। এই আশ্রয়ে থাকাকালীন সময়ে দিয়েছেন তার মেয়ের বিয়ে।কিন্তু তার পাশে দাঁড়ায়নি কেউ।
এই বিষয়ে কৃষ্ণা দত্ত বলেন, ‘শুনেছি কত মানুষ গরিবগেরে সাহায্য দেয়। কিন্তু আমাগের কেউ খবরও নেয় না। সরকার নাকি কত ঘর দিচ্ছে, আমাগেরে একটা ঘর দিলি খেতে না পারলেও মেয়েটারে বিয়ে দিয়েছি, কিন্তু তার সংসার চলে না ঠিক মত কোন দিন খেয়ে না খেয়ে জীবন যাপন করছি। শান্তিতে ঘুমোতে পারি না। আমাগের এই ভাঙ্গা ছোট ঘরে সবাই খুব কষ্টে থাকি। বৃষ্টির দিনে পানি পড়ে আর ঝড়ের দিনে ভয়ে অন্যের ঘরের চলে যায়।’প্রায় ২৫ বছর আগে একটি কন্যা সন্তান ফেলে রেখে স্বামী দিলিপ কুমার দত্ত চলে যায়। সন্তানও বৃদ্ধ বাবা মাকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়ি। এসময় আমার পাশে মানবতার হাত বাড়িতে দেন মোঃ খোকন মিয়া (ভ্যান্ডার) তার ঘরে বিনা ভাড়ায় থাকতে দেয়। বর্তমান মেয়ে স্বামী সন্তান নিয়ে শশুর বাড়ী সংসার করে। রান্না করার শক্তি নেই। মেয়ের অসচ্ছল সংসারে যা জোটে তাই দিয়ে যায়। রোগ শোক আকড়ে ধরেছে। প্রতিদিন ৫০-৬০ টাকার ওষুধ খেতে হয়। সারা দিন বিছানায় পরে থাকি। দু:চিন্তা কুড়ে কুড়ে খায়। ঘর মালিক যদি ঘর থেকে নামিয়ে দেয় তাহলে রাস্তায় পরে থাকা ছাড়া কোন উপায় থাকবেনা। শীতের রাতে পুড়ন কাপর দিয়ে দরজা জানালা ঘিরে রাখি। ভাবছি এবার ঝড়ের মধ্যে বেচে থাকতে পারবো কিনা জানিনা। বৃষ্টি এলে ঘর জলে ভেসে যায়। সারারাত বসে থাকি। এতো কষ্ট এই বয়সে সহ্য হয় না। তাই ভগবান নিয়ে গেলে বেচে যাতাম। সারা জীবনে একটু সুখের মুখ দেখলাম না।
এবিষয়ে কামারখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ রাকিব হোসেন চৌধুরী(ইরান) ‘র মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমি তাকে চিনি তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ এবং অসহায় স্বামী পরিত্যক্তা। আমি কয়েক মাস হলো দায়িত্ব নিয়েছি, প্রধানমন্ত্রী উপহার ঘর বরাদ্দের সময় তার নাম দেওয়া হয় নি তাই হয় তো তার আশ্রয়নের ব্যবস্থা করা যায় নি। আগামী দিনে যেকোন সরকারি সহযোগীতা আসলে তার নাম আমি প্রথমে দেওয়ার চেষ্টা করব।
সরেজমিনে কৃষ্ণা দত্তের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, উপরে ভাঙ্গা টিনের ছাওনি, ভাঙ্গা টিনের বেড়া এবং মাটির ঘরের মেঝে স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থা। এরকম একটি কুড়ে ঘরে বসবাস করছেন কৃষ্ণা দত্ত ।