“ যারা স্বামীকে জামাই বলে, এদের ভাই বোনেরাই লাভারকে বাবু বলে ”
প্রাণের ভাষা, মায়ের ভাষা বাংলা ভাষাকে ধ্বংসের দারপ্রান্তে নিয়ে গেছে কতিপয় অতি শিক্ষিত কথিত উদার মানসিকতার কথিত ভদ্রলোক-ভদ্রমহিলারা। এদের সাথে যুক্ত রয়েছেন কথিত নাট্যকার, কাহিনীকার, গীতিকার, কথিত সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিক্ষক, টিকটকার ইউটিউবার সহ দেশের বিশেষ কয়েকটি জেলার মানুষ ভাষার কফিনে প্রতিনিয়ত পেরেক ঠুকে চলেছেন।
ইদানিং দেশে তৈরি অধিকাংশ নাটকে দেখা যায় নিজের স্বামীকে স্ত্রী পরিচয় দিচ্ছেন “জামাই” বলে। আবার ঐ নাটকে দেশের সুনামধন্য অভিনেতা অভিনেত্রীরা যারা ইদানিং পিতা-মাতার চরিত্রে অভিনয় করছেন-তারা নাটকের মধ্যে তাদের কন্যাকে উদ্দেশ্য করে বলছেন “ কি রে তোর জামাই কই, তুই কি একা এসেছিস ? তোর জামাইকে তো সাথে নিয়ে আনতে পারতিস?
তাই আমার মনে হয় যারা মা-বাবার জামাইকে নিজের জামাই মনে করে, এদের ছোট ভাই-বোনেরা-ই কিন্তু লাভারকে বাবু ডাকে ? এটা ভাষার নিকৃষ্ট অধঃপতন এটা রোধ করবেন কিভাবে ?
যে ভাষার জন্য অসংখ্য মানুষের বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়েছে রাজপথ। ভাষা নিয়ে রচিত হয়েছে গান, গল্প, নাটক, কবিতা, সাহিত্য, সিনেমা –সেই ভাষাকে যখন কেউ বিকৃত করে, তখন আমার মনে হয় এটি ধর্ষণের পর্যায়ের অপরাধ করে থাকে।
অনেকে হয়তো বলবেন অশিক্ষিত ও স্বল্পশিক্ষিত মানুষ না বুঝে অনেক সময় ভাষা বিকৃত করে ফেলে। কিন্তু আমি বলবো এটা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণ কখনো মূর্খকে অনুকরণ অনুস্মরণ করেনা।
একজন প্রথম শ্রেণীর রাজনীতিবিদ, নাটক সিনেমা বা বিজ্ঞাপন নির্মাতা যত সহজে একটি বস্তাপচা মাল বাজারজাত করতে পারে তা অন্য কোনো ক্ষেত্রে এত দ্রুত ভাইরাল করা সম্ভব নয়।
ইদানিং আবার গোদের উপর বিষফোঁড়ার ন্যায় যুক্ত হয়েছে কথিত টিকটক, ইউটিউভ আর ফানি ভিডিও ও ভিডিও ক্রিয়েটরের নামে প্রকাশ্যে অপসংস্কৃত লালন।
এরা কি যে বলে, আর কি যে মানুষ কে বোঝাতে চাই তা আমার বোধগম্য নয়। আসলেই আমার মাথায় ঢোকেনা।
আমার দু’টো অল্প বয়সী ছেলে মেয়ে আছে। এরা সুযোগ পেলেই আমার অথবা আমার গিন্নীর মোবাইল নিয়ে এরা মোবাইলের ইউটিউব অপশনে যেয়ে লেখে ( সার্চ করে) “ বাংলা কার্টুন” অথবা “ ফানি ভিডিও” ।
সাথে সাথে হাজির হয়ে যায় অসংখ্য অপসংস্কৃতির পৈশাচিক লাইব্রেরী। এদের গল্পে নেই তেমন শিক্ষনীয় উপকরণ। নেই ভাষার মাধুর্য। নেই গল্পের নুন্যতম পজেটিভ প্লট। অথচ এগুলো দিব্যি চলছে, মিলিয়ন মিলিয়ন লাইকার ভিউআর তৈরি হয়ে যাচ্ছে।
অথচ আপনি ফেসবুকে আপত্তিকর সামান্য কিছু লেখেন বা কোনো ছবি পোস্ট করেন সঙ্গে সঙ্গে আপনার আইডি এক মাসের জন্য রেসটিকটেড করার নামে পুরো দুনিয়া থেকে আপনাকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে।
সেদিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে এক ভদ্রলোক অপরপ্রান্তের ব্যক্তি বা মহিলাকে বলছে –এই তো আমি সিঙ্গেলে দাঁড়িয়ে, তুমি কই। কথাটা শুনে আমি বেশ কবার ভাবলাম যে, আসলে ‘সিঙ্গেল’ শব্দের দ্বারা উনি কি বোঝাতে চাইছেন? অনেকক্ষণ পর আমি নিশ্চিত হলাম যে, উনি আসলে ট্রাফিক সিগন্যাল এর সামনে আছেন। তাই বলছেন আমি সিঙ্গেলে। সিগন্যাল যদি সিঙ্গেল হয়ে যায়, বাবা-মায়ের জামাই যদি নিজের জামাই হয়ে যায় তাহলে আমাদের করণীয় কি ?
যা্রা স্কুলে যাননি তাদের জন্য আমার কোনো বক্তব্য নেই। বাকিদের উদ্দেশ্য আমার স্পষ্ট বক্তব্য -বিশেষ করে এই সমাজের ডাকসাইটে তরুণী, যুবতী, ললনা, মহিলা, নারীদের প্রতি আমার অনুরোধ নিজের স্বামীকে কখনো জামাই বা লাভারকে বাবু বাবু বলে ডাকবেন না। এতে করে আপনার পাপতো হচ্ছেই পাশাপাশি বাংলা ভাষার মুখে প্রতিনিয়ত আপনি চুনকালী লেপন করে যাচ্ছেন।
দেশে ধর্ষণের শাস্তি কোনো কোনো ক্ষেত্রে মৃত্যদণ্ড–তবে আপনারা যারা প্রতিনিয়ত মায়ের ভাষাকে প্রকাশ্যে ধারাবাহিকভাবে ধর্ষণ করে যাচ্ছেন তারা নিজেরাই ঠিক করুন “ আপনার কি ধরণের শাস্তি হওয়া উচিৎ, আপনি নিজেই ঠিক করে সিদ্ধান্ত জানান।
এ জাতীয় আরো খবর ....