আতঙ্ক সৃষ্টি করে একক আধিপত্য বিস্তার করতে আশুলিয়া থানা ছাত্রলীগের সহসভাপির নেতৃত্বে ৫জনকে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে। এমনকি এই নেতা নিজেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়েছে বলে জানিয়েছে আহত এক ভুক্তভোগী।
ঘটনার পর ৯৯৯ ফোন পেয়ে আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠিয়ে ছিলেন বলে জানিয়েছেন আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম।
এঘটনায় আহত আইয়ুবের ভাই কাইয়ুম বাদি হয়ে ঘটনার পরের দিন সোমবার সকালে ১১জনের নামসহ অজ্ঞাত আরো ৫-৬ জনের নামে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং ৬২।
তবে এঘটনার দুদিন পেরিয়ে গেলেও অজ্ঞাত কারনে এখন পর্যন্ত ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
আসামীরা হলেন, আশুলিয়া ছাত্রলীগের সহসভাপতি খলিল প্রধান,তার বাবা মতিন প্রধান ও তার ৪ ভাই অলীল প্রধান, মহসিন প্রধান, ওয়াসিম প্রধান, মোশারফ প্রধান, এবং মোশারফ প্রধানের ছেলে আনাস প্রধান, পিতা অজ্ঞাত সোহাগ, বাশারের ছেলে আল-আমিন, নুরুজ্জামানের ছেলে রিফাত, গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা থানার বেলতলী গ্রামের মোঃ জাহিদুল ইসলামের ছেলে নাইমুর রহমান রাব্বীসহ অজ্ঞাত আরো ৫-৬জন।
মামলার বাদি কাইয়ুম বলেন, আমার ছোট ভাই আইয়ুব পিকআপ চালক। সে ওই এলাকায় গেলে ছাত্রলীগ নেতা খলিল প্রধানসহ তার লোকজন দেশিও অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। এসময় আরো ৪জনকে কুপিয়েছে তারা।
আহত রাহুল শেখ বলেন,আমি বেকারীর বিল তোলার জন্য ওই এলাকায় গিয়েছিলাম। হুট করে আমাকে এসে কোপানো শুরু করে একদল লোক। আমার হাতে কোপ লাগে। আমি দৌড় দিয়ে এক বাড়িতে ঢুকি আশ্রয়ের জন্য। আমার পিছে দৌড়াতে দৌড়াতে গিয়ে তারাও ওই বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করে। পরে ঢুকতে না পেরে ওই বাড়ির দরজায় কুপিয়ে তারা চলে যায়। পরবর্তীতে আমাকে পুলিশ এসে ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার করে। আমার সাথে আরেক বেকারী কর্মচারী ছিল রজব, সে বাঁচার জন্য কোন দিকে দৌড় দিয়েছে আমি জানিনা। পরে শেনালাম তাকেও কুপিয়েছে। আমি জানিনা আমাকে কেন তারা মারলো। রাতুল আরও বলেন, আমি সোহাগ নামে একজনকে চিনতে পেরেছি। তারা ২০-৩০ জন লোক ছিল।
গত রবিবার(২২ মে) বিকালে আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। সেখানে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশাল হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে অস্ত্রসহ হামলায় অংশ নেয় প্রধান পরিবার ও তাদের সহযোগীরা।
আহতদের সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, এনাম মেডিকেল কলেজ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। আহতরা হলেন, আইয়ুব, রজব আলী, ইয়াছিন, হানিফ ও রাতুল শেখ। তাদের মধ্যে রজব এখন সাভারের এনাম মেডিকেলে আইসিউতে রয়েছেন। হানিফের অবস্থাও গুরুতর।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে আইয়ুব বাসায় এসেছে। আইয়ুব বলেন, আমি শাপলা বিল্ডিং মোড়ে দাঁড়িয়েছিলাম। আশুলিয়া থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি খলিল প্রধান এসে কিছু না বলে আমাকে কোপ শুরু করে। তার হাতে চকচকা একটি সাদা রাম দাঁ ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, এর আগে এক মেয়েকে ইভটিজিং করে সোহাগ নামে এক ছেলে। সোহাগকে মেয়ের ভাই এ তার বোনকে বিরক্ত না করার জন্য বলে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে তর্ক বিতর্ক হয়। সোহাগ এ ব্যাপারে তার বন্ধু আনাস প্রধানকে জানায়। আনাস প্রধান তার বাপ চাচাকে নিয়ে সোহাগকে সহায়তা করার জন্য আসে। শনিবার রাতে শুনেছি এক ধাপ মারামারি হয়েছে। রবিবার তার জের ধরেই এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। তারা বেপরোয়া হয়ে যাকে সামনে পেয়েছে তাদেরই কুপিয়েছে। খলিল প্রধান কিছুদিন আগে আশুলিয়া থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির পদ পায়। এরপর থেকেই এলাকায় নিজেদের প্রভাব বিস্তারের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।
এদিকে পথচারীদের উপর এমন বেপরোয়া হামলায় হতবাক এলাকাবাসী। ওই সড়কের পাশের দোকানদার ও ব্যবসায়ীদের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে প্রধান পরিবারের ভয়ে সবাই এড়িয়ে যান। কথায় কথায় অনেকেই বলেন, খলিল প্রধান ছাত্রলীগ নেতা হওয়ার পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে গিয়েছে।তবে বিস্তারিত কথা বলতে চাননা কেউ।
আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত) জিয়াউল ইসলাম বলেন, আহত আইয়ুবের ভাই কাইয়ুম বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামী গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।