অতি সম্প্রতি কুমিল্লা জোন অফিস কর্তৃক নিয়ন্ত্রনাধীন (PMP) সাইন সিগন্যাল সিঙ্গল টেন্ডারের ৮ কোটি টাকা মূল্যের কাজ কৌশলে তাদের পছন্দের প্রতিষ্ঠান ABAID MONSUR CONSTRUCTION (আবিদ মনসুর কন্সট্রাকশন) কে পাইয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ঐ টেন্ডারের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃক ঐ কাজের টেন্ডার ঘোষণা করা হয় ১০ই নভেম্বর ২০২১ তারিখে এবং টেন্ডারে অংশ নেওয়ার শেষ সময় দেওয়া হয় ৯ই ডিসেম্বর ২০২১ তারিখ। ঐ সময় টেন্ডারে অংশ গ্রহণ করে যৌথভাবে হাসান টেকনো বিল্ডার্স লিঃ ন্যাশনাল ডেভলোপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিঃ(JV) সহ অন্যান্য।
কিন্তু বিশেষ কারণবশতঃ ঐ টেন্ডার পুণরায় রি-টেন্ডার করা হয় তারিখ ঘোষণা করা হয় ৯ই জানুয়ারি ২০২২, যার শেষ সময় ছিলো ২৪শে জানুয়ারি।
এবারও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে অংশ নিলেও অনিবার্য কারণবশতঃ আবারো রি-টেন্ডার আহবান করা হয় ২রা ফেব্রুয়ারি। যেটার শেষ সময় ছিলো ১৭ই ফেব্রুয়ারি ২০২২ ইং তারিখ।
এ সময় নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বৃহৎ কন্সট্রাকশন প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার বলেন “ সড়ক ও জনপথ বিভাগের শর্ষের মধ্যেয় রয়েছে ভূতের অস্তিত্ব”। এ বিষয়টির ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি দৈনিক খবরের আলোকে বলেন,“এতদিন তাদের পছন্দের প্রতিষ্ঠান ABAID MONSUR CONSTRUCTION (আবিদ মনসুর কন্সট্রাকশন) টেন্ডারে অংশ নেয়নি বলেই এতদিন বিভিন্ন কারণে অকারণে দফায় দফায় রি-টেন্ডার করা হয়েছে।
তথাপিও রি টেন্ডারের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রেখে এবং পছন্দের প্রার্থিকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার বৈধতা প্রমাণে আবারো ৩০ শে মার্চ রি টেন্ডারের তারিখ ঘোষণা করা হয়। এবারের টেন্ডার জমা দানের শেষ সময় ছিলো ২৫শে এপ্রিল।
এদিকে দফায় দফায় টেন্ডারে অংশ নিয়েও কোন ফলপ্রুস রেজাল্ট না পেয়ে অন্যান্যরা এবারে বিরত থাকে আর শেষ দফায় আবেদ কন্সট্রাকশনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হওয়ায় টেন্ডার প্রপ্তির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকতার পূর্বে অফিসিয়াল নিয়মানুযায়ী কাগজপত্র যাচাইবাছাই করা হচ্ছে।
এ সময় সড়ক ও জনপথ বিভাগের ভিতরে বাহিরে নানারকম গুঞ্জন ছড়াতে থাকে। তাছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠান প্রকাশ্যেই টেন্ডার প্রক্রিয়ার সমালোচনা করতে থাকেন।
এ সময় জোনাল অফিসের আশেপাশে এমন আলোচনাও ঠাঁই পেয়েছে যে, যাদের কাগজপত্র ঠিক নেই এবং একাধিক অভিযোগ বিচারাধীন তাদের কাজ পাওয়ার বিষয়টি অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়।
এসব বিষয়ে জানতে আবেদ মনসুর কন্সট্রাকশনের প্রধান আবেদ মনসুরের মোবাইলে দু’বার কল করা হয়, রিং ও হয় তবে তিনি ফোনটি রিসিভ না করার কারণে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ কুমিল্লা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর মোবাইলে কল করে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কথার প্রসঙ্গ পাল্টে মূল ঘটনা এড়িয়ে যান।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ইতিমধ্যে ABAID MONSUR CONSTRUCTION(আবিদ মনসুর কন্সট্রাকশন)এর Completion Certificate বা সমাপনী সনদ এর সত্যতা যাচাই করার জন্য ১৩/০২/২০২২ ইং তারিখে বাগেরহাটের সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (চ.দা) মো: ফরিদ উদ্দিন এ সংক্রান্ত অভিযোগ নীরিক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবহিত করেন।
যার স্মারক নং-৩৫.০১.০১০৮.৪০০.১৬.৪১৭.২১.২৪১৫।
যা সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে
১. অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, সওজ, পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ উইং, সড়ক ভবন তেজগাঁও ঢাকা।
২. অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, সওজ, ঢাকা জোন, ঢাকা/ময়মনসিংহ/ কুমিল্লা জোন, কুমিল্লা/রাজশাহী জোন, রাজশাহী/বরিশাল জোন, বরিশাল/চট্টগ্রাম জোন, চট্টগ্রাম/সিলেট জোন, সিলেট/রংপুর জোন, রংপুর/গোপালগঞ্জ জোন, গোপালগঞ্জ।
৩. অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, সওজ, খুলনা জোন, সড়ক ভবন, বয়রা, খুলনা।
৪. তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, সওজ, প্রকিউরমেন্ট সার্কেল, সড়ক ভবন, তেজগাঁও, ঢাকা।
৫. তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, সওজ, সড়ক সার্কেল, খুলনা/যশোর/কুষ্টিয়া।
৬. তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, সওজ, বরিশাল সড়ক সার্কেল, সড়ক ভবন, বরিশাল/পটুয়াখালী।
অভিযুক্ত এ কন্সট্রাকশন কোম্পানীর কাগজপত্র ঠিক না থাকা সত্ত্বেও কিভাবে এই কোম্পানীটি ই টেন্ডারে অংশ নিয়ে উতরে গেল তা ভেবে অন্যান্য কোম্পানীর লোকজন বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন।
এদিকে সড়ক ও জনপথের অন্যান্য সুনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলো ঐ ৮ কোটি টা্কার কাজ চুড়ান্ত করার পূর্বে আবেদ মনসুর কন্সট্রাকশনের বিচারাধীন সমস্ত কাগজপত্রের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত (PMP) সাইন সিগন্যাল সিঙ্গল টেন্ডারের কাজটি আপাতত স্থগিত অথবা পূণঃটেন্ডারে জন্য সড়ক ও সেতু মন্ত্রী তারকা রাজনীতিবিদ ওবায়দুল কাদের এর কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
(চলমান পর্ব-২)