সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়রের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্তের কাজে সহযোগিতা করায় পৌরসভার সিইও কে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে মেয়র। এব্যাপারে সাতক্ষীরা পৌরসভার ১২ জন কাউন্সিলের যৌথ স্বাক্ষরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, বিভাগীয় কমিশনার, পরিচালক, স্থানীয় সরকার ও জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত বক্তব্য দিয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে কাউন্সিলররা বলেন, সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব নাজিম উদ্দীন যোগদানের পর থেকে সততা , দক্ষতার সাথে সাতক্ষীরা পৌরসভার কাজে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন । তাঁর এ পদক্ষেপের কারণে মেয়র কর্তৃক ভূয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে সরকারী অর্থ আত্মসাৎ বন্ধ হয়ে যায় । ব্যাপক হারে পৌরসভার রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পায় ।
তারা বলেন, সিইও সাহেবের রুমে দায়িত্বপালনরত একজন মাস্টাররোল স্টাফ জনাব কাজি বিরাজ হোসেন নানাবিধ অনিয়ন ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকায় তাঁকে দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক কর্মচারী পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় ।
লিখিত বক্তব্যে কাউন্সিলরা আরও বলেন, এই চাকুরিচ্যুত স্টাফ সিইও সাহেবের মামলার আইনজীবী ফি , মামার লোন হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন এবং কিছু ব্যক্তিপ্ত লেনদেনের অর্থ কে অনৈতিকভাবে উপস্থাপন করছেন । মূলত আমরা কাউন্সিলরগণ দীর্ঘদিনের রাজনীতির সাথে জড়িত । আমরা সচেতনভাবে মেয়র সাহেবের একক ক্ষমতার অপব্যবহার , দুর্নীতি ও বিধি বহির্ভূত কাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করি । এখানে , সিইও সাহেবের কোন ভূমিকা নাই ।
এদিকে সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায় , সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র বিএনপি নেতা তাজমিন আহমেদ চিশতি ভূয়া বিল ভাউচার করে পৌরসভার ৩ কোটির টাকা পৌর তহবিল থেকে আত্মসাৎ করেছেন । এছাড়া ছিয়াত্তর লক্ষ ছাপান্ন হাজার নয়শত দুই টাকা বিধি বহির্ভুতভাবে পানির বিল মওকূফ, এক কোটি তেতত্রিশ লক্ষ তিন হাজার দুইশত একুশ টাকা পৌর কর মওকূফ, বিগত ছয় বছরে নিজ দলীয় কর্মীদের পৌরসভা ফান্ড থেকে এক কোটি আট লক্ষ উননব্বই হাজার সাতশত আটচল্লিশ টাকা আর্থিক সাহায্য প্রদান করেছেন ।
পৌরসভার হিসাব শাখা সূত্রে জানা যায়, মেয়র তাসকিন আহমেদ চিশতি নিয়ম বহির্ভূতভাবে নিজে জলবায়ু সহিষ্ণু অবকাঠামো প্রতিষ্ঠানিকীরন প্রকল্প ” সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁর পরিচালিত South Bangla Agriculture and Commerce Bank Limited এর সাতক্ষীরা শাখা থেকে মেসার্স তাজকিন আহমেদ নামীয় ০০২৮১১১০০৪৮৭৬ হিসাব নং থেকে ০৬৮৮২৫৩ ও ০৬৮৮২৫০ নাম্বারের Pay Order জমা দেওয়া হয় ।
সাতক্ষীরা পৌর সভার হিসাব রক্ষক অফিসের অফিস সহকারি নাজমুল হুদা জানান, গত কয়েক মাস আগে মেয়র মহোদয়ের মেয়রের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা শাহীন ভাই মেয়ের মহোদয়ের পক্ষে আমাদের অফিস থেকে পৌরসভার রাস্তার কাজ বাবদ ৫ লক্ষ টাকার চেক গ্রহন করেন।
প্রমাণিত অভিযোগগুলোর মধ্যে উলেখযোগ্য স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) আইন, ২০১০ এর ১৯ এর (২) (ছ) নং ধারা অনুসারে পৌরসভা মেয়র বা কাউন্সিলর কর্তৃক পৌরসভার কোন ঠিকাদারী কাজে যুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু মেয়র তাজকিন আহমেদ পৌরসভা থেকে ঠিকাদারির জন্য ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ করেন। যা ওই তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। তদন্তের প্রতিবেদন ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি ।
পৌর কাউন্সিলর কাজী ফিরোজ হাসান বলেন, কমপক্ষে ১০টি খাতে পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছে। এসব বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু তদন্তের সিদ্ধান্ত আসেনি। এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক প্রথমিক তদন্তে অভিযোগের মধ্যে অনেকগুলোর সত্যতা পেয়েছে। পৌরসভার সিইও সাহেব এসব তদন্তের কাজে সহযোগিতা করায় তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে দুর্নীতিবাজ মেয়র তাসকিন আহমেদ চিশতি।
সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সিইও নাজিম উদ্দীন এর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি সরকারী কর্মচারী আচারণ বিধিমালা অনুসারে তিনি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি । তবে , তিনি জানান মেয়র মহোদয়ের যেটা ভাললাগে সেটা করুক ।
এসব বিষয়ে জানতে সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাসকিন আহমেদ চিশতি নাম্বারে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, গত ১৩ জানুয়ারি ২০২২ সাতক্ষীরা পৌরসভার ১১জন কাউন্সিলর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এদিকে স্থানীয় মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ সূত্রে জানা গেছে মেয়র চিশতীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ গুলোর যথাযথ তদন্তের জন্য মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
এদিকে গত (২৭ এপ্রিল) মেয়রের দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত আসে দুদক। তদন্তের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ঐদিন রাত ৯টায় একটি পোস্ট করে বিষয়টি জানানো হয়।
এতে বলা হয়, সাতক্ষীরা পৌরসভার কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী, কাউন্সিলর ও মেয়রের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্ন রাস্তা সংস্কারের নামে ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি করে প্রায় ৩ কোটি টাকা, বিভিন্ন অনুদানের টাকা এবং ট্রেড লাইসেন্স/পানির বিল/হোল্ডিং করের অর্থআত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগের পরিপ্রেপিক্ষে দুদক খুলনার সহকারী পরিচালক বিজন কুমার রায় ও মো. আল-আমীনের সমন্বয়ে গঠিত একটি টিম সাতক্ষীরা পৌরসভায় বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় অভিযান চালায়। অভিযানকালে মেয়র তাজকিন আহমেদ অভিযোগের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিল ভাউচার, রেজিস্টার দেখান।
এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সরেজমিনে কয়েকটি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে। রাস্তা সংস্কারের নামে উত্তোলিত বিলের ভাউচার যাচাইকালে বেশকিছু অসঙ্গতি রয়েছে বলে দুদক টিমের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রাপ্ত নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে কমিশন বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করবে এনফোর্সমেন্ট টিম।
এ জাতীয় আরো খবর ....