এবার রেহায় পেল না শিশুদের ঘুড়ি ওড়ানোর এক চিলতে জায়গাও। রাতের আঁধারে শৈলকুপার কুমার নদের কবিরপুর নতুন ব্রীজের নীচের ছোট্ট এক চিলতে খোলা জায়গা রড-সিমেন্টের খুঁটি দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। সবুজ জায়গাটুকু রাতারাতি চাষ দিয়ে লাগানো হয়েছে কলাগাছও। খোদ নদীর চরে তাও আবার ব্রীজের নীচে ২৯.৫০ শতকের এই সরকারী জায়গাটুকু কিভাবে রাতারাতি দখল ও বিক্রি হয়ে গেল তা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে কবিরপুরের নতুন ব্রীজ ও চর এলাকার বাসিন্দা সহ সচেতন মহলে। জানা গেছে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার কবিরপুর গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ মহিউদ্দীন বলছেন এটা ব্যাক্তি মালিকানার জায়গা, এই জায়গাটুকু তিনি কিনেছেন বলে দাবি করছেন। কথিত ক্রয়-বিক্রয়ের পর এবার গভীর রাতে শিশুদের খেলার সবুজ চত্তরটুকু রড-সিমেন্টের খুঁটি আর বাঁশ-খুঁটি দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। বারবার স্থানীয়দের বাধার মুখে পড়ে রাতে ঘেরা দেয়া হয় এবং রাতেই চাষ দিয়ে কলাগাছ লাগানো হয়। বর্তমানে কোন নদীর জায়গা দখল, ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না মর্মে প্রধানমন্ত্রীর কড়া হুশিয়ারী রয়েছে এদিকে হাইকোর্টেরও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ১২৪ নং কবিরপুর মৌজার সাবেক ৩৪৮,৩৮৮ ও ৪৩৫ নং দাগের জমি বহুপূর্ব থেকেই সরকারী রাস্তা যার এসএ হাল দাগ নং ১৪২০। কবিরপুর মেইন রোড থেকে কুমার নদের পানি পর্যন্ত রাস্তার জমির নকশা রয়েছে। এসএ সাবেক দাগ ও নকশা অনুযায়ী রাস্তার জমির পাশের মালিকগন এসব সরকারী নদীর জায়গা ভোগদখল আবার কখনো কখনো সরকারের কাছ থেকে একসানা বন্দোবস্ত নিয়ে বিক্রিও করে দিচ্ছে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে আবার ব্যাক্তি মালিকানায় রেকর্ডও করে নিচ্ছে। এসব নিয়ন্ত্রন করছে এলাকার ভ’মিদস্যু মহল। চরের জায়গাতে কেউ কেটেছে পুকুর আবার কেউ বা মাটি কেটে বিক্রি বা সমতল বানিয়ে চাষও করছে, দিচ্ছে লীজ-বন্দকও। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কবিরপুরে নতুন ব্রীজের পাশে রয়েছে শত শত বছরের একটি ঐহিত্যবাহী একটি ঘাঁট। যেখানে কবিরপুর, নতুন ব্রীজ ও চর এলাকার শতশত মানুষ এই ঘাট ব্যবহার করে তাদের দৈনন্দন কাজে-কর্মে। আর এই ঘাটের সাথেই ২৯ শতক সরকারী জায়গা রয়েছে, যেটি ভিটার মতো উঁচু সবুজ চত্তর। এখানে প্রতি বছর দুই ইদ, পহেলা বৈশাখ, দুর্গাপুঁজা সহ নানা উৎসবে মেলা বসে। সার্কাস-থিয়েটার, নাট্য উৎসব সহ বৈশাখী মেলাও বসে। তবে শেকড়-সংস্কৃতির নানা বিনোদনের এই জায়গাটুকুও এখন চলে গেল ভুমিদস্যুদের কবলে। শুধু বড়দের উৎসবই নয় এখানে শিশুরা ঘুড়ি উড়িয়ে থাকে, হ্যান্ডবল,ভলিবল খেলে থাকে। আর এবারের ইদে এখানে কোন অনুষ্ঠান করতে পারেনি স্থানীয়রা। রাজধানী সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ইদের ছুটিতে বাড়িতে এসে নির্মল বিনোদনের জায়গা পায়নি নতুন ব্রীজ এলাকার মানুষ। নদীর চরের এসব ছোট ছোট জায়গা ঘিরে শৈলকুপার নতুন ব্রীজ এখন মানুষের বিনোদনের একমাত্র স্পট, তবে সেটিও এখন বে-দখল হয়ে গেল। ইদের দু-সপ্তাহ আগ থেকে কবিরপুরের মহিউদ্দীন নামের এক ব্যক্তি তার লোকজন দিয়ে জায়গাটুকু ঘেরা দিয়ে দখলের চেষ্টা করতে থাকে তবে স্থানীয়দের বঁাধার মুখে পড়তে থাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইদের আগের রাতে রড-সিমেন্টের খুঁটি দিয়ে ঘিরে ফেলে। এব্যাপারে কবিরপুরের স্থানীয় বাসিন্দা তৌহিদুল ইসলাম, ইমরুল, কেরামত, রুহুল, উজ্জ্বল হোসেন স্থানীয়দের অভিযোগ এখানে বড় বড় দোকান-পাট সহ স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ ও নেয়া হচ্ছে। শত বছরের ঘাটের জায়গাও দখলের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করছে অনেকে। কয়েকজন নারী জানান, এই ঘাটে তারা গোসল সহ নদীর পানি ব্যবহারও ঘর-গৃহস্থলীর নানা কাজ করে থাকেন তবে গত কয়েক বছর এসবের কিছুই করতে পারছেন না। দোকানপাট করে তা দখল করা হয়েছে। বিরোধপূর্ণ এই জমি নিয়ে যেকোন মুহুর্তে এলাকায় সংঘর্ষ ও সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে বলে স্থানীয়দের অনেকে জানিয়েছে। শত বছরের ঘাট, নদী দখল, নতুন ব্রীজে উৎসব, খেলার মাঠ আর সরকারী-মালিকানা সম্পত্তি এসব বিষয় এখন সবার মুখে মুখে। এদিকে ক্রয়সুত্রে চরের এই জমি মোহাম্মদ মহিউদ্দীন মালিক দাবি করে সাম্প্রতি সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিলে সদ্য বিদায়ী এসিল্যান্ড পার্থ প্রতীম শীল সেই সাইনবোর্ড তুলে দেন এবং জমিতে কোন ধরনের দখল বা ঘেরা দেয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা দেন দু’দফা। ইউএনও অফিস থেকেও লোকবল এসে জমিতে কোন কিছু করা যাবে না বলে জানিয়ে দেন তবে কোন কিছুরই তোয়াক্কা না করে ফের রড-সিমেন্টের খুঁটি পুতে তা দখল করা হয়েছে। এসব বিষয়ে মোহাম্মদ মহিউদ্দীন জানান, ১৯৮০ সালের দিকে স্থায়ী বন্দোবস্ত দলিলে সরকারের কাছ থেকে কুমার নদের চরের এ জমি কিনেন নজরুল মন্ডল। সেই জমির ২৯,৫০ শতক ২০১৯ সালে কিনেছেন তিনি যা মালিকানা সম্পত্তি। তবে বর্তমানে যেকোন নদীর জমি ক্রয়-বিক্রয়ে, দখলে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে মহিউদ্দিন জানান, হাইকোর্টের আদেশের পর মহামান্য সুপ্রীম কোর্টও একটি আদেশ দিয়েছেন যেখানে এমন জমি ক্রয়-বিক্রয়, ভোগ-দখল করা যাবে বলে তিনি দাবি করছেন। শৈলকুপা ভুমি অফিস সহ স্থানীয় প্রশাসনের বাধার কথা স্বীকার করে মহিউদ্দিন বলেন, বাধা দেয়ায় তাদের বিরুদ্ধে তিনি আদালতে পিটিশন দিয়েছেন এবং শোকজ করা হয়েছে। বৈধভাবে জমি ক্রয় করেছেন এবং মালিকানা হিসাবে ভোগদখল করতে পারবেন বলে দাবি করছেন মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। এদিকে শৈলকুপায় সদ্য যোগদানকারী সহকারী কমিশনার(ভ’মি) মোঃ বনি আমিন জানিয়েছে, পূর্বে এমন জমি নানাভাবে দখল, স্থাপনা নির্মাণ, ক্রয়-বিক্রয় হলেও বর্তমানে হাইকোর্টের আদেশের পর নতুন করে এভাবে নদীর জমি দখল,ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না। কুমার নদের নতুন ব্রীজ সংলগ্ন জমির বিষয়টি তাদের নজরে আছে বলে উল্লেখ করেন এই কর্মকর্তা।