চেক জালিয়াতির রেশ কাটতে না কাটতে ঝিনাইদহ পৌরসভার দোকান বরাদ্দ নিয়ে বড় ধরণের ঘাপলার অভিযোগ উঠেছে। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ডিডের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা গ্রহন করা হলেও তার কোন হিসাব নেই ঝিনাইদহ পৌরসভায়। ফলে এই টাকার ভাগ কার পকেটে উঠেছে তা নিয়ে নতুন করে জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের জমিতে গড়ে ওঠা অবৈধ পৌর মার্কেট উচ্ছেদের পর এই ঘাপলাবাজীর তথ্য ধরা পড়েছে। সোমবার বিকালে ঝিনাইদহ শহরের কাঞ্চনপুর এলাকার ট্রাক টার্মিনালে ২৬টি মার্কেট উচ্ছেদ করে ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগ। এই মার্কেটগুলো তিন’শ টাকার স্ট্যাম্পে চুক্তিনামা করে ঝিনাইদহ পৌরসভা। ২০২০ সালের পহেলা আগষ্ট তারিখে কার্যকর হওয়া চুক্তিনামার এক নং শর্তে বলা হয়েছে অগ্রিম হিসেবে গ্রহন করা জমানতের টাকা পৌরসভার তহবিলে জমা থাকবে। কিন্তু ঘর উচ্ছেদের পর বর্তমান পৌর প্রশাসক ইয়ারুল ইসলাম ও সচিব নুর মোহাম্মদ জানিয়েছেন ঘর বরাদ্দের কোন জমানতের অর্থ পৌরসভার তহবিলে নেই। ট্রাক টার্মিনাল এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী গোলাম রসুল জানান, তিনি পৌর মার্কেটের তিনটি ঘর ৬ লাখ টাকা জমানত দিয়ে নিয়েছিলেন। সোমবার বিকালে তার সেই ঘর উচ্ছেদ করা হলে প্রায় ১২ লাখ টাকার মালামাল ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তিনি জমানতের টাকা, দোকানের ডেকোরেশন ও ক্ষতিগ্রস্ত মালামাল বাবাদ ১৫ লাখ টাকা দাবী করে মঙ্গলবার (১০ মে) পৌর প্রশাসকের কাছে লিখিত দরখাস্ত দিয়েছেন। শহীদ মসিউর রহমান সড়কের মীর শুকুর আলীর ছেলে মাসুদ রানাসহ ৬জন ব্যবসায়ী অর্ধকোটি টাকার ক্ষতিপুরণ দাবী করে চিঠি দিয়েছেন। প্রয়াত শ্রমিক নেতা হাবিবুর রহমান হবুর স্ত্রী শুকতারা বেগম জানান, তার ছেলেরা ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা জমানত দিয়ে ঘর নিয়েছিলেন। একই ভাবে গোলাম সরোয়ার, লাল মিয়া, মন্টু মিয়া রবিউল ইসলাম, অলোক কুমার, মাসুদ মটর্স ও আব্দুল মাজেদসহ ২৬ জন ব্যবসয়ীর বেঁচে থাকার স্বপ্ন মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারিয়ে স্ত্রী, সন্তান ও পরিবার পরিজন নিয়ে অনেকেই পথে বসেছেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লাল মিয়া জানান, তিনি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে ঘর নিয়েছিলেন। ঘর কেনার সময় স্ট্যাম্পে উল্লেখ করা হয় জমানতের টাকা পৌরসভায় জমা থাকবে। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে সেই টাকা নেই। লাল মিয়া প্রতি মাসে ঘর ভাড়ার ৫০০ টাকা ঝিনাইদহ এবি ব্যাংকে দিয়ে আসছিলেন। তার কাছ থেকে জমানতের টাকা কার্যসহকারী হাবিব নিয়েছিলেন বলেও তিনি জানান। আপন ফার্নেচারের মালিক সাব্বির জুয়েল অভিযোগ করেন তার কাছ থেকে ৩’শ টাকা স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ৬ লাখ টাকার জমানত গ্রহন করেন কার্যসহকারী হাবিব। তিরি আরো জানান, সওজ থেকে ঘর ভাঙ্গার নোটিশ দেওয়ার পরও হাবিব তাদের আশ্বাস দিয়ে জানিয়েছিল কোন ক্ষতি হবে না। তারপরও আকস্মিক ভাবে সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মাটির সঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হলো। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ মার্কেট তৈরী করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন পৌরসভার কার্যসহকারী হাবিবুর রহমান হাবিব। বিভিন্ন সময় তিনি এই বরাদ্দের টাকা আদায় করে থাকেন। ক্ষমতাধর এই কার্যসহকারী হাবিবকে তাই অনেকেই ‘সেকেন্ড মেয়র’ হিসেবে ডাকেন। ঝিনাইদহ নতুন হাটখোলায় জেলা প্রশাসকের মালিকানাধীন জমিতেও নতুন নতুন ঘর বরাদ্দ দিয়ে কয়েক কোটি টাকা পকেটস্থ করা হয়েছে। এই টাকা হাবিব ছাড়াও কার পকেটে উঠেছে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী উঠেছে। এদিকে কতিপয় কর্মকর্তা কর্মচারী ঝিনাইদহ পৌরসভাকে লুটপাটের আখড়ায় পরিণত করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হয় না বলে অভিযোগ। বরং ধরা পড়ার পরও অনেকেই বহাল তবিয়তে রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ পৌরসভার প্রশাসক ইয়ারুল ইসলাম জানান, তিনি প্রশাসক হিসেবে যোগদান করার পর কোন দোকানঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়নি, তাই এ বিষয়ে তিনি অবগত নন। ঝিনাইদহ পৌরসভার সচিব নুর মোহাম্মদ জানান, পৌর মার্কেট তৈরীর সময় নেয়া জমানতের টাকা পৌরসভার ফান্ডে নেই। তিনি বলেন মার্কেট উচ্ছেদের পর একাধিক ব্যবসায়ী টাকা গ্রহনের বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। এ নিয়ে আমাদের করণীয় কিছুই নেই। পৌরসভার কার্যসহকারী হাবিবুর রহমান হাবিব দাবী করেন, দোকান উচ্ছেদের পর ব্যবসায়ীরা তাকে মারধর করার ফলে তিনি হাসপাতালে ছিলেন। তিনি অসুস্থ, তাই অফিসে যেতে পারেননি। হাবিব টাকা গ্রহনের কথা স্বীকার করে বলেন, এই টাকা দিয়ে মার্কেট তৈরী করা হয়েছিল। তাই পৌরসভার ফান্ডে জমানতের টাকা জমা নেই। তিনি বলেন মার্কেটের জমি সড়ক বিভাগের এ কথা সত্য, কিন্তু ৩৫ বছর ধরে ঝিনাইদহ পৌরসভার দখলে আছে। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সেখানে মাটি ভরাট করে যনজট নিরসনের জন্য ট্রাক টার্মিনাল করা হয়।