বেপরোয়া যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে ৪১৬টির পরিবর্তে কমপেক্ষ ৫১৬ স্পিডগান, ২১০টি আরএফ আইডি, ২১২টি অ্যালকোহল ডিটেক্টর এবং ১৮০টি পস মেশিন বসানোর প্রস্তাব করছে। যাতে করে দেশের মানুষ দুর্ঘটনামুক্ত-জ্যামমুক্ত এবং নির্ধারিত ভাড়ায় নাড়ির টানে বাড়ির পথে যেতে পারে, সেজন্য প্রয়োজন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, বিআরটিএ আর সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সকল কর্মকর্তা কর্মচারির ছুটি বাতিল করে নিয়োজিত থাকা।
একই সাথে দুর্ঘটনায় পড়া যানবাহন মহাসড়ক থেকে অপসারণ করতে ২৪টি রেকারের পরিবর্তে ৭০ টি, ১২টি অ্যাম্বুলেন্স-এর পরিবর্তে ১০০ টি এবং ৯১টি কুইক রেসপন্স টিম-এর স্থলে ১৫০ টি টিম প্রস্তুত রাখারও জোর দাবি জানাচ্ছি। নৌপথেও বিশেষ টিম রাখার দাবি জানাচ্ছি। সেভ দ্য রোড বলতে চায়- সচেতনতা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে পারলেই সম্ভব বাংলাদেশে সড়ক- রেল- নৌপথ দূর্ঘটনা প্রতিরোধ করা।
আকাশ-সড়ক-রেল ও নৌপথ দুর্ঘটনামুক্ত রাখার লক্ষ্যে একমাত্র স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন সেভ দ্য রোড-এর চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনামের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন সেভ দ্য রোড-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মোমিন মেহেদী, ভাইস চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিয়া, সদস্য সাজিয়া রহমান, ইউসুফ লিটন, কুয়াশা হক প্রমুখ।
দুর্ঘটনামুক্ত ঈদযাত্রা-ফিরে আসা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের দাবিতে প্রতিবেদন
তারিখ : ২৮ মে ২০২২ স্থান : জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে
প্রিয় সংবাদযোদ্ধাগণ
সালাম ও শুভেচ্ছা। সেভ দ্য রোড-এর অঙ্গীকার পথ দূর্ঘটনা থাকবে না আর। এই শ্লোগানকে সামনে রেখে এগিয়ে চলার ধারাবাহিকতায় আজকের এই প্রতিবেদন পাঠ ও অবস্থান কর্মসূচীতে আপনারা যারা উপস্থিত; সবাইকে কৃতজ্ঞতা-ভালোবাসা-শ্রদ্ধা। করোনা পরিস্থিতির দ্বিতীয় ঢেউ সামলে লকডাউন ঘোষণা করলেও সব বাঁধা ভেঙ্গে চলছে সড়ক ও নৌপথে মানুষের চলাচল। ঈদকে ঘিরে আরো বেড়েছে মানুষের দূরদূরান্ত পাড়ি দেয়ার চেষ্টা। সকল অনিয়ম-ভাড়া বৃদ্ধি-দুর্নীতিসহ সকলবাঁধা ভেঙ্গে নিজের কথা না ভেবে, পরিবারের কথা না ভেবে যখন নাড়ির টানে বাড়ির পথে ছুটছে মানুষ তখন নির্মম পথ দূর্ঘটনা বেড়েই চলছে।
‘ভোগান্তি সয়েই ঈদে বাড়ি ফেরা শুরু’ দৈনিক আমাদের সময়-এর আজকের এই সংবাদ শিরোনামটিই বলে দিচ্ছে কতটা অসহায় আমজনতা পথে চলতে গিয়ে হয়ে থাকে। একদিকে যেমন ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে, তেমন চলছে সড়ক মেরামতের কাজও। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। ঈদের ৪ দিন আগে থেকেই ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গ ও সিলেটগামী যাত্রীদের বিভিন্ন স্থানে ভোগান্তি শুরু হয়ে গেছে। নরসিংদীর মাধবদী থেকে পাঁচদোনা পর্যন্ত যানজটে ঢাকা-সিলেট, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আশপাশ জেলার মানুষ আটকে পড়ছেন। দক্ষিণের ২১ জেলার যাত্রীরা পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি রুটে ফেরি পারের জন্য ঘাটেই কাটছে কয়েক ঘণ্টা। রাজধানীর উত্তরা থেকে আশুলিয়া হয়ে বাইপাইল পর্যন্ত যানজট প্রতিদিনের চেনা চিত্র। টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া জেলায় উন্নয়ন কাজের জন্য সড়ক সরু হওয়ায় ধীরে চলছে গাড়ি। এমন পরিস্থিতিতে সেভ দ্য রোড কথা বলছে- ‘১৮০০ টাকার টিকেট ৩৫০০ টাকা হয়ে যাওয়া’র বিষয়টি নিয়েও। একই সাথে সমাধানে পুলিশ-প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে আরো সচেতন হওয়ার আহবান জানাচ্ছে পরিবহন সমস্যা সমাধানের জন্য।
মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ ২১ টি স্থানে সাত কারণে ঈদযাত্রায় যানজট তৈরি হতে পারে বলে সেভ দ্য রোড মনে করে। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের যাত্রীদের ভোগান্তি বেশি হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়। যেসব স্থানে বেশি যানজট হতে পারে সেগুলোর মধ্যে আছে- রাজধানীর পুরানা পল্টন, কারওয়ান বাজার, সায়েদাবাদ, গাবতলি, সাভার বাসস্ট্যান্ড, বাইপাইল মোড়, বাইপাইল-ধউর ব্রিজ, টঙ্গী ব্রিজ থেকে রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা, গাজীপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কের সফিপুর বাসস্ট্যান্ড। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর থানাধীন গোড়াই মোড় ও কালিয়াকৈরের উত্তর হিজলাতলীতেও যানজট হতে পারে। এছাড়াও রয়েছে এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু, নকলা ব্রিজ থেকে হাটিকুমরুল মোড়, ভূইয়াগাঁতি থেকে চান্দাইকোনো পর্যন্ত, মেঘনা টোল প্লাজা এবং সাটুরিয়ার গোলড়া বাসস্ট্যান্ড। সাত কারণে এসব স্থানে যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণগুলো হলো- বাস স্টপেজ না থাকা, চলমান উন্নয়নকাজ, ভাঙা-সরু রাস্তা, দুর্বল ও নলকা ব্রিজ, টোল প্লাজায় পর্যাপ্ত বুথের অভাব, রাস্তা খানাখন্দে ভরপুর এবং মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন। জন দুর্ভোগ সহনীয় রাখতে প্রয়োজন হাইওয়ে পুলিশের সততা। তাদের নীতিগত অবস্থানই পারে সড়ককে দুর্ঘটনামুক্ত রাখার পাশাপাশি যানজটমুক্ত রাখতেও। ঈদযাত্রায় ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি চালানো যানজটের একটা কারণ। এ বিষয়ে পদক্ষেপ জানতে চাইলে তিনি বলেন, একসঙ্গে গার্মেন্টস ছুটির পর একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তখন টঙ্গীর কোনো কোনো মোড় থেকে ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি ছাড়া হয়, মানুষ ট্রাকে করে যান। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও ততটা কঠোর থাকতে পারে না, মানবিক একটা আপিলও থাকে। এটাই বাস্তবতা।
ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা টোলে ঈদের সময় গাড়ির চাপ বেশি থাকে। টোল আদায়ে ধীরগতির কারণে এখানে যানজট বেশি হয়। ঢাকা-দক্ষিণাঞ্চল যাতায়াতের অন্যতম পথ ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গোড়লা বাসস্ট্যান্ডে চার লেনের কাজ চলমান। বাসস্ট্যান্ডের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে দুটো ব্রিজ আছে। এগুলো খুবই সংকীর্ণ। এ কারণে আসন্ন ঈদুল ফিতরে এখানে যানজটের আশঙ্কা আছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল আঞ্চলিক মহাসড়কের বাইপাইল থেকে ধউর ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তা খানাখন্দে ভরপুর। এ সকল সংকট-সমস্যা সরকারের একটি অংশ জিইয়ে রেখে এই ঈদকে কেন্দ্র করেই সংস্কার উদ্যেগ নেয়ার কারণেও সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে আর গাঢ় হয়। বাস র্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) আওতায় গাজীপুর-এয়ারপোর্ট সড়কের সাড়ে ২০ কিলোমিটার এবং ঢাকা বাইপাস ইলেভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ২৬ কিলোমিটার প্রকল্প চলমান। মেঘা প্রকল্প দুটির অধীনে সড়কে সম্পূর্ণ লেন ব্যবহার উপযোগী হয়নি। বিআরটি প্রজেক্টের ২৫টি স্টেশনকেন্দ্রিক উভয়মুখী রাস্তার প্রশস্ততা হ্রাস পাওয়ায় সেখান দিয়ে এক লেনে গাড়ি চলাচল করতে পারে। টঙ্গী ব্রিজ থেকে জয়দেবপুুর চৌরাস্তা পর্যন্ত কোনো রোড ডিভাইডার না থাকায় যত্রতত্র গাড়ি ইউটার্ন নিচ্ছে। এসব কারণে এই এলাকায় অসহনীয় যানজট সৃষ্টি হতে পারে। ঈদ মৌসুমে সড়ক-মহাসড়কে রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসাধু সদস্য এবং প্রভাবশালী মহলের লাঠিয়াল বাহিনী সদস্যরা চাঁদা আদায় করে থাকে। এ কারণেও রাস্তায় যানজট তৈরি হয়।
দুর্ঘটনামুক্ত ঈদযাত্রা-ফিরে আসা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপে সেভ দ্য রোড-এর প্রস্তাব-
সড়ক ও নৌপথে চলাচলকারী বাহনের নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন চলাচল নিশ্চিত করতে, ভাড়া বৃদ্ধি বন্ধ করতে এবং চাঁদাবাজি-হয়রানি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নামে নতুন করে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় না দিতে এমন একটি পর্যবেক্ষণ টিম তৈরি করতে হবে সরকারী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে যুক্ত করে। বেপরোয়া যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে ৪১৬টির পরিবর্তে কমপেক্ষ ৫১৬ স্পিডগান, ২১০টি আরএফ আইডি, ২১২টি অ্যালকোহল ডিটেক্টর এবং ১৮০টি পস মেশিন বসানোর প্রস্তাব করছে। যাতে করে দেশের মানুষ দুর্ঘটনামুক্ত-জ্যামমুক্ত এবং নির্ধারিত ভাড়ায় নাড়ির টানে বাড়ির পথে যেতে পারে, সেজন্য প্রয়োজন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, বিআরটিএ আর সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সকল কর্মকর্তা কর্মচারির ছুটি বাতিল করে নিয়োজিত থাকা। একই সাথে দুর্ঘটনায় পড়া যানবাহন মহাসড়ক থেকে অপসারণ করতে ২৪টি রেকারের পরিবর্তে ৭০ টি, ১২টি অ্যাম্বুলেন্স-এর পরিবর্তে ১০০ টি এবং ৯১টি কুইক রেসপন্স টিম-এর স্থলে ১৫০ টি টিম প্রস্তুত রাখারও জোর দাবি জানাচ্ছি। নৌপথেও বিশেষ টিম রাখার দাবি জানাচ্ছি। সেভ দ্য রোড বলতে চায়- সচেতনতা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে পারলেই সম্ভব বাংলাদেশে সড়ক- রেল- নৌপথ দূর্ঘটনা প্রতিরোধ করা। আর এজন্য নিজেকে পরিবর্তন করা সবার আগে প্রয়োজন।
২১ টি জাতীয় দৈনিক, পাঁচটি অনলাইন নিউজপোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের পাশাপাশি সেভ দ্য রোড-এর স্বেচ্ছাসেবি ও গবেষণা সেল-এ দায়িত্বরতদের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। সংক্ষিপ্ত ও সুপারিশসহ এই প্রতিবেদন তৈরিতে আমাকে সহায়তা করেছেন সেভ দ্য রোড-এর চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনাম, প্রতিষ্ঠাতা মোমিন মেহেদী, ভাইস চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিয়া, সদস্য সাজিয়া রহমান ইউসুফ লিটনসহ আরো অনেকেই। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।
প্রিয় সংবাদযোদ্ধাগণ
পরিশেষে বলতে চাই, সেভ দ্য রোড বাংলাদেশে সড়ক-আকাশ- রেল ও নৌপথ নিরাপদ করার জন্য নিবেদিত একমাত্র স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন। এই সেভ দ্য রোড যখন দেখে লকডাউন চলছে, মানুষের বাড়ি যাওয়াও চলছে; তখন পুলিশ-প্রশাসন-সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা ব্যতিত আর কিছুই দেখতে পায় না…
শান্তা ফারজানা
মহাসচিব, সেভ দ্য রোড
ফোন : ০২-৯৫১৪৫৩২, ০১৭৯১৪০৭০৪৭