চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে কালবৈশাখী ঝড়ে ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, লবণমাঠসহ ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় সকাল ৮ টা থেকে উপজেলা জুড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
বুধবার (২০ এপ্রিল) সকাল ৮ টা থেকে বাঁশখালী উজেলার উপর দিয়ে আকস্মিক এই ঝড় বয়ে যায়। এতে কোন প্রানহানীকর ও লোকজনের হতাহতের খবর পাওয়া না গেলেও বসতঘর, দোকানপাট, বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার-খুঁটি ভেঙ্গে পড়া ও ফসলের ক্ষয়-ক্ষতির খবর পাওয়া যায়।
বাঁশখালী উপজেলার শিলকূপ ইউনিয়নের টাইমবাজারের সাওদাগর মু. রেজাউল করিম বলেন, আজ সকাল সোয়া ৮টার দিকে বছরের প্রথম বাঁশখালীতে কালবৈশাখী ঝড় আঘাত হানে। বৃষ্টির সাথে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। এসময় গাছপালা উপড়ে ও ভেঙে পড়ে। আমাদের শিলকূপ টাইমবাজারস্থ পেট্রোল পাম্পের পাশে ট্রান্সমিটারসহ বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে প্রধান সড়কে পড়ে যায়। এতে বেশ কয়েকটি বাড়ির টিনের চাল উড়িয়ে নিয়ে যায়।
উপজেলার কালীপুর এলাকার আহমদ কবির বলেন, সকালে বাঁশখালী উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া আকস্মিক কালবৈশাখী ঝড়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কাঁচা ও আধাপাকা বসতঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কালবৈশাখী ঝড়ে অসংখ্য গাছপালা উপড়ে ও ভেঙে পড়ে। এছাড়া উপজেলার সাধনপুর, কালীপুর, বৈলছড়ি, শিলকূপ, চাম্বল, পুইছড়ি বাঁশখালী-আনোয়ারা আঞ্চলিক সড়কে গাছ ও গাছের ঢালপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি পড়ে সাময়িক যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসব গাছ সরিয়ে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। তবে ঝড়ের কোন প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা নিয়ে স্ব স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়ের প্রভাবে বাঁশখালী উপকূলের লবণ চাষীরা বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে শতশত একর লবণ মাঠের লবণ পানিতে তলিয়ে যায়। গন্ডামারা ইউনিয়নের লবণ চাষী মু. আহছান বলেন, হঠাৎ কালবৈশাখীর প্রভাবে আমরা লবণচাষীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। মাঠে প্রস্তুত থাকা লবণ পানির সাথে তলিয়ে যায়। বিশেষ করে আমার ৮ কালি লবণ মাঠের লবণ পানির সাথে তলিয়ে যায়। ঝড়ের প্রভাবে এভাবে পুরো বাঁশখালী জুড়ে লবণচাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
এদিকে কালবৈশাখী ঝড়ে বাঁশখালীর বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ লাইনের লন্ডবন্ড অবস্থার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে পূর্ব কোকদন্ডি এলাকায় বিদ্যুতের তারের উপর গাছের ডালপালা পড়ে যায়, উত্তর জলদী, গুনাগরি, শিলকূপ টাইমবাজারের পেট্রোল পাম্পের সামনে ট্রান্সফরমার ব্যাংকসহ SPC Pole ভেঙ্গে মাটিতে পড়ে গেছে। এ ঘটনায় সকাল থেকে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বাঁশখালী বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) ঋষি কুমার ঘোষ বলেন- হঠাৎ বাঁশখালীতে কালবৈশাখীর প্রভাবে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আমাদের বৈদ্যুতিক তারের উপর গাছের ডালপালা পড়ে যায়। কোথাও কোথাও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙ্গে পড়ে যায়। শিলকূপের টাইমবাজারস্থ পেট্রোল পাম্পের কাছে প্রধান সড়কে ট্রান্সফরমার ব্যাংকসহ SPC Pole ভেঙ্গে মাটিতে পড়ে গেছে। ঝড়ে গাছপালা উপড়ে ও ভেঙে পড়ে পল্লী বিদ্যুতের অধিকাংশ লাইনের তার ছিঁড়ে রাস্তায় পড়ে আছে। দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে আমাদের একাধিক দল কাজ করছে। খুব দ্রুত কিছু কিছু স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরো জানান, ৩৩কেভি দোহাজারী গ্রীড পর্যন্ত বিদ্যুৎ লাইন চেক করে মেইন ৩৩কেভি লাইন পেলে উপজেলা সদরে দ্রুতই বিদ্যুৎ চালু হতে পারে।
বাঁশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবু সালেক বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে উপজেলায় বোরো ধানের কিছুটা ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বৃষ্টিপাতের তুলনায় অন্যান্য ফসলের ক্ষয়ক্ষতি তেমন হবে না বলে জানান তিনি। লবণচাষীরা এ ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে কৃষি বিভাগ কাজ করছে বলেও তিনি জানান।
এ জাতীয় আরো খবর ....