মোঃ উজ্জ্বল আহমেদ…
আজ ১৭ রমজান। আজকের এই দিনে সংঘটিত হয় ইসলামের ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক যুদ্ধ। যার নাম বদরের যুদ্ধ। পবিত্র আল-কোরআনে এ যুদ্ধকে অভিহিত করা হয়েছে ইয়াওমূল ফুরক্বান অর্থাৎ ফয়সালাকারী দিন হিসেবে। এ যুদ্ধে মুসলমানরা সংখ্যায় অনেক কম হয়েও মক্কার কাফির শক্তিকে পরাজিত করেন, যার মাধ্যমে সত্য-মিথ্যার প্রভেদ ঘটে। এ কারণে বদরের যুদ্ধকে সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী বলা হয়।
বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয় মদীনায় হিজরতের মাত্র ১ বছর ৬ মাস ২৭ দিন পরে। এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে কুরাইশরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে মদীনা থেকে বের করে দেবার জন্য নানাবিধ অপচেষ্টা চালায়। যেমনভাবে তারা ইতিপূর্বে হাবশায় হিজরতকারী মুসলমানদের সেখান থেকে বের করে দেবার ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু সেখানে তারা ব্যর্থ হয়েছিল।
অবশ্য কুরাইশ কাফিরদের বাণিজ্য কাফিলাকে বাধা দেয়ার লক্ষ্যে ও তাদের সম্পদ আটকের জন্যই একদল মুসলিম মুজাহিদ প্রিয়নবী (সা.) এর নেতৃত্বে মদীনা থেকে বেরিয়ে আসেন। কাফিররা মক্কায় মুসলমানদের অনেক সম্পদ আটক করে রেখেছিল। তাই এ ধরনের হামলার অধিকার মুসলমানদের ছিল। তবে বড় ধরনের কোনো যুদ্ধ হবে বলে মুসলমানদের কেউই ভাবেননি এবং সে জন্য প্রস্তুতিও ছিল না।
কিন্তু কুরাইশ কাফিরদের শীর্ষস্থানীয় নেতা আবু সুফিয়ান তার বাণিজ্য কাফিলার ওপর মুসলমানদের হামলার প্রস্তুতির খবর জানতে পেরে সেই খবর মক্কার কাফিরদের জানালে অনেক কাফির নেতা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। ফলে তারা একটি সুসংগঠিত যুদ্ধের আয়োজন করে এবং মুসলমানরাও মহানবী(সা.)’র নেতৃত্বে কাফিরদের মোকাবেলা করতে বাধ্য হন।
এ যুদ্ধে মুসলিম মুজাহিদদের সংখ্যা মাত্র ৩১৩ জন হওয়া সত্ত্বেও তারা মক্কার সুসজ্জিত প্রায় এক হাজার কাফিরের ওপর বিজয়ী হয়েছিলেন। মহান আল্লাহর অদৃশ্য সাহায্য থাকাতেই তা সম্ভব হয়েছে। এ যুদ্ধে কাফির বাহিনীর ৭০ জন মুসলিম বাহিনীর হাতে নিহত এবং তাদের ৭০ জন মুসলিম বাহিনীর হাতে বন্দী হয়।
অন্যদিকে মুসলিম বাহিনীর ১৪ জন শাহাদত বরণ করেন। মুসলমানদের পক্ষে এই যুদ্ধের প্রধান বীর ছিলেন আমিরুল মু’মিনিন হযরত আলী (আ.)। তিনি একাই ৩৬ জন কাফিরকে হত্যা করেছিলেন যাদের মধ্যে অনেকেই ছিল নেতৃস্থানীয় কাফির সর্দার ও তৎকালীন আরব বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় খ্যাতিমান যোদ্ধা ।
বদর যুদ্ধের গুরুত্ব :
বদর যুদ্ধ ছিল হক ও বাতিলের পার্থক্যকারী অথচ একটি অসম যুদ্ধ। ইসলামের টিকে থাকা না থাকার ফায়ছালাকারী যুদ্ধ। কেননা একটি সুসজ্জিত এবং সংখ্যায় তিনগুণ অধিক ও প্রশিক্ষিত সেনাদলের সাথে অপ্রস্ত্তত, অসজ্জিত এবং সংখ্যায় তিনগুণ কম এবং বাস্তভিটা হারা মুহাজির ও নওমুসলিম আনছারদের এ যুদ্ধে জয় লাভ ছিল এক অকল্পনীয় ব্যাপার। এ কারণেই এ যুদ্ধের দিনটিকে পবিত্র কোরআনে ‘ইয়াওমুল ফুরক্বান’ বা কুফর ও ইসলামের মধ্যে ‘ফায়ছালাকারী দিন’ (আনফাল ৮/৪১) বলে অভিহিত করা হয়েছে । বদরের যুদ্ধ ছিল কাফেরদের মূল কর্তনকারী ও সত্যকে প্রতিষ্ঠা দানকারী। বদর যুদ্ধ ছিল মুসলিম ও মুশরিকদের মধ্যে সর্বপ্রথম মুখোমুখি সশস্ত্র যুদ্ধ, যে যুদ্ধে বিজয়ের ফলে মুসলমানদের শক্তি ও সাহস বৃদ্ধি পায়। দলে দলে লোকেরা ইসলামে প্রবেশ করতে থাকে। এমনকি মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ প্রকাশ্যে ইসলাম কবুলে বাধ্য হয়। এছাড়া এ যুদ্ধের পরে কাফের সমাজে এমন আতংক প্রবেশ করে যে, তারা আর কখনো বিজয়ের মুখ দেখেনি। বদরের যুদ্ধের বিজয় ছিল মক্কা বিজয়ের সোপান স্বরূপ। এই সময় শা‘বান মাস থেকে কা‘বার দিকে কিবলা পরিবর্তিত হয় এবং বদর যুদ্ধের মাত্র ছয় বছর পরেই ৮ম হিজরীর ১৭ই রমজান তারিখে মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে যা পূর্ণতা লাভ করে।